খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় লংগদু গণহত্যা দিবস পালিত : পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় লংগদু গণহত্যার ২২তম বর্ষপূর্তি পালন করেছে। আজ ৪ মে ২০১১, বুধবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মিলনপুরস্থ রেগা ক্লাবে লংগদু গণহত্যার স্মরণে অনুষ্ঠিতআলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের প্রতিনিধি চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সভাপতি চন্দনী চাকমা৷ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পদক বিপুল চাকমা৷ স্মরণসভা শুরুর আগে লংগদু গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, আজ থেকে ২২ বছর আগে ১৯৮৯ সালের এই দিনে রাঙামাটি জেলার লংগদুতে সেনা-সেটলাররা এ গণহত্যা চালায়৷ এতে বহু পাহাড়ি হতাহত হয়। গণহত্যার ২২ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক গণহত্যা সংঘটিত করে এসেছে৷ আজও সেই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির রামগড় ও মানিকছড়িতে সেটলারদের দিয়ে হামলা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
বক্তারা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ সরকারের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে লংগদু গণহত্যা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ, পার্বত্য চট্টগাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান৷
অপরদিকে দিবসটি উপলক্ষে মহালছড়ি, কাউখালী, সুবলঙ, কুদুকছড়ি ও নান্যাচরে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাউখালীতে পোয়া পাড়া শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহারে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পোয়া পাড়া স্কুল শাখার আহ্বায়ক উত্পল চাকমা, সদস্য জ্ঞানময় চাকমা ও পলিন চাকমা, জুরাছড়িতে সুবলঙ শ্রাবস্তী বন বিহারে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সদস্য টিটু বিকাশ চাকমা, জুরাছড়ি থানা শাখার সভাপতি প্রমোদ কান্তি চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর জুরাছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি বিকল্প চাকমা, কুদুকছড়ি নির্বাণপুর বনবিহারে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলু চাকমা এবং নান্যাচর রত্নাঙ্কুর বনবিহারে অনষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি বিলাস চাকমা, নান্যাচর থানা কমিটির সভাপতি বিঘ্ন খীসা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যার থানা কমিটির সভাপতি প্রিয় লাল চাকমা।
এছাড়া লংগদু গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের নারাঙখিয়াস্থ রেড স্কোয়ার এলাকায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এবং রাঙামাটিতেও বিভিন্ন বিহারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।