খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে। সংগঠনের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আজ ৮ মার্চ বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা ও রাঙামাটির নান্যাচরে সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন। আলোচনা সভা ও সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ধর্ষণ, খুন, যৌন হয়রানি সহ সকল ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধ করা, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, সকল ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা এবং বিজ্ঞাপনে নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
খাগড়াছড়ি : “ধর্ষণ, খুন, যৌন নিপীড়নসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবন হলরুমে বেলা ২টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে এতে আরো বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সোনালী চাকমা, ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক রিকো চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি অপরাজিতা খীসা, উপালি পাড়ার বিশিষ্ট মুরুব্বী গীতা চাকমা ও কমলছড়ি গ্রামের মুরুব্বী অপয়না চাকমা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শিখা চাকমা ও উপস্থাপনা করেন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক রিনা চাকমা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। এ লক্ষে নারীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের মাধ্যমেই পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাকরতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সব জায়গায় নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতি নারীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমাদের সংস্কৃতিতে অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা প্রকট আকারে বেড়ে চলেছে। এই বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে সরকার তথা প্রশাসনের ব্যর্থতা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তাহলে এ ধরনের অপরাধের মাত্র কমে আসতো।
বক্তারা নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য নারী সমাজসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
নান্যাচর (রাঙামাটি) : রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার নান্যাচর কলেজ মাঠে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও সংগঠনের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এক সমাবেশের আয়োজন করে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয় লাল চাকমা এতে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ধর্ষণ, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। প্রশাসন দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করার ফলে বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
বক্তারা বলেন, যৌন হয়রানিসহ নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জাতীয় অস্তিত্ব রায় সমাজ ও জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য বক্তারা নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা নারীর প্রতি সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাষ্টের নিউইয়র্কে একটি সুচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার হন অনেক নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। ৩ বছর পর ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন‘। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্প কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেতা কারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৮৮ সালের এই দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী লড়াকু সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন গঠিত হয়।