‘গুণ্ডাতন্ত্রের’ আরেক রূপ খাগড়াছড়িতে ‘আইন শৃঙ্খলা মিটিঙ’ : জিওসি’র হম্বিতম্বি, রা নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর, কানামাছি খেলা আর কয় দিন?

0

।। রাজনৈতিক ভাষ্যকার ।।

খাগড়াছড়ি স্বনির্ভর-পেরাছড়ায় ১৮ আগস্ট নারকীয় গণহত্যার তিন দিনের মাথায় ২১ আগস্ট সার্কিট হাউজে আইন শৃঙ্খলা মিটিঙ হয়। চট্টগ্রামের  বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মিটিঙে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে” হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জাহাঙ্গীর কবীর তালুকার বলেন,‘সরকার পাহাড়ে আর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বরদাস্ত করবে না। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে।’ আরও অগ্রসর হয়ে তিনি এও বলেন,‘….সন্ত্রাসীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সন্ত্রাসের ঘাঁটি গেড়ে তুলেছে, শিক্ষা জীবন ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে সরকার বদ্ধপরিকর।’ বাহ! বাহ!! সাব্বাস!!! মার হাবা, মার হাবা!!!

# অস্ত্রসহ ধৃত সন্ত্রাসী তরু গেল কোথায় জবাব দাও জিওসি (২৪ পদাতিক ডিভিশন) : রাঙ্গামাটির বাঘাইহাটে সেনা চৌকিতে অস্ত্রসমেত ধৃত দাগী আসামী তরু জোলেইয়্যাকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি’র প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: ৯ নভেম্বর ২০১৭
[divider style="normal" top="20" bottom="20"]

কোন মুখে এসব কথা বলেন জিওসি মশাই! গিরিগিটি যত রঙ পাল্টাক না কেন, মানুষকে ফাঁকি দিতে পারে না। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে বসে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ডেকে বৈঠক (গত বছরের প্রথমার্ধে তাতিন্দ্রলাল-সুদর্শন-তপন জ্যোতি গংকে নিয়ে), বাঘাইহাটে অস্ত্রসমেত ধৃত সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দিতে চাপ প্রদান (৯-১০ নভেম্বর ২০১৭ : ঢাকায় পিসিপি ও শ্রমজীবী ফ্রন্টের মিছিলের ছবি দেখুন) আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে কিনা আপনি সন্ত্রাসের ঘাঁটি হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন!!! আপনার “সমরদৃষ্টির” তারিফ না করে পারা যায় না। সে কারণেই বোধহয় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রমেল চাকমাকে নান্যাচর সেনা জোনের ‘ব্যাঘ্র শাবকরা’ নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করে। তাতেও নিরাপদ বোধ না করে তার মৃত দেহ সামাজিক ধর্মীয় বিধান মতে সৎকার করতে না দিয়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে। মৃত রমেলকে ঠেকাতে জোন অধিনায়কসহ পুরো নান্যাচরে সেনা জোন (আস্ত একটি ব্যাটেলিয়ন) আর রাঙ্গামাটি ব্রিগেডের স্টাফরা নিয়োজিত থাকে, ভাবলে অবাক হতে হয়। অবুঝ মন! ভয় কাটে না, কী প্রশিক্ষণ পেয়েছেন কে জানে। পাশে ভস্মস্তূপ থেকে শহীদ রমেল-শহীদ তপন-শহীদ এল্টন-শহীদ পলাশ-শহীদ নিতীশ-শহীদ রূপনরা– গ্রীক পুরাণের হাইড্রার মতো ফুঁসে উঠবে, তাদের অগ্নিশর্মা রূপ দেখে খুনী-দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা কর্মকর্তারা হার্টফেল করবে– এজন্যই কি নিরাপত্তার এত বাড়াবাড়ি? তার সাথে গোপন সেনা বাজেট লুটেপুটে খাওয়ার কারসাজিও কি যুক্ত নয়? কোন দিন দেশে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে সবই প্রকাশ পাবে।

# ঢাকায় প্রবাসী শ্রমজীবী ফ্রন্টের মিছিলে অস্ত্রসহ ধৃত তরু জোলেইয়্যাকে ছেড়ে দেয়ার বিরুদ্ধে মিছিল। ছবি: ১০ নভেম্বর ২০১৭
[divider style="normal" top="20" bottom="20"]

