ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী দলের সংবাদ সম্মেলন

খাগড়াছড়ি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি

0

চট্টগ্রাম : খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে গত ১৮ আগস্ট সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও তার পরবর্তীতে পানছড়ি সড়কের পেরাছড়া ব্রীজে প্রতিবাদী মিছিলে হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী দলের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পরিদর্শনকারী দলের পক্ষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল (পূর্ব-৩)  এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল (পূর্ব-৩)-এর সভাপতি এডভোকেট ভুলন লাল ভৌমিকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টীম ঘটনাস্থল স্বনির্ভর বাজার ও পেরাছড়া ব্রীজ এলাকা পরিদর্শন করেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর ও পেরাছড়ায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হাইকোর্টের একজন বর্তমান কর্মরত বিচারকের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন পূর্বক ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, এডভোকেট আমীর আব্বাস। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল (পূর্ব-৩) সভাপতি এডভোকেট ভুলন লাল ভৌমিক,গণমুক্তি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, এডভোকেট আমীর আব্বাস, ভাষা গবেষক এহসানুল কবীর, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সামিউল আলম এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন চট্টগ্রাম নগর সভাপতি লোকেন দে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিদর্শক দলের পক্ষ থেকে এডভোকেট ভূলন লাল ভৌমিক বলেন, পাবর্ত্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শিক দূরত্ব থাকলেও নিজেদের মধ্যে যতবারই সংঘাত এড়াতে তারা চেয়েছে ততবার সংঘাত ও সংঘর্ষকে উস্কে দিয়ে বিভেদ ও হত্যার রাজনীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বশেষ, ১৮ আগষ্টের ঘটনাটি পাহাড়ি জাতির নিজেদের ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টির সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র।

তিনি আরো বলেন, আমরা ঘটনাস্থল ও আশপাশে যেখানেই গেছি-সব জায়গাতেই মানুষের মধ্যে আতংক দেখেছি। আমাদের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা পরিদর্শনে ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত ও ভীত ছিলেন। তাহলে প্রশ্ন উঠে পার্বত্য চট্টগ্রামে এতবড় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন কেন? আমাদের তদন্তে হত্যার শিকার ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সঠিক তদন্ত হবে না বলে জানিয়েছেন। তারা সন্দেহ করছেন যে, পার্বত্য পরিস্থিতিতে বিশেষ মহলের কারণে তদন্ত প্রভাবিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পুরো ঘটনা আমাদের নানান কারণে উদ্বিগ্ন করেছে। এরমধ্যে প্রধানতম-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর না থাকা এবং তাদের উদাসীনতা লক্ষ্য করার মতো। হত্যার এতদিন পরও একজন হত্যাকারী গ্রেফতার হয়নি। সুস্পষ্টভাবে এলাকাবাসীর  অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এর সাথে জড়িত।

লিখিত বক্তব্যে হত্যাকারীদের সম্পর্কে বলা হয়, ‘আমরা যখন এলাকাবাসী ও আশপাশের দোকানদারদের জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এরা পরিচিত এবং জেএসএস সংস্কার নামে সংগঠনের সাথে হত্যাকারীরা জড়িত। পেরাছড়া ব্রীজের ঘটনাতেও আমরা পানছড়ি রোডের আশপাশের গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলছি, হত্যাকারীরা যে একই তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি’।

সংবাদ সম্মেলনে ১০ গজ দূরত্বে পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও ঘটনার সময় পুলিশের উপস্থিতি না থাকা, প্রশাসনের লোকজন সিসি ক্যামেরা খুলে নেয়া ও বিজিবি সদস্যদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা– ইত্যাদি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলে সম্ভবতঃ হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত, হতাহতের পরিমাণ কমতো। পাশাপাশি ঘটনার পর হত্যাকারীদের ধরা যেত।

উল্লেখ্য, গত ১৮ আগস্ট সকাল অনুমানিক ৮টায় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা তপন, এলটন এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতা পলাশ চাকমাসহ ৬ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে অন্যরা হলেন, মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা, প্রকৌশলী ধীরাজ চাকমা ও উত্তর খবংপুড়িয়া গ্রামের ছাত্র রূপম চাকমা। এছাড়া হামলায় কমপক্ষে ৪ জন আহত হন। এই ঘটনার রেশ ধরে একই দিন বেলা ১১ টার সময় পানছড়ি সড়কের আশপাশের গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে পেরাছড়া ব্রীজের নিকট আসলে আবারো গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে সন কুমার চাকমা নামের এক বৃদ্ধ মারা যান এবং অনেকেই আহত হন।
———————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More