অস্ত্রসহ এক ব্যক্তিকে আটক, পরে মুক্তি
খাগড়াছড়ি-পানছড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টির সেনা ষড়যন্ত্র স্পষ্ট
বিশেষ প্রতিনিধি: অস্ত্রসহ আটকের পরও সেনাবাহিনী শ্যামল কান্তি চাকমা ওরফে জোলো ওরফে তরু নামে এক ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে। তার বাড়ি খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার নাবিদা পাড়ায়।
এই ঘটনার পর লক্ষ্মীছড়ির ন্যায় খাগড়াছড়ি-পানছড়ি এলাকায়ও বোরকা পার্টি স্টাইলে নতুন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের সেনা ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়েছে।
গোপন ও নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহের পর ফেরার পথে বাঘাইহাট সেনা জোন গেইটে তল্লাশির সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রসহ শ্যামল কান্তি চাকমা ওরফে জোলো ওরফে তরুকে আটক করে।
আটকের পর শ্যামল কান্তি চাকমা সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কমান্ডারের সাথে তার যোগাযোগ থাকার কথা বললে আটককারী সেনা কমান্ডার তার উপরিস্থ কমান্ডারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। এরপরই ‘উপরের নির্দেশে’ সেনারা তরুকে অস্ত্রসহ ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি পৌঁছে দেয়।
জানা যায়, ইউপিডিএফ থেকে দলচ্যুত শ্যামল কান্তি চাকমা উক্ত অত্যাধুনিক অস্ত্রটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের একটি বিদ্রোহী দলের কাছ থেকে কিনেছিল। ইতিপূর্বে সে সেনাবাহিনীর সহায়তায় এ ধরনের আরো ৪-৫টি অস্ত্র ত্রিপুরা বিদ্রোহীদের কাছে থেকে সংগ্রহ করেছিল। ঐ অস্ত্রগুলো সিলেট থেকে আনা হয় বলে জানা যায়।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী দীর্ঘ দিন ধরে খাগড়াছড়ি-পানছড়িতে এক সময় লক্ষীছড়িতে সৃষ্ট বোরকা পার্টির স্টাইলে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে ৬ আগষ্ট (২০১৭) সিএইটি নিউজ ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। (বিস্তারিত দেখুন : খাগড়াছড়িতে লক্ষ্মীছড়ি-স্টাইলে বোরকা পার্টি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র https://chtnews.com/wp/%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%9B%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%80%E0%A6%9B%E0%A7%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A7%8D/)
বখাটে, সমাজচ্যুত, অধঃপতিত ও দলচ্যুত পাহাড়ি যুবকদের ভাড়া করে এই সন্ত্রাসী বাহিনীটি গঠনের লক্ষ্যে সেনা ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বেশ কয়েকবার গোপন মিটিং করেছে। এইসব মিটিঙে জনসংহতি সমিতির (এম,এন, লারমা) চার জন উচ্চ পর্যায়ের নেতাও উপস্থিত ছিলেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
মূলতঃ জনগণের স্বার্থের নিঃস্বার্থ পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইউপিডিএফকে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি এলাকায় দুর্বল করাই হলো এই সন্ত্রাসী বাহিনীটি গঠনের মূল লক্ষ্য।
তবে সেনাদের এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার পর অনেকে এই বাহিনীতে যোগ দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং জেএসএস- এম এন লারমা গ্রুপের ভিতরেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জেএসএস-এম এন লারমা দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আর্মিদের সহায়তায় সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে ইউপিডিএফকে মোকাবিলা করার পক্ষপাতী নয়। তাদের যুক্তি হলো এতে ইউপিডিএফ দুর্বল না হয়ে বরং আরো শক্তিশালী হবে এবং জনগণের সমর্থন লাভ করবে। লক্ষীছড়ির অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তারা বলেন, লক্ষীছড়িতে বোরকা পার্টির মাধ্যমেও ইউপিডিএফকে সেখানে দুর্বল করা যায়নি বরং বোরকারাই সেনাবাহিনীর আশ্রয় প্রশ্রয় পাওয়া সত্ত্বেও টিকতে না পেরে নির্মূল হয়ে গেছে। পানছড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করা হলে তার পরিণতিও একই হবে বলে তারা মনে করেন।
জেএসএস-এম.এন. লারমা দলের দেশপ্রেমিক অংশটির আরো যুক্তি হলো, এই বাহিনী গঠনের মাধ্যমে আর্মিরা আসলে নতুন রূপে ভ্রতৃঘাতি সংঘাত বাঁধিয়ে দিতে চাইছে, যা আমরা কখনো হতে দিতে পারি না।’
তারা মনে করেন আর্মিদের ষড়যন্ত্রের সাথে তাদের দলের কোন নেতাকর্মীর জড়িত থাকা উচিত হবে না, কারণ এতে জনগণের সামনে এম. এন. লারমা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।
————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।