চট্টগ্রামে পিসিপি’র বিক্ষোভ : সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা ও ন্যায্য কোটা বহাল রাখার দাবি

0

চট্টগ্রাম :  সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, ও সরকারি চাকুরিতে পাহাড়িদের জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বহাল রাখার দাবিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষে  চট্টগ্রাম শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

মিছিলটি ডিসি হিল থেকে আরম্ভ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে এক প্রতিবাদ সমাবেশে পরিণত হয়।

বিকাল ৪ টায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও চবি শাখার সহ-তথ্য প্রচার সম্পাদক ত্রিরত্ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি চবি শাখার সদস্য রোনাল চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য-সচিব অমিত চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি থুইক্যাচিং মারমা। এতে আরো সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফেডারেশন সংগঠক লোকেন দে এবং বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট্স কাউন্সিল-চবি শাখার সভাপতি মংসাই মারমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা ও বাবুল সহ নাম না জানা অনেকে। তাদের স্মরণে এই দিনটিকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। পাকিস্তানের পাঞ্জাবী শাসকরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তাদের বৈষম্য-ভিত্তিক শাসন-শোষণ চিরস্থায়ী করতে যে শিক্ষানীতি চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ক্ষেত্রে অনেকটা তাই করছে। তার প্রমাণ বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য ও তাদের সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রদান।

বক্তার আরো বলেন, পিসিপি’র দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে সরকার ৬টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও তা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকেছে। সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের প্রাক-প্রাইমারী পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণদান সরকারের উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাবে এখনো সম্ভব হয়ে ওঠে নি। এমনকি পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা দাবিনামা সরকার এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি।

সমাবেশে বক্তারা বর্তমান কোটা আন্দোলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, সরকার কোটা সংস্কার আর কোটা বাতিল এক নয়। কিন্তু সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে সুকৌশলে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে বাকি সব কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে যেখানে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ৫% কোটা এবং প্রতিবন্ধী ১% কোটাও বিদ্যমান। অনগ্রসর প্রান্তিকতম ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের কথা বিবেচনা না করে সরকারের এমন একতরফা সিদ্ধান্তে পাহাড় ও সমতলে সংখ্যালঘু জাতি ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলোকে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করবে বলে বক্তারা মত দেন।

এছাড়া বক্তারা আরো বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১দফা নির্দেশনায় কার্যত বন্দী পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ। পাশাপাশি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বৈরতান্ত্রিকতার কালো থাবায় করা হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত। কোনো অন্যায়-অবিচার, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সমাবেশে যোগদান করলেই জোন সদর দপ্তর থেকে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কড়া নোটিশ পাঠানো হয়। গত বছর ১৯ নভেম্বর নানিয়ারচর কলেজে পিসিপি নবীন বরণ করায় কলেজ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ জারি করা হয়। কিন্তু সেই কলেজের এইচএসসি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও পিসিপি নানিয়ারচর কলেজ শাখার ছাত্রনেতা রমেল চাকমা যখন সেনাবাহিনীর নির্যাতনে ১৯ এপ্রিল খুন হন, তখন এই শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাক ডেকে ঘুমায়।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে প্রাইমারি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫দফা দাবির যথাযথ বাস্তবায়ন, সংখ্যালঘু জাতিসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বহাল, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১দফা নির্দেশনা বাতিল ও গত ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে ও পেরাছড়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ছাত্রনেতা তপন চাকমা, এল্টন চাকমা, যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More