খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর আয়োজিত ‘বৈসাবি কনসার্ট’ বয়কটের আহ্বানে লিফলেট
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: বৈসাবি(বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু) ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আগামী ১৭ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন ও টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর যৌথভাবে আয়োজিত ‘বৈসাবি কনসার্ট’ বয়কটের আহ্বান জানিয়ে প্রচারিত একটি লিফলেট আমাদের হাতে এসেছে। “সেনাবাহিনী ও তাদের দালালদের তথাকথিত আনন্দ কনসার্ট বয়কট করুন” শিরোনাম দিয়ে জুম্ম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির নামে এ লিফলেটটি খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন স্থানে বিলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
লিফলেটে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী ও তাদের দালালরা জনগণের ট্যাক্সের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বৈসাবি উৎসব পালনের নামে তামাশা শুরু করেছে। একদিকে তারা নিজেরা ভূয়া বৈসাবি র্যালি আয়োজন করেছে। অন্যদিকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা জাতির নেতৃবৃন্দ সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির ব্যানারে ১২ এপ্রিল বৈসাবির শোভাযাত্রা বের করতে চাইলে তার উপর হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে। তারা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের উপর রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রনেতা এলটন চাকমাকে আটক করে। শুধু তাই নয়, পুলিশ শোভাযাত্রায় যোগ দিতে আসা লোকজনকে বহনকারী গাড়িগুলো বিজিতলা, জিরোমাইল, কুড়াদিয়াছড়া, দেওয়ান পাড়া ও জেলা পরিষদের সামনে আটকিয়ে দেয়। কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে শোভাযাত্রা বের করার অনুমতি পাওয়ার পরও উক্ত হামলা চালানো হয়। ঘটনার সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা হামলার ছবি তুলতে গেলে হামলাকারী সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাদেরকেও লাঞ্ছিত করে। তারা তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ছবিগুলো মুছে দেয়।
এতে আরো বলা হয়, মধুপুরে শোভাযাত্রা শুরুর স্থানে উপস্থিত পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তারা বৈসাবি উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দকে বৈসাবির শোভাযাত্রা বের করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। কারণ হিসেবে তারা কখনো এই, কখনো ওই অজুহাত দেখায়। তারা কখনো বলে যে, যেহেতু ১১ এপ্রিল জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বৈসাবি র্যালি বের করা হয়েছে, তাই নতুন একটি বৈসাবি র্যালি বের করা যাবে না। তাদের এই যুক্তি ঢোপে না টিকলে তারা বলে যে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মামলাভুক্ত আসামী রয়েছে, তাই র্যালি করা যাবে না। এরপরও যুক্তিতে পেরে না উঠলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে র্যালিতে আসা নারী-পুরুষের উপর হামলা চালায়।
মানিকছড়ি, রামগড়, গুইমারা, মাটিরাঙ্গায়ও বৈসাবি র্যালি আয়োজনে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে লিফলেটে অভিযোগ করা হয়।
লিফলেটে কনসার্টের নামে নষ্টামি করে জনগণের অর্থ অপচয় করার খেলা বর্জনের কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, এই কনসার্ট নামের তামাশা বয়কট করতে হবে। কারণ: ১. সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও তাদের দালালরা জনগণের প্রাণপ্রিয় উৎসব বৈসাবির র্যালি হামলা চালিয়ে ও ষড়যন্ত্র করে প- করে দিয়েছে। ২. এই হামলা করে তারা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে আঘাত করেছে, সমাজে সম্মানিত ও বয়োজ্যোষ্ঠ চাকমা, মারমা, ও ত্রিপুরা নেতৃবৃন্দকে অপমানিত করেছে। ৩. কনসার্টের নামে সেনাবাহিনী জেলা পরিষদের তহবিল থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছে। এই টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এই টাকা থেকে তারা অতি সামান্য একটি অংশ খরচ করে বাকি টাকা পকেটস্থ করবে। কাজেই আমরা তাদের তথাকথিত কনসার্টে অংশ নিয়ে এই দুর্নীতি ও অপকর্মের অংশীদার হতে পারি না। ৪. সেনাবাহিনী দীঘিনালা, সাজেক, মারিশ্যা, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অপারেশনের নামে লোকজনকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে, আটক করছে ও শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এ কারণে এসব এলাকার লোকজন বৈসাবি উৎসবের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তাই আমরা মনে করি ১৭ এপ্রিলের কনসার্ট বর্জন করে সেনাবাহিনীর এই দমন-পীড়ন ও অবিচারের যথার্থ জবাব দেয়া উচিত। ৫. দীঘিনালায় বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবার এবং রাঙামাটির বগাছড়িতে অগ্নি হামলার শিকার ৩টি গ্রামের লোকজন এখন নিজ মাতৃভূমিতে পরবাসীর মতো জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদেরকে পুনর্বাসনের পরিবর্তে বরং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় উৎসব করার মতো মানসিকতা ও আর্থিক সামর্থ্য তাদের নেই। সেনাদের কনসার্ট বয়কট করে আমরা এ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারি।
লিফলেটে সেনাবাহিনীর তথাকথিত কনসার্ট বয়কট করে জুম্ম জাতিসত্তার ঐক্য জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, কেউ উক্ত অনুষ্ঠানে যাবেন না। আর্মি ও তাদের দালালরা যত পারে কনসার্ট করুক, আনন্দফূর্তির নামে বেলেল্লাপনা নষ্টামি করুক। কিন্তু আপনারা এতে অংশ নিয়ে জুম্ম জাতির ঐতিহ্যকে কলংকিত করবেন না। এতে বলা হয়, বৈসাবি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ সকল জুম্ম জাতিসত্তার ঐক্যের প্রতীক। এই ঐক্যকে জোরদার করুন। সরকারের ভাগ করে শাসন করার নীতি বিরোধীতা করুন।
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।