গুইমারায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে জুয়ার আসর: জনগণের প্রতিরোধ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
গুইমারা: গতকাল ১৯ মার্চ ২০১১ শনিবার রাতে খাগড়াছড়ির গুইমারার নতুন পাড়া ও রামগড়ের রামেসু বাজারে জুয়ার আসরে স্থানীয় জনগণ দু’ দফা হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। জনতা এ সময় ডাব্বো খেলার সরঞ্জাম পুড়ে দেয় ও জুয়ারীদের কয়েকজনকে মারধর করে৷ গুইমারা ও খাগড়াছড়ির মারমা সমপ্রদায়ের মুরুব্বী ও বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলসহ বিভিন্ন মহলের বাধাদান সত্বেও ডাব্বো খেলার নামে ওই জুয়ার আসরের আয়োজন করা হলে জনতা তাতে হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির গুইমারায় প্রত্যেক বছরের ন্যায় এ বছরও শনিবার চান্দ্যামনি বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান “চান্দ্যামনি মেলা” আয়োজন করা হয়৷ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় একটি সংঘবদ্ধ জুয়ারী চক্র বিহারের পাশে ডাব্বো খেলা আয়োজনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিহারাধ্যক্ষ ব্রহ্মদত্ত ভান্তের অনুমতি না পাওয়ায় জুয়ারীরা বিহারের পার্শ্ববর্তী নতুন পাড়ায় ডাব্বো খেলার আসর বসায়৷ খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা বিকাল ৪টার দিকে ওই আসর ভেঙে দেয় এবং জুয়ারীদের ধাওয়া করে৷ জনতা এ সময় ডাব্বো খেলার সরঞ্জামও পুড়িয়ে দেয়।
এরপর সন্ধ্যার দিকে উক্ত জুয়ারী চক্রটি আবারো মুনলাইট ইয়ং স্টার কাবের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আড়ালে রামগড়ের রামেসু বাজারে অবাধে ডাব্বো খেলার আসর বসালে স্থানীয় জনতা রাত ১১টার দিকে জুয়ারীদের প্রতিরোধ করে ও ডাব্বো খেলার আসর ভেঙে দেয়।
উক্ত ঘটনার জের ধরে আজ ২০ মার্চ রবিবার সকালে সংঘবদ্ধ জুয়ারী চক্রটি দুই নিরীহ ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করেছে। তারা হলেন মাটিরাঙ্গার কাঁঠাল বাগান গ্রামের মহন্ত কুমার ত্রিপুরা (৪৫) পিতার নামে রংধনি ত্রিপুরা ও ১০ নম্বর গ্রামের প্রতীম কুমার ত্রিপুরা (২৫) পিতার নাম যুগল কৃষ্ণ ত্রিপুরা।এরা তাদের গ্রাম থেকে দেওয়ান পাড়ায় তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাবার পথে রামেসু বাজার বটতলা এলাকায় কংজরী মারমা ও চিংহ্লামং মারমার উস্কানিতে জুয়ারীরা তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়৷ এতে তারা মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে৷ তাদেরকে বর্তমানে মাটিরাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক প্রদীপন খীসা মহন্ত কুমার ত্রিপুরা ও প্রতীম কুমার ত্রিপুরার উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এছাড়া তিনি জুয়ারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনতার প্রতিরোধকে “সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা” হিসেবে চিত্রিত করে এর সাথে ইউপিডিএফ-কে জড়িয়ে শীর্ষ নিউজ ডট কম-এ প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি অবিলম্বে জুয়ারী চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গুইমারায় একটি সংঘবদ্ধ জুয়ারী চক্র স্থানীয় প্রশাসনকে “ম্যানেজ” করে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আড়ালে প্রতি বছর ডাব্বো খেলা বা জুয়ার আসরের আয়োজন করে থাকে। এতে স্থানীয় জনগণ একদিকে আর্থিকভাবে সর্বশ্বান্ত হচ্ছে ও সামাজিক শৃংখলা বিনষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সহজ সরল পাহাড়িরা বাড়ির সম্পত্তি, স্বর্ণালংকার, এমনকি জমিজমা বন্ধক দিয়ে জুয়া খেলায় মেতে ওঠে৷ প্রশাসন এটা দেখেও না দেখার ভাণ করে থাকে। এজন্য এই জুয়ারী চক্রটির বিরুদ্ধে সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।