সমকালের খবর

গারোরা হারাতে যাচ্ছে তাদের মাঠটিও

0
ছবি: সমকালের সৌজন্যে

অনলাইন ডেস্ক ।। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের কড়ইগড়ার টিলাটি যুগ যুগ ধরে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের লোকজন। নানা পার্বণ-অনুষ্ঠানে এই মাঠটিই তাদের ভরসা। সম্প্রতি স্থানীয় সেটেলাররা (অন্য স্থান থেকে আসা বসতি স্থাপনকারী) মাঠটি নিজেদের দাবি করে দখলের পাঁয়তারা করছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো মীমাংসা হয়নি। এখন মাঠটিতে গারোদের ঢুকতে দিচ্ছে না সেটেলাররা। এ জন্য গত ৭ সেপ্টেম্বর গারো সম্প্রদায়ের লোকজন জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে মাঠটি ফেরত চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। রোববার নতুন করে জেলা প্রশাসকের কাছেও আবেদন করা হয়েছে।

গারো সম্প্রদায়ের নেতা সুনীল দাজেল ও সঞ্জীব ডালবৎ বলেন, ১৯৪৮ সালে বড়গোপটিলাটির গাছগাছালি পরিষ্কার করে আদিবাসী মান্দিরা (গারো) খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। প্রতিবছরই ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, জাতীয় দিবস, আদিবাসী দিবস উদযাপন করে আসছেন তারা এই মাঠে। কয়েক মাস আগে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী কিছু সেটেলার যুবক জোর করে মাঠ দখল করতে আসে। তারা মাঠে টানানো আদিবাসীদের পূর্বপুরুষের স্মৃতিচারণমূলক সাইনবোর্ডটি তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আদিবাসী কাউকে মাঠে না আসতে হুমকি দেয়।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলও জানিয়েছেন, এই টিলাটিতে একসময় আদিবাসীরাই থাকতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এখন বসবাস করছেন।

মাঠটি রক্ষায় আদিবাসীরা স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাসহ গণ্যমান্যদের কাছেও ধরনা দেন। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখনও বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেননি। পরে তারা উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমার অফিসে এ বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, আমি উভয় পক্ষকে মাঠে যাওয়া থেকে নিবৃত করেছি। আমার মেয়ের বিয়ের জন্য সালিশ যথাসময়ে করতে পারিনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রশাসনকে নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন বলেন, আদিবাসীরা আগে থেকে এখানে বসবাস করে আসছেন। এখন কিছু মানুষ মাঠটির দখল নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে। তাহিরপুর থানার ওসিকে নিয়ে সোমবার বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করা হবে।

বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের বন বিট কর্মকর্তা বীরেন্দ্র কিশোর রায় অবশ্য বলেছেন, ওই মাঠের জমি নিয়ে বহুদিন ধরেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আছে। প্রকৃতপক্ষে এই জমি জেলা প্রশাসনের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। বন সম্প্রসারণের জন্য এই জমি দিতে বহু আগেই জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, ইউএনওকে বলে দেব দ্রুত বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করে দেওয়ার জন্য।

সূত্র: সমকাল

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More