চট্টগ্রামে আন্তঃ পাহাড়ি সম্প্রীতি সমাবেশ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
15 (1)চট্টগ্রাম: ‘খাগড়াছড়িতে আন্তঃ জাতিগত সংঘাতের উস্কানিদাতাদের সম্পর্কে সচেতন হোন, ঐক্য-সংহতি জোরদার করুন’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে আজ শুক্রবার(১২ ডিসেম্বর ২০১৪) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আন্তঃ পাহাড়ি সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের আগে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল বের করা হয়।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কর্তৃক আয়োজিত উক্ত সমাবেশে চাকমা, মারমাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিওয়াইএফ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি জিকো মারমা।

তিনি বলেন, ‘গত ৬ ডিসেম্বর মানিকছড়িতে শিক্ষক চিংসামং মারমার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল পাহাড়িদের মধ্যে আন্তঃ জাতিগত সংঘাত বাঁধিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের উস্কানিতে খাগড়াছড়ির মহাজন পাড়ায় ও মধুপুর বাজারে চাকমাদের বাড়িঘর ও দোকানপাট লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে। এদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং যে কোন মূল্যে পাহাড়িদের ঐতিহ্যগত ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।’

কারো অপপ্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। চিংসামং চৌধুরীর মৃত্যুকে অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কতিপয় সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানী হত্যার দায় ইউপিডিএফের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। অথচ যখন মানিকছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা ও রামগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত মারমা তথা পাহাড়িদের ভূমি বেদখল হয়, তাদেরকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়, যখন মারমা নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়, যখন বিনা কারণে মারমাসহ পাহাড়ি যুবকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়, তখন এদেরকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। যখন মারমা সম্প্রদায় প্রতি বছর ডাব্বো খেলার নামে জুয়া খেলায় মত্ত হয়ে রসাতলে যায়, মদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে, তখনও এই সর্বনাশা অবক্ষয় থেকে মারমা সমাজকে উদ্ধার করতে তাদের ন্যুনতম প্রচেষ্টা দেখা যায় না। বরং তথাকথিত জাতীয় রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত জনৈক ‘মারমা নেতা’ ডাব্বো খেলায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নিয়মিত বখরা আদায় করতেন।’

জিকো মারমা আরো বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য এলাকার মতো মানিকছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা ও রামগড় এলাকায়ও একমাত্র ইউপিডিএফ-ই ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। নারী ধর্ষণ ও পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ-ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য ইউপিডিএফ ওই এলাকার হাজার হাজার পাহাড়ি নরনারীকে রাজপথে নামিয়েছে। ডাব্বো তথা জুয়া খেলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে মারমা যুব সমাজ তথা সাধারণ জনগণকে রক্ষা করেছে। শুধু তাই নয়, এলাকায় নলকূপ স্থাপন, ধর্মীয় উপসনালয় নির্মাণ, মন্দিরের তহবিলে অনুদান, জনগণকে ধান কাটাসহ চাষের কাজে সহযোগিতা, বৈসাবি উৎসবে গরীব পরিবারগুলোর মধ্যে আর্থিক অনুদান প্রদান ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালনা করেছে। সম্প্রতি গুইমারায় নাক্রেই নামক স্থানে বাঁধ দেয়ার নামে মারমা উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও একমাত্র ইউপিডিএফই সোচ্চার রয়েছে।’

‘ইউপিডিএফের নিরন্তর প্রচেষ্টার কারণেই আজ মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, মানিকছড়ি ও রামগড় এলাকার জনগণ আগের চাইতে অনেক বেশী সংগঠিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন। ইউপিডিএফের কারণেই সেটলাররা আগের মতো ওই এলাকায় জোর করে মারমা তথা পাহাড়িদের জমি কেড়ে নিতে সাহস পাচ্ছে না। এ কারণে সেটলার ও সেনাবাহিনীর উগ্র সাম্প্রদায়িক অংশটি ইউপিডিএফের উপর ক্ষুদ্ধ। আর তাই ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে এক হাত নিতে তারা চিংসামং চৌধুরীর মৃত্যুকে ব্যবহার করে সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানী ‘মারমা নেতাদের’ লেলিয়ে দিয়েছে।’

জিকো মারমা বলেন, ‘কিন্তু আমাদের পাহাড়িদের জাতিগত ঐক্যকে কোন অপশক্তি ধ্বংস করে দিতে পারবে না। কারণ সাধারণ জনগণ জানেন ও বোঝেন যে, মারমাদের শত্রু বা প্রতিপক্ষ অন্য কোন জাতিসত্তা নয়। চাকমা বা ত্রিপুরাদেরও প্রতিপক্ষ অন্য কোন জাতি বা জাতিসত্তা নয়। সরকারই মারমা চাকমা তথা পাহাড়ি জাতিগুলোর উপর দমন-পীড়ন চালিয়ে তাদের জাতিগত বিকাশ ও অগ্রগতিকে রুদ্ধ করে দিতে চাইছে। আর চাকমা, মারমা বা ত্রিপুরা কোন জাতিসত্তা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ও এককভাবে সংগ্রাম করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তথা নিজেদের স্বতন্ত্র জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে।’

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ডিওয়াইএফ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসিমং মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিটন চাকমা, মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রমেশ চাকমা। সংহতি বক্তব্য রাখেন ম্রাচাথোয়াই মারমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এম এম পারভেজ লেনিন।
————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More