গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৬ষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন: সভাপতি জিকো ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

নতুন কমিটির সদস্যবৃন্দ শপথ গ্রহণ করছেন।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর ৬ষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২১ ও ২২ জুলাই ২০২৩ দুই দিনব্যাপী খাগড়াছড়িতে উক্ত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে জিকো ত্রিপুরাকে সভাপতি, বরুন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও বিপুল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কাউন্সিলে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-মহানগর থেকে প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ, শ্রমজীবী ফ্রন্ট, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতৃবৃন্দ।

২১ জুলাই সকালে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা কর্তৃক দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ১ম অধিবেশন শুরু হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

কাউন্সিলের ব্যানারে প্রধান শ্লোগান ছিল “দাসত্বের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়, শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধ হোন”।

কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ এর সংগঠক কৃপাধন চাকমা,পার্বত্য নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, পিসিপির সভাপতি অংকন চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা। এছাড়াও সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি নতুন জয় চাকমা উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা।

অংগ্য মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কার্যক্রমকে বিকশিত ও গতিশীল করতে হবে। নতুন নেতৃত্বকেও গতিশীল হয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য যুব সমাজকে সংগঠিত করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে যুব সমাজকে বিপথে পরিচালিত করতে নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত জারি রেখেছে। যুব সমাজের মধ্যে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে তাদেরকে আন্দোলন বিমুখ করাসহ নানা লোভ-প্রলোভনের মাধ্যমে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এসবের বিরুদ্ধে যুব ফোরামকে কাজ করতে হবে। যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় চেতনায় উদ্বুব্ধ করতে হবে।

ইউপিডিএফ সংগঠক কৃপাধন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করতে সরকার অবৈধভাবে সেটলার পুনর্বাসন করেছে। পাঁচ দশকেরও অধিক সময় ধরে পাহাড়ে সেনাশাসন জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীদের জিম্মি করে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার পাহাড়ে তথাকথিত উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে, কখনো ক্যাম্প স্থাপনের নামে, কখনো সেটলারদের দিয়ে দাঙ্গা বাঁধিয়ে ভূমি বেদখল করছে এবং বন-প্রকৃতিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। এই দখলদার ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে ছাত্র-নারী-যুবকদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রামের বিকল্প নেই।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অংকন চাকমা বলেন, বর্তমান নেতৃত্বের নানা দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নতুন নেতৃত্বকে সে সকল দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে তুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে। যুব সমাজকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমন-পীড়ন, নির্যাতন, অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়কের নামে বন-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বছর ৮টির অধিক ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যৌন সন্ত্রাস চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই যৌন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ছাত্র, যুবক ও নারী সমাজকে সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।

কাউন্সিলে প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনা ছাউনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। যাতে এ অঞ্চলে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার অর্জন করেত না পারে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অর্জিত হয়েছে। পাহাড়ি জনগণকেও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অধিকার অর্জন করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে নেশা ও মাদকদ্রব্য সেবন বেড়েছে। ফলে ব্যাপক সামাজিক অবক্ষয় চলছে। এর থেকে উত্তরণে ছাত্র যুবক নারীদেরকে একযোগে সর্বত্র কাজ করতে হবে।

প্রথম দিনের ২য় অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক রিপোর্ট, সাংগঠনিক সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট ও অর্থ সম্পাদকের অর্থ রিপোর্ট পেশ করা হয়। রিপোর্ট পেশ শেষে যুব ফোরামের বিভিন্ন শাখা থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিবৃন্দ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আলোচনা-সমালোচনা-পর্যালোচনা, মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনের ১ম অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা। তিনি কমিটির সকল সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান ও নতুন কমিটি প্রস্তাবনা আকারে তুলে ধরেন। প্রস্তাবিত নতুন কমিটির উপর ভিত্তি করে প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনা পর্যালোচনা শেষে তুমুল করতালির মাধ্যমে নতুন কমিটিকে স্বাগত জানান। এতে সর্বসম্মতিক্রমে জিকো ত্রিপুরাকে সভাপতি, বরুন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও বিপুল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। পরে বিদায়ী কমিটির সভাপতি অংগ্য মারমা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

দ্বিতীয় দিনের ২য় অধিবেশনে নবগঠিত কমিটির সভাপতি জিকো ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বিদায়ী কমিটির সভাপতি অংগ্য মারমা ও নবগঠিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা। এতে অংগ্য মারমা নবগঠিত কমিটিকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর সভাপতি দুই দিনের কাউন্সিল সমাপ্ত ঘোষণা করেন।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More