গুইমারায় সামরিক পোশাক উদ্ধার রহস্য এবং সাম্প্রদায়িকমনস্ক নিউজ সাইটের মিথ্যাচার
নিজস্ব প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ কর্তৃক সামরিক পোশাক উদ্ধার ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত সামরিক পোশাক উদ্ধার ঘটনার পরে গুইমারা এলাকায় সাধারণ জনগণকে আটক, নির্যাতন হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সাম্প্রদায়িক ভাবাপুষ্ট একটি অনলাইন নিউজ সাইট গত ১৮ ডিসেম্বর একটি রিপোর্টে দাবি করে যে, ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ ‘৮৭ পিস আমদানি করা সামরিক পোশাক’ উদ্ধার করেছে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র উল্লেখ করে বলা হয় যে, গরম কাপড় বিক্রির আড়ালে গুইমারা বাজারে এক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীদের কাছে সামরিক পোশাক বিক্রি করার খবর নিরাপত্তা বাহিনীন পায়। পরে ফাঁদ পেতে উক্ত ব্যবসায়ীকে আটক করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ সামরিক পোশাক উদ্ধার করা হয়। প্রতিবেদনে উক্ত ব্যবসায়ীর নাম মইনুদ্দীন(৩৫) হিসেবে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র শাখাও এই পোশাক ব্যবহার করে থাকে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
কিন্তু সিএইচটিনিউজডটকম এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে পেয়েছে ভিন্ন তথ্য ও ভিন্ন উদ্দেশ্য!
এলাকাবাসীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে ফটিকছড়ি নিবাসী মইনুদ্দীন নামে এক ভ্রাম্যমাণ কাপড় ব্যবসায়ী গত ১৩ ডিসেম্বর সোমবার থেকে গুইমারা বাজারে সাইফুল রহমানের ইলেকন্ট্রনিক্স দোকানের সামনে সামরিক পোশাকসহ বিভিন্ন ধরণের কাপড় প্রকাশ্যে বিক্রি করছিল। সাধারণ পাহাড়ি-অপাহাড়ি শিশু-যুবক-বৃদ্ধ সকলেই সেখান থেকে কাপড়চোপড় ক্রয় করেছিল। কিন্তু প্রকাশ্যে সামরিক পোশাক বিক্রয় করার পরেও ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত উক্ত ব্যবসায়ীকে নিরাপত্তা বাহিনীর কেউই তাকে আটক করেনি। পরে অবশ্য ১৭ ডিসেম্বর তাকে ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ কর্তৃক তাকে আটক করা হয়। কিন্তু সিএইচটিনিউজডটকম অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে, মইনুদ্দীন নামে উক্ত কাপড় ব্যবসায়ীকে ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ আটক করেছে এমন খবর প্রদান করলেও এই নামে কোন ব্যক্তি বা এরই মধ্যে কাউকে গুইমারা থানায় আটক করা হয়নি বা কারো নামেও মামলা প্রদান করা হয়নি। অর্থাৎ মুইনুদ্দীন নামক উক্ত কাপড় ব্যবসায়ীকে আদতেই আটক করা হয়েছে নাকি তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে সিএইচটিনিউজডটকম জানতে পেরেছে, গুইমারা থানা ও তার পার্শ্ববর্তী রামগড় এলাকায় সাম্প্রতিককালে সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় রাতেবিরাতে তল্লাশী চালাচ্ছে ও এবং বিভিন্নজনকে আটক করার ঘটনাও ঘটেছে। জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টায় গুইমারা রিজিয়িনের সেনাবাহিনী রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউপির নবদ্বীপ কার্বারী পাড়া থেকে মোহন চাকমা(৩৫) পিতাঃ ঢেঙা চাকমা নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে এলাকার অভিভাবক ও জনগণের ব্যাপক চাপের মুখে তাকে সকাল ৬ টায় ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে গত ১৭ নভেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার গুইমারা তৈকর্মা পাড়া থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগ করে সন্দেহজনকভাবে মংসানু মারমা নামে একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে আটক করে সাম্প্রদায়িক ভাবাপুষ্ট নিউজসাইটে ছবিসহ প্রকাশ করা হয়। তবে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা প্রদান না করে তাকে গুইমারা থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
এখন এই সকল ঘটনার সাথে ‘সামরিক পোশাক’ উদ্ধার ঘটনা ও সাম্প্রদায়িক ভাবাপুষ্ট নিউজসাইটে তার প্রচারণার পেছনে কোন ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য রয়েছে কি না তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে।
গুইমারা রামগড় এলাকার সাধারণ সচেতন জনগণ মনে করছেন, ‘সামরিক পোশাক’ উদ্ধারকান্ড ও সাম্প্রদায়িক ভাবাপুষ্ট নিউজ সাইটে তা নিয়ে মিথ্যাচার করার পেছনে নিশ্চয়ই ‘নিরাপত্তা বাহিনী’ কর্তৃক গুইমারা রামগড় এলাকায় হয়রানী আটক নির্যাতন জোরদার করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
‘সামরিক পোশাক’ আটকের নাটক সাজিয়ে জনগণের উপর নিপীড়ন চালানোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকা প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেন।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।