শিক্ষার্থীদের অতি সাধারণ “নবীণ বরণ” অনুষ্ঠানও “দেশপ্রেমিক ব্র্যাঘ শাবকদের” মনে ভীতি উদ্রেক করে থাকে। শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে গোপন সার্কুলার দিয়ে কলেজে “নবীন বরণ অনুষ্ঠান” বন্ধের নির্দেশনা জারি করতে হয়। হয়ত সেদিন দূরে নয়, যেদিন প্রতিটি কলেজ স্কুলের গেইটে  ‘দেশপ্রেমিক ব্যাঘ্র শাবকরা’ মেশিনগান-মর্টার তাক করে পাহারা দেবে, পাক হানাদাররাও ’৭১ সালে ঢাকা ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই করেছিল।

# শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত বিতর্কিত সার্কুলার
[divider style="normal" top="20" bottom="20"]

‘বাঙালি জাতীয়তা’ নয়, ‘স্ব স্ব জাতিসত্তার’ স্বীকৃতির দাবিতে মিছিলে অংশ নিলে স্কুল ছাত্রদের বহিঃষ্কারের হুমকি দিয়ে খাগড়াছড়ি সদর জোন অধিনায়ক হেড মাস্টারদের হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠান। আরেক পূর্বসুরী মে.জে. ইব্রাহিম (বরখাস্তকৃত, যিনি খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন অপকর্মের কুখ্যাতি কুড়িয়েছেন) ঢাকার স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে বক্তব্য বিবৃতিতে বলছেন ‘অনুমতি নিয়ে আন্দোলন হয় না। পাকিস্তানের সময় আন্দোলন করতে অনুমতি নেয়া হয় নি।’ অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা কর্মকর্তা থাকাকালে তখনকার কর্ণেল ইব্রাহিম ছাত্র-শিক্ষক কাউকে বাদ রাখেন নি, হেন জন নেই তার হাতে অপদস্থ হন নি। ক্ষমতার জোরে নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালিয়েছিলেন।

ভুলে যাবেন না, তাতে শেষ রক্ষা হয় না। তার প্রমাণ পেতে দূরে যেতে হয় না। এ ক’দিন আগে ১৫ আগস্ট গত হলো, টিভি অন করলে লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে বজ্র কণ্ঠে শেখ মুজিবের কথা কানে ভেসে আসে,‘মনে রাখবা!…রক্ত যখন দিতে শিখেছি, তখন কেউ আর আমাদের দাবাইয়া রাখতে পারবে না।’ রাজাকার-আল বদল লেলিয়ে দিয়ে তিরিশ লক্ষ মেরেও পাক হানাদাররা বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি তা তো প্রতিষ্ঠিত সত্য।

# খাগড়াছড়ি সদর জোন থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জারিকৃত চিঠি
[divider style="normal" top="20" bottom="20"]

শহীদ তপন-এল্টন-পলাশরা মৃত্যুকে ভয় পায় নি, ‘মৃত্যু তাদের পায়ে ভৃত্য’। শহীদ তপন সাহসের সাথে উচ্চারণ করেছিল ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের জন্য মিঠুন প্রাণ দিতে পারলে, তপনের আত্মবলিদান কিছু নয়!’ তপনরা মরতে শিখেছে। শেখ মুজিবের কথায় বলতে হবে, তাদের আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

গর্বিত মোরগের মতো যতই দগমগ বেড়ান, চিরদিন এভাবে চলতে পারবেন না। ঘাতক লেলিয়ে দিয়ে পিসিপি-ডিওয়াইএফ-এর উদীয়মান নেতা তপন-এল্টন-পলাশদের খুন করা যাবে, কিন্তু তাতে পাহাড়ে একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তার বহু দুর্নীতি, জঙ্গী কানেকশান, অপকর্ম– আড়াল হবে না। শেখ মুজিবের খুনী কর্ণেল ফারুক, কর্ণেল শাহরিয়ার, কর্ণেল মহিউদ্দিনদের কী পরিণতি হয়েছে– তা জনগণ দেখেছে। ‘সেনাকুষ্ঠিতে’ যে সমস্ত কর্মকর্তার জঙ্গী কানেকশান, অস্ত্র পাচারকারীদের সম্পর্ক আছে, কুষ্ঠি বিশারদরা তা নিশ্চয়ই বের করবেন একদিন। এক কালের ডিজিএফআই-এর প্রধান বর্তমানে জেল খাটছেন, কথায় বলে ‘অতি চালাকীর গলায় দড়ি’। পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তা যত কিছুই বেশ ধরে থাকুক, তাদের মাথার ওপরও হয় ফাঁসির দড়ি নয়ত কারাকক্ষ অপেক্ষা করছে!!!

খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজের মিটিঙে জিওসি তালুকদার সাহেব সন্ত্রাস দমন, উন্নয়ন, আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে–এত কথা বলেছেন, অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের এ বিষয়ে কোন বক্তব্য নেই। হেনতেন বিষয়ে সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কত কথা বলেন, এবার তার মুখেও রা নেই। সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন তো দূরের কথা। বক্তব্য দিলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলবেন, তা সবার জানা! ‘১১দফা নির্দেশনা’ ‘অপারেশন উত্তরণ’ জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন ভার কার্যত তুলে দেয়া হয়েছে সেনাদের হাতে। যা চলছে তা হচ্ছে ফৌজি শাসন, জংলী শাসন ছাড়া আর কোন কিছুর সাথে তার তুলনা চলে না।

ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত নিরীহ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও হেলমেট পরিহিত লাঠিসোঁটাধারী দুর্বৃত্তদের হামলাকে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন যথার্থই বলেছেন, “গুণ্ডামি”। “লাঠিসোঁটা নিয়ে নিরীহ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে গুণ্ডামি ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে। তাকে গুণ্ডাতন্ত্র ছাড়া বাংলায় প্রকাশ করার অন্য কোন ভাষা নেই।” জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় ড. কামাল এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংবেদনশীল কারো পক্ষে সাধারণ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর নিষ্ঠুর হামলা মেনে নেয়া কঠিন।

# সেনা প্রহরায় খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সমাজের দাগী আসামী বখাটেদের দিয়ে ঠ্যাঙ্গারে বাহিনী গঠনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে এলাকাবাসীর প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: ১৫ নভেম্বর ২০১৭
[divider style="normal" top="20" bottom="20"]

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৮ আগস্ট শনিবার সকালে স্বনির্ভরবাজার ও পেরাছড়ায় নিরাপত্তা বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ঘাতক লেলিয়ে দিয়ে যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা ড. কামালের সংজ্ঞায়িত “গুণ্ডাতন্ত্রকেও”  হার মানায়। ঢাকায় পুলিশ হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তদের নিয়ে লাঠিসোঁটা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর স্বনির্ভরবাজারে বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতিতে দিন-দুপুরে আধা-ঘণ্টা যাবৎ ঘাতকরা হত্যাকাণ্ড চালায়। এ দৃশ্য বর্ণনা দেয়া বা তা এক কথায় প্রকাশ করা কঠিন। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামে যা চলছে, তাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতন্ত্র ছাড়া অন্য কোন নামে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। এত বড় ঘটনাকে এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম টিভি টক শো’তে ‘আধিপত্য বিস্তার’, ‘চাঁদাবাজি’ ‘আন্তঃদলীয় কোন্দল’ … মনগড়াভাবে ইত্যাদি আখ্যায়িত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাবলী সম্পর্কে নিজেদের পর্বতপ্রমাণ অজ্ঞতা, ক্ষুদ্রতা আর মানসিক বিকারগ্রস্ততার প্রমাণ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পাহাড়ের এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, যিনি পরবর্তীতে মানবাধিকার কমিশনের কাজ করেন, স্বনির্ভর-পেরাছড়া হত্যাকাণ্ডের পর বিবিসির এক সাক্ষাতকারে নিজের পিতৃভূমির অধিকার আদায়ের আন্দোলন সম্পর্কে তার ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গী আর যে অজ্ঞতা ফুটে উঠেছে, তাতে বেদনাহত হতে হয়। তিনি বহুগুণে গুণান্বিতা চৌকষ এক শিক্ষিকা ছিলেন, সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিও বটে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি চাইলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বিশেষ মর্যাদা লাভ করতে পারতেন, বাঙালি উঁচুতলায় পদস্থ-লেখক-বুদ্ধিজীবীরা যেভাবে ’৭১-এর  সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনে কাজ করার সময়েও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লংঘন বিষয়ে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হন নি। শিক্ষক হিসেবে তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলা যায়, তার মধ্যে যে গুণাবলী আছে তাকে এ যুগের বিচারে ভাল শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই হয়। কিন্তু পুঁটি মাছের প্রাণ নিয়ে মানবাধিকার কর্মী হওয়া যায় না। মানবাধিকার কর্মী হতে হলে মানবের অধিকারের পক্ষে, নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে জোর গলায় প্রতিবাদের সাহস থাকতে হয়।

