খাগড়াছড়ির কমলছড়ি ও বেতছড়িতে পাহাড়িদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের সভাপতি সর্বোত্তম চাকমা বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ও বেতছড়িতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি সবিতা চাকমাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা আড়াল করতে কমলছড়ি ও বেতছড়িতে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি গ্রামে হামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করে আরও বলেন, সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে ধর্ষক ও খুনীদের রক্ষা করা হলে সমাজে ন্যায়-নীতি বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। সে পরিস্থিতিতে দুর্বৃত্তদের পাশবিকতার শিকার হয়ে কেবল পাহাড়ি নারীরই সম্ভ্রমহানি-প্রাণহানি ঘটবে তা নয়, নরাধমদের হাত থেকে রেহাই পাবে না বাঙালি নারীরাও। এ ধরনের দুঃখজনক নজীরও রয়েছে অনেক।
বিবৃতিতে সর্বোত্তম চাকমা সমাজে ধর্ষণ-খুন-অপহরণ নাটকসহ সকল ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানান এবং সকল তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আবু তাহের নামের টমটম চালকের স্বেচ্ছায় গা-ঢাকা-দিয়ে তাইন্দ্যং ঘটনার পুনরাবৃত্তির চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জুম্ম প্রতিনিধি সংসদের সভাপতি এও স্মরণ করিয়ে দেন যে, উগ্রসাম্প্রদায়িক কায়েমী স্বার্থবাদী চক্রই নিজেদের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘাত বাধায় এবং দাগী অপরাধী-দুর্বৃত্তদের কোলে তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত মাস্তানবাহিনী বানিয়ে রাখে। এর করুণ ভুক্তভোগী হচ্ছে খাগড়াছড়িবাসী পাহাড়ি-বাঙালি সবাই। একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর হীন স্বার্থে খেসারত দিয়ে যেতে হচ্ছে সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালি খেটে-খাওয়া লোক ও ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের। এ অবস্থা বেশীদিন চলতে দেয়া যায় না মন্তব্য করে তিনি কমলছড়ি-বেতছড়ি হামলায় জড়িতদের শাস্তি প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসাসহ নিম্নোক্ত দাবী বাস্তবায়নের জন্য সরকার-প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে ৫টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো: ১.সবিতা চাকমার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ২. নিহত সবিতা চাকমা’র পরিবারকে সরকারীভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং তার নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ৩. ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী কমলছড়ি ও বেতছড়ি পাহাড়ি গ্রামে হামলাকারী সেটেলার সর্দার ও তাদের গডফাদারদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান সহ ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ৪. উগ্র সাম্প্র্রদায়িক গোষ্ঠীর প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্রের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে সে সব সেটলার সাম্প্রদায়িক হামলায় অংশ নিয়ে পাহাড়িদের কর্তৃক পাল্টা আক্রমণে আহত হয়েছে, তাদেরও সরকারিভাবে সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা; কায়েমী স্বার্থবাদী চক্রের হাত থেকে সাধারণ সেটলারদের বর্তমান অবস্থান (পাহাড়িদের বিরুদ্ধে মানবঢাল) থেকে উদ্ধার করে জীবিকার নিশ্চয়তা দিয়ে পর্যায়ক্রমে তাদের আদিবাসস্থল সমতল ভূমিতে ফিরিয়ে নেয়া, ৫. কমলছড়িতে আহত প্রতিবন্ধী পান্দক চাকমা(৩৫) এবং ক্ষেতমজুর আনন্দ লাল চাকমা(৫০) সহ বেতছড়িতে সেটলার হামলায় আহতদের সরকারিভাবে সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা, ৬. ইতিপূর্বে গত ৩১ জানুয়ারি মো: আবু তাহের-এর সাজানো অপহরণ নাটকের (জিরো মাইল) সাথে জড়িত ব্যক্তি ও পরিকল্পনাকারী সবাইকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দেয়া এবং ৭. খাগড়াছড়ি উপজেলা সহ গোটা জেলার সাধারণ মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা। জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের দপ্তর সম্পাদক সমর বিকাশ চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।