চট্টগ্রামে পিসিপি’র বর্ণমালা মিছিল ও সমাবেশ
চট্টগ্রাম: ‘আমার মাতৃভাষা আমার অধিকার’ এই শ্লোগানে কেবল ৫টি ভাষায় (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও মুনিপুরী) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু যথেষ্ট নয়, সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাসহ পিসিপি’র ৫ দফা পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে সকল জাতিসত্তার বর্ণমালা মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে চট্টগ্রাম মহানগরের চেরাগী পাহাড় মোড় থেকে বর্ণমালা মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব ডিসি হিল ঘুরে শহীদ মিনারের প্রাঙ্গনে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত ছাত্র সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সদস্য মন্টি চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের (গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোট) নগর তথ্য প্রচার সম্পাদক কাজী আরমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) নগর সভাপতি শওকত আলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমির উদ্দিন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা প্রমূখ।
সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আমীর উদ্দিন বলেন, যদিও ৫টি জাতিসত্তার মাতৃভাষা সম্বলিত পাঠ্যপুস্তক চালু করা হয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দেশের ভিতরে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। পাকিস্তানীরা যেভাবে পূর্ব বাংলার জনগণের উপর নিপীড়ন- নির্যাতন চালিয়েছিল ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসন বলবৎ থাকায় পাহাড়ি জনগণকে ফিলিস্তিনী জনগণের ভাগ্য বরণ করতে হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার এবং দেশের ভিতরে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
ছাত্র ফেডারেশন এর নগর সভাপতি শওকত আলী বলেন, বাঙ্গালী না হলে এইদেশে নাগরিক হওয়া খুবই কঠিন। জোর করে পাহাড়িদের উপর বাংলা ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ শ্রীলংকায় সিংহলী ও তামিল দুইটি ভাষায় জাতীয় সংঙ্গীত গাওয়া হয়। তিনি সকল জাতিসত্তার অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত পিসিপির আন্দোলনে তার সংগঠনের সমর্থন থাকবে বলে অঙ্গীকার করেন।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এ বছর সরকার ৫টি ভাষায় (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও মুনিপুরী) প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছে। তবে এতে বেশ অনিয়ম, অদক্ষতা, উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। সবজায়গায় বই এখনও ঠিকমত পৌঁছেনি। বই পর্যাপ্ত পরিমাণ ছাপা হয়নি। শিক্ষকদের প্রস্তুতিমূলক ট্রেনিং দেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে দেখা যায়, সরকার দায়সারাভাবে কাজটা করছে। সবদিক সমন্বয় করে সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সমাবেশে সভাপতি সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার আদায়ের জন্য যে সকল বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ সংহতি জানিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান এবং অসমাপ্ত জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
বক্তারা ৫টি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু যথেষ্ট নয় মন্তব্য করে অবিলম্বে সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার প্রদানসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্তা ৫ দফা দাবিনামা পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।