শাস্ত্র বচনে আছে, ‘যত সূক্ষ্মভাবেই করুক, অপরাধী অপরাধের ছাপ ফেলে যেতে বাধ্য’। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তা ক্ষমতার গর্বে এতটা বেপরোয়া যে, ১৮ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে কোন রাখঢাক ব্যাপার ছিল না। একসূত্রে জানা যায়, পিসিপি-ডিওয়াইএফ নেতাদের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত হলে খাগড়াছড়ি ব্রিগেড উল্লাস প্রকাশ করে পার্টি দেয়। এটা এখন সবার জানা হয়ে গেছে, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোত্তালেব সাজ্জাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে ঘটনার দিন ভোরে সেনা জওয়ানরা খুনীদের নিরাপত্তা দিতে বেরিয়ে পড়ে। আগেবাগে স্বনির্ভবাজারের উত্তর-পশ্চিমে চেঙ্গী নদী, রাবারবাগান ফ্যাক্টরি এলাকায় অবস্থান নেয়। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল জোরদার করে। খাগড়াপুর থেকে পেরাছড়া-ধর্মপুর আসার পথে পূর্ব-বোঝাপড়া মত লারমাপন্থী নামধারী দুর্বৃত্তদের মোতায়েন রাখে। সমস্ত কিছু ঠিক হলে সকাল সাড়ে আটটার দিকে পরিকল্পনা মত ঘাতক দল মা’জনপাড়া ও উপালিপাড়া দিয়ে এগুতে থাকে। মা’জনপাড়ার দলটি প্রধান সড়ক বরাবর টমটম দিয়ে আসে, উপালিপাড়ার দলটি আগেই ঠিকাদার অফিসের দিকে এসে পৌঁছে। ঘাতকরা এলোপাথারি গুলি ছুঁড়ে ভীতি সঞ্চার করে। ইউপিডিএফ জেলা দপ্তরে কর্মরত পিসিপি জেলা সহ:সাধারণ সম্পাদক এল্টনকে কাছে থেকে গুলি করে ঘটনাস্থলে মেরে ফেলে। এরপর দোকানে ঢুকে সকালের নাস্তা সেরে নেয়া, কেনা-কাটার উদ্দেশ্যে বাজারে আগত, পানছড়ি সড়কে বাস প্রতীক্ষারত ব্যক্তি পথচারীকে লক্ষ করে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে পিসিপি’র জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ চাকমাসহ ৬ জন খুন হয়। আহত হয় পিসিপি’র কর্মী সোহেলসহ বেশ ক’জন পথচারিও। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে নির্বিঘ্নে হত্যাকাণ্ড চালায়। পরে অস্ত্র উঁচিয়ে ঘাতকরা বিজিবি সদর দপ্তরের গেইট সম্মুখ দিয়ে দাপটের সাথে চলে যায়। তাদের নিরাপত্তায় স্টেডিয়ামের জগন্নাথ মন্দিরের কাছে ছিল লারমাপন্থী সংস্কার দলের একটি পাল, তার অদূরে ছিল দৃশ্য অবলোকনকারী রাস্তায় টহলরত সেনা জওয়ানরা। ধর্মপুর রাস্তা ধরে গুলকানাপাড়া হয়ে তারা ফিরে যায় খাগড়াপুরের আস্তানায়। খুনের মিশন সফল হওয়ায় খাগড়াপুর, তেঁতুলতলা ও খাগড়াছড়ি বিগ্রেড-এর মধ্যে ফোনে পারষ্পরিক “মোবারকবাদ” জানানোর কথাও জানা যায়।

২০ আগস্ট থেকে যৌথবাহিনীর চিরুণি অভিযানের আড়ালে সেনা পিক-আপ’এর সাহায্যে পেরাছড়ায় আটকে-পড়া মুখোশবাহিনী ও লারমাপন্থী পরিচয়দানকারী জেএসএস-এর চিহ্নিত দুর্বৃত্তদের উঠিয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। চিরুণি অভিযান আসলে দুর্বৃত্ত ধরার অভিযান নয়, এ অভিযান দুর্বৃত্ত উদ্ধার ও রক্ষার অভিযান।

নিরাপত্তা টহল জোরদারের নামে সাধারণ মানুষের মনে ভয়-ভীতি সৃষ্টি ও স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটিয়ে সেনাবাহিনী ভালমতই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাস দমনের কানামাছি খেলা জমিয়ে তুলেছে। কিন্তু এ খেলা বেশীদিন চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ বোকা নয়। দিন ঘনিয়ে আসছে! ঘাতক লেলিয়ে দিয়ে যারা তপন-এল্টন-পলাশদের খুন করেছে, তাদের জন্যও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে। বলা হয়, People who set traps for others get caught themselves. People who start landslides get crushed. (যারা অন্যের জন্য ফাঁদ তৈরি করে, সে ফাঁদে তারা নিজেরাই পড়ে। ভূমিধসে যারা অন্যকে পিষিয়ে মারতে চায়, তাতে নিজেরাই পিষিয়ে মারা যায়।’)।#
———————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More