খুনী, সন্ত্রাসী ও সমাজবিরোধী বোরখা পার্টি সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে লক্ষীছড়ি এলাকাবাসীর সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন

0

খুনী, সন্ত্রাসী ও সমাজবিরোধী বোরখা পার্টি সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে লক্ষীছড়ি উপজেলার সাধারণ জনগণ আজ ৯ মার্চ ২০১১ খাগড়াছড়িতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে ক্ষীছড়ির শান্তিপ্রিয় জনগণের ব্যানারে সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লীছড়ি উপজেলার পল্লী চিকিত্‍সক প্রতুল কান্তি চাকমা এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাজেন চাকমা ও প্রতুল কান্তি চাকমা সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা লীছড়িতে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে অনিল চাকমার নেতৃত্বে বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীদের খুন, সন্ত্রাস, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিস্তারিত তুলে ধরেন৷ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী ও মুরুব্বী সুরেশ কান্তি চাকমা, সুমন্ত পাড়া গ্রামের কার্বারী অসীম চাকমা, শুকনাছড়ি মৌজার হেডম্যান সুপ্রীতি বিকাশ দেওয়ান, রাজেন চাকমা ও সাধনা চাকমা সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন

লিখিত বক্তব্যে প্রতুল কান্তি চাকমা বলেন, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় দীর্ঘ দিন ধরে বোরখা পার্টি নামে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী খুন, সন্ত্রাস, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে৷ এদের উত্‍পাতে বর্তমানে এলাকার জনগণ চরম অতিষ্ঠ, এলাকা থেকে শান্তি হয়েছে নির্বাসিত সাধারণ গ্রামবাসী থেকে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত সবাইকে তাদের ভয়ে ত্রটস্থ৷ কারণ তারা স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আশ্রয়-প্রশ্রয়, সাহায্য-সহযোগিতা ও মদদ পেয়ে থাকে

লক্ষীছড়ি জোন কমান্ডার সালাহউদ্দিন আল-মুরাদ এসব বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত অনুক্ক চাকমা ও বিলাস চাকমাসহ বেশ কয়েকজন বোরখা সদস্য লক্ষ্মীছড়ি জোনের অধীন খিরাম ক্যাম্পে অবস্থান করে৷ বর্তমানে তারা ক্যাম্পের পাশে থাকে এবং তাদেরকে খিরাম বাজারে অবস্থিত আর্মিদের অনির্বাণ কাবটি ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে

১৫ ফেব্রুয়ারী, লক্ষ্মীছড়ি জোন কমান্ডার লেঃ কঃ সালাউদ্দীন আল মুরাদ বোরখা পরিবেষ্টিত হয়ে বর্মাছড়ি বাজারে যান৷ তখন স্থানীয় নারীরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি

১৬ ফেব্রুয়ারী, সেনাবাহিনী এবং বোরখা পার্টির সদস্যরা দুল্যাতলী ইউনিয়নের আজাছড়ি গ্রামে গিয়ে সুন্দর মোহন চাকমার বাড়ি তল্লাশী করে৷ এর সময় শ্যামল চাকমা নামে এক বোরখা দুর্বৃত্ত সুন্দর বাবুর স্ত্রীর মোবাইল ফোনটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়৷ ইতিপূর্বে বোরখারা লক্ষ্মীছড়ি বাজারে সুন্দর মোহন চাকমাকে মারধর করেছিল৷ এ ব্যাপারে তিনি থানায় মামলা করলেও বোরখাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের দিক থেকে কোন পদপে নেয়া হয়নি

১৮ ফেব্রুয়ারী, সেনাবাহিনী ও বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীরা ডুলুপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরে হানা দেয়৷ তারা মন্দিরের দরজা ভেঙে দেয় ও ভেতরে তল্লাশী চালায়৷ এছাড়া তারা গ্রামের দোকানদার শারীরিক প্রতিবন্ধী পরিমল চাকমাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে

১৯ ফেব্রুয়ারী, লক্ষ্মীছড়ি জোন কমান্ডার সালাউদ্দীন আল মুরাদ খিরাম ক্যাম্পে গিয়ে বোরখা সন্ত্রাসীদের সাথে বৈঠক করেন বলে জানা যায়

