খাগড়াছড়ি সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বৈসাবি উদযাপন কমিটির “বৈসাবি” শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ি সদর: সকাল ৫টা থেকে নানান বয়সি মানুষের ভীড়ে মূখরিত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ির খবংপজ্যার চেঙ্গী নদীর পাড়। স্ব স্ব জাতীয় পোষাকে হাজির হয় শতশত নারী পুরুষ। এ যেন এক আনন্দের মিলন মেলা। একদিকে আতশবাজির গুডুম গুডুম আওয়াজ অপরদিকে উচ্ছ্বছিত মানুষের ‘রেঙ’ এ যেন অন্যরকম উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়।
ফুল নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছিল অনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য। ঘড়ির কাটা যখন ঠিক ৬টা তখন মাইকে ফুল দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সাথে সাথে নদীতে ফুল দেয়া শুরু হয়। এরপর নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য চেঙ্গী নদীতে ডুব দিয়ে গোসল করে ‘বিজুগুলো’ (চাকমাদের কাল্পনিক ফল) খায়।
ফুল দেয়া শেষ হলে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল ৭টায় অনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফুল দেনা’ অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
ফুল ভাসানোর পর সকাল পৌনে দশ টায় মধুপুর বাজার থেকে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির শোভাযাত্রা শুরু হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তার পোষাক পরিধান করে সহস্রাধিক নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা মাঠে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা ও শিক্ষাবিদ অর্ধেন্দু শেখর চাকমা প্রমূখ।
রামগড়: পুরাতন বছরের দুঃখ, গ্লানী-হতাশা ভুলে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রামগড়ে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রামগর উপজেলা সদরে ‘সর্বজনীন বৈসাবী উদযাপন কমিটি’র উদ্যোগে আজ ১২ এপ্রিল বুধবার ‘বৈসাবি’ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টা ৪৫মিনিটে বিজয় ভাস্কর্যের পদদেশে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ২নং পতাাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা।
সভা পরিচালনা করেন ধনঞ্জয় ত্রিপুরা। সভাপতিত্ব করেন ১নং রামগড় ইউপি’র ১,২,৩ নং ওয়ার্ড এর সংরক্ষিত আসনের মহিলা চেয়ারম্যান চাইভয়া চৌধুরী। সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি রামগড় উপজেলা সদর ঘুরে আবারো বিজয় ভাস্কর্যের সামনে মিলিত হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শোভাযাত্রাতে শতশত তরুণ তরুণীসহ সকল বয়সের লোকজন ঐতিহ্যবাহী চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা পোশাক পরিধান করে অংশগ্রহণ করেন| শোভাযাত্রায় বর্ণিল পোষাকে তরুন-তরুনী ছাড়াও সব বয়সের নারী পুরুষের অংশগ্রহণে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
মহালছড়ি: মহালছড়িতে সার্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যেগে বৈসাবি শোভাযাত্রা করা হয়। সকাল ৯টা হতে মহালড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়। মহালছড়ি উপজেলা সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে আবার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে এসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
র্যালিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার এক হাজারের অধিক জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহন করেন। সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সদস্য ভূমিকা ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথমে ত্রিপুরা জাতিসত্তার ঐতিহ্যবাহী গোরিয়া নৃত্য পরিবেশন করেন। পর্যায়ক্রমে চাকমা গান ও নৃত্য এবং মারমাদের ঐতিহ্যবাহী গান পরিবেশন করেন।
র্যালীতে সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠানে সাধারণ জনগণ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহব্বায়ক সুকুমার চাকমা, উপেদষ্টা কমিটির সদস্য ও সাবেক উপজেলা পারিষদ চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা, ৪নং মাইচছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাজাই মারমা বর্তমান। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য ও পুরুষ ইউপি সদস্য, হেডম্যান, কার্বারীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
পানছড়ি: সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আয়োজনে আজ ১২ এপ্রিল বুধবার সকাল ৮ ঘটিকায় শান্তিপুর রাবার ড্যাম পানছড়ি এলাকার সর্বস্তরের জনগনের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহনে ফুল ভাসানো হয়। এসময় পানছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, বৈসাবি
উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সমর বিকাশ চাকমাসহ পানছড়ি এলাকার গণ্যমান্য নেতৃবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মারমা, ত্রিপুরা, সান্তাল ও চাকমা জাতিসত্তার সম্মিলিত অংশগ্রণ অনুষ্ঠান বর্নিল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিজ নিজ ব্যানারে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে সান্তাল উন্নয়ন ও সান্তাল স্টুডেন্ট ফোরাম, পানছড়ি টিএন্ডটি শান্তি শৃংখলা উন্নয়ন কমিটি, বড় কলক ছদক ক্লাব, লোগাঙ দোর সবুজ ক্লাব, পুজগাঙ মূখ স্বপ্নসিড়ি ক্লাব, মানিক্যা পাড়া যুব সমাজ, মধুমঙ্গল পাড়া এলাকাবাসী, কিনা ধনন বৈদ্য পাড়া, জ্যোতিষ পাড়া ও জমিনধন পাড়া এলাকাবাসী।
ফুল দেয়া শেষে সকাল ৯টায় শান্তিপুর রাবারড্যাম হতে পানছড়ি উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত বর্নাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। এতে শিশু-কিশোর যুবক-যুবতিসহ বিভিন্ন বয়সের সহস্রাধিক নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রা শেষে রুমেল মার্মার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পানছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা ও সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সমর বিকাশ চাকমা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লোগাং, চেংগী, পানছড়ি, উল্টাছড়ি, লতিবান ইউপির বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানসহ এলাকার আপামর গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া লক্ষীছড়ি উপজেলাতেও সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আয়োজনে বৈসাবি শোভাযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
_________
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।