খাগড়াছড়িতে হুয়াঙ বোইও-বা’র উদ্যোগে ৮দিন ব্যাপী বই মেলা শুরু
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি,সিএইচটিনিউজ.কম
নিজে বই পড়ুন, অন্যকেও বই পড়তে উৎসাহিত করুন’ শ্লোগানে সামাজিক সংগঠন ও পাঠাগার ‘হুয়াঙ বোই ও বা’ (অগ্রসর চিন্তার কেন্দ্র)-এর উদ্যোগে খাগড়াছড়িতে ৮দিন ব্যাপী বই মেলা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। স্বল্প পরিসরে হুয়াঙ বোই ও বা’ ভবন প্রাঙ্গনে আয়োজিত এই বই মেলা প্রতিষ্ঠানটির ১২তম বই মেলা। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত এই বইমেলা চলবে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) বিকাল ৩টায় ফিতা কেটে বইমেলা উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা। এরপর আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেপোলিয়ন চাকমার সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সমাজ সেবক ধীমান খীসা ও পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাক বিম্বিসার খীসা। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা, সাবেক খাগড়াছড়ি পৌর কমিশনার সরোজ কুমার চাকমা ও দিলীপ কুমার দেওয়ান।
অনন্ত বিহারী খীসা তার বক্তব্যে বইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু। অতি অল্প খরচে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়। বই ছাড়া অন্য কোনভাবে আর জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, নেশা মাত্রই ক্ষতিকর হলেও বইয়ের নেশা হিতকর। বই না পড়ার কারণে ক্ষতিকর নেশার কবলে পড়ে যুব সমাজ বিপথে পরিচালিত হচ্ছে। সমাজ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এই অসুস্থ সমাজকে সুস্থ করার জন্য বই পড়তে হবে। তিনি বই পড়ার আন্দোলন গড়ে তোলার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
ধীমান খীসা বলেন, বই পড়া হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের উৎকৃষ্টতম উপায়। বিন্দুর মধ্যে সিন্ধু খুঁজতে হলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগে বই পড়ার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই বই পড়ার অভ্যাসকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যুব সমাজের যে অবক্ষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে তা অনেক উদ্বেগজনক। প্রতিশ্রুতিশীল অনেক যুবক গাজা, হিরোইন আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য বই পড়তে হবে।
বিম্বিসার খীসা বলেন, প্রত্যেক মহৎ কাজের সূচনাতেই অসম্ভব এসে প্রতিরোধ করে। হুয়াঙ বোইও বা প্রতিষ্ঠাকালীন সময়েও বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হয়। সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে হুয়াঙ বোইও বা জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র থেকে অনুমোদন লাভ করতে সক্ষম হয়। এরপরও অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়। কিন্তু একটি প্রগতিশীল সংগঠনকে কিছুতেই ধ্বংস করা যায় না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রজন্ম বই পড়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগে তাদের আর বই পড়ার আগ্রহ থাকে না। তাই ছেলে-মেয়েদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়তে উৎসাহিত করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বই না পড়লে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয় না। মনের মাঝে কুসংস্কার থেকে যায়। বই পড়লে প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটে। বই পড়ে জীবনকে সহ্য করার মতো ক্ষমতা অর্জন করা যায়।
আলোচনা সভা শেষে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বই মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব রিক্তন চাকমা বলেন, বই মেলায় বই প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের পাশাপাশি প্রতিদিন নানা অনুষ্ঠান থাকবে। তন্মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, নামী ও প্রসিদ্ধ শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী অন্যতম।
উল্লেখ্য, “নিজে বই পড়ুন এবং অন্যকেও বই পড়তে উৎসাহিত করুন” শ্লোগানকে ধারণ করে ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে হুয়াঙ বোইও বা। এরপর থেকে আধুনিক বিজ্ঞান মনস্ক, যুক্তিবাদী, উন্নত চিন্তা-চেতনা ও রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়তে সকলকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর বইমেলার আয়োজন করা হয়। তাই খাগড়াছড়িতে ‘হুয়াঙ বোই ও বা’ অগ্রসর চিন্তার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।