২৫ ফেব্রুয়ারী, সেনাবাহিনী ও বোরখা সদস্যরা বর্মাছড়ি বাজারে গিয়ে কৃতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য আয়োজিত সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভণ্ডুল করে দেয়

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, এই বোরখা সন্ত্রাসীরাই বিগত ২০০৯ সালের ২ অক্টোবর বর্মাছড়ির বটতলিতে ইউপিডিএফ নেতা রুই খই মারমাকে গুলি করে খুন করেছিল৷ ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর ফন্দ আলী চাকমার নেতৃত্বে ৭ – ৮ জন বোরখা ইউপিডিএফ কর্মি বিসু চাকমার পরিবারকে জুর্গাছড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে৷ গঠনের পর আজ পর্যন্ত তারা কমপ ে১১ জনকে অপহরণ করে কয়েক ল টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে৷ এবং ৩০ জনের মতো নিরীহ ব্যক্তির ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেএছাড়া, প্রতিদিনই এলাকার সম্মানীত মুরুব্বীদেরকে তাদের হাতে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হতে হচ্ছে

লিখিত বক্তব্য তিনি অভিযোগ করে বলেন, বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীরা লক্ষ্মীছড়ি সদরে জুর্গছড়িতে থাকে এবং সেখান থেকে প্রশাসনের নাকে ডগায় লোকজনকে অপহরণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জবরদস্তি ইত্যাদি চালায়৷ তাদের অপকর্ম প্রশাসন দেখেও না দেখার ভাণ করে৷ শুধু তাই নয়, ইউপিডিএফ নেতা রুই খই মারমাকে খুনের অভিযোগে সন্ত্রাসী অনিল চাকমাসহ বেশ কয়েকজন বোরখা সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ তাদেরকে সেই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং তার বদলে রুই খই মারমার ভাগিনা ও ইউপিডিএফ নেতা জয় মারমাসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তির নাম আসামী বানিয়ে মামলায় ঢুকিয়ে দেয়৷ গত বছর ২৫ মার্চ রামগড়ের গয়াপাড়া আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা পেদা চাকমা (২৫) ও মাঝি চাকমা (৩০) নামে দুই বোরখা সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করে, কিন্তু তত্‍কালীন লক্ষ্মীছড়ি জোন কমান্ডার শরীফুল ইসলামের নির্দেশে তাদেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়৷ বোরখাদের বিরুদ্ধে থানায় আরো অনেক মামলা রয়েছে, কিন্তু তারপরও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না

সংবাদ সম্মেলন থেকে লীছড়ি এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তিন দফা দাবি জানানো হয় দাবিগুলো হলো :
১৷ অবিলম্বে বিভিন্ন মামলার দাগি আসামী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী অনিল চাকমাসহ বোরখা পার্টির সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে
২৷ স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী থেকে তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদান সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে৷

৩৷ সাধারণ জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানপূর্বক এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে

সংবাদ সম্মেলন শেষে বোরখা পার্টির সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সামনে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়

উল্লেখ্য যে, এই বোরখা পার্টি গঠিত হয় ২০০৯ সালের জুন কি জুলাই মাসে৷ লক্ষ্মীছড়ি জোনের তত্‍কালীন কমান্ডার লেঃ কঃ শরীফুল ইসলাম লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ি এলাকার কতিপয় বখাটে ও উচ্ছন্ন প্রকৃতির পাহাড়ি ও বাঙালি ছেলে জোগার করে এই সন্ত্রাসী গ্রুপটি সৃষ্টি করেছিলেন৷ গঠনের সময় এর নাম সিএইচটিএনএফ (Chittagong Hill Tracts National Front) দেয়া হলেও পরে এরা জনসমাজে “বোরখা” নামেই পরিচিতি লাভ করে প্রথমদিকে এরা গুইমারা, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি এলাকায় বোরখা পরে অথবা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে দিন দুপুরে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই করতো এ কারণে তাদেরকে লোকজন বোরখা পার্টি বলে ডাকতো৷ পাহাড়ি বাঙালি কেউ তাদের ল্যবস্তু থেকে বাদ যেতো না৷ মূলতঃ সে সময় সেনা প্রত্যাহারের সরকারী সিদ্ধান্ত ভেস্তে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে এই বোরখা পার্টির জন্ম দেয়া হয়েছিল

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More