গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খাগড়াছড়িতে যুব সমাবেশ ও র‌্যালি

0
  • আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইলে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের বিকল্প নেই’- সচিব চাকমা
    [divider style="solid" top="20" bottom="20"]

খাগড়াছড়ি : ‘জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে যুবশক্তির উত্থান আসন্ন’ এই শ্লোগানে শাসকচক্রের লেজুর, দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের বাড়াবাড়ি ও ভাড়াটে গুন্ডাদের খুন-অপহরণ-গুন্ডামি বরদাস্ত না করার  আহ্বানে ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খাগড়াছড়িতে যুব সমাবেশ ও র‌্যালি করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

আজ ৫ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, সকাল ১০টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারের শহীদ অমর বিকাশ সড়কের উপর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শুরুতে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি লালন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পলাশ চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্যে মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি তপন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জীবন চাকমা। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা। এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল (বিএমএসসি) নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে সচিব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবসারত বিভিন্ন ভাষাভাষির জাতিগোষ্ঠী স্মরণাতীতকাল থেকে অধিকার বঞ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত ও সরকার-শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়ন-নির্যাতন ও রাজনৈতিক প্রতারণার শিকার হয়ে আসছে। যেখানে অত্যাচার, যেখানে নিপীড়ন, যেখানে শোষণ সেখানে আমাদের ফুঁসে উঠতে হবে। নিরব দর্শকের মতো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। সংগঠনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শাসকশ্রেণী উচ্ছৃঙ্খল মানসিকতা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালি দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দিয়ে  ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমাদের রুখতে হবে। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠী শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাতে চায়। কিন্তু তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকল নিপীড়ন-নির্যাতন ও অপকর্ম বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, জেল-জুলম, নিপীড়ন-নির্যাতন করে আন্দোলন দমন করা যায় না। মনে রাখবেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের উপর রক্তের বন্যা বয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এদেশের কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মানুষ নিস্তব্ধ হয়নি, রুখে দাঁড়িয়েছিলো। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষও রুখে দাঁড়িয়ে নিপীড়ন-নির্যাতনের জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি বলেন,১৯৭১ সালে শ্রমিক, কৃষক ও পাহাড়ি জনগণ মুক্তির সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলো সংবিধানে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে থাকার জন্য নয়। একজন প্রকৃত নাগরিক হিসেবে সম্মান-মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তারা মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলো। কিন্তু সরকার দেশের কৃষক, শ্রমিক ও পাহাড়ি জনগণকে অধিকার বঞ্চিত রেখে নানাভাবে অমর্যাদা করে যাচ্ছে।

তিনি সমবেত ছাত্র-যুব-জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার ও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার জন্য পুর্ণস্বায়ত্তশাসনের কোন বিকল্প নেই।পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউপিডিএফ-এর নেতৃত্বে পুর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হতে হবে।

যুব ফোরাম নেতা অংগ্য মারমা বলেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানে যেভাবে এদেশের জাতিসত্তাগুলোকে অস্বীকার করা হয়েছিল একইভাবে ২০১১সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমেও জাতিসত্তাগুলোকে অস্বীকার করে তাদের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসত সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।

তিনি বলেন, দিন-দুপুরে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছিল। অথচ হত্যাকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরলেও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছে না।

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তা বন্ধ করুন। অন্যথায় যুব সমাজকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ও কিছু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বর্মা-তরুদের দিয়ে নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে খুন, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। যুব সমাজকে সাথে নিয়ে সরকারের এই ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।

তিনি সমবেত যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে আত্মবলিদান দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। পূূর্ণস্বায়ত্তশানের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

দ্বিতীয়া চাকমা বলেন, বিলাইছড়িতে দুই মারমা বোনকে ধর্ষণকারী ও চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েনের উপর হামকারীদের শাস্তি দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় গত ১৮ মার্চ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী মন্টি ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদেরকে উদ্ধারেপ্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। পাহাড়ে মানবাধিকার আজ শূণ্যের কোটায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তপন চাকমা বলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কুখ্যাত ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলামের অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় খাগড়াছড়ি শহরে মিঠুন চাকমার চিহ্নিত খুনীরা ঘুরে বেড়ালেও প্রশাসন তাদের গ্রেফতার না করে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণাপূর্বক পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে নেয়া, সেনা-সেটলার প্রত্যাহার ও ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা এবং অপহৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার ও সেনাপৃষ্টপোষিত খুনি-অপহরণকারী নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধের দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে একটি শুভেচ্ছা র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি রেড স্কোয়ার, উপজেলা, কলেজ গেট হয়ে চেঙ্গিস্কোয়ার ঘুরে আবারো স্বনির্ভর বাজারের শহীদ অমর বিকাশ সড়কে সমাবেশ স্থলে এসে শেষ হয়।

সমাবেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় চার শতাধিক যুবক অংশগ্রহণ করেন।
——————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More