চট্টগ্রামে বৈসাবি’র বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

0

ঢাকা : ঐক্য-সংহতি-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃবোধের চেতনায় অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি (বৈসু, সাংগ্রাই, বিঝু, বিষু) উপলক্ষে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি-২০১৮’র উদ্যোগে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

আজ শুক্রবার (১৩ এপ্রিল ২০১৮) সকাল ১০.৪৫টার সময় চট্টগ্রামের জেএম সেন হল প্রাঙ্গনে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক চৈতন্য বিকাশ চাকমা (আন্দোলন)-এর সভাপতিত্বে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক রইসুল হক বাহার। এসময় অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট-চট্টগ্রাম’র চেয়ারম্যান ডাঃ মাহফুজুর রহমান ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের পূর্ব-৩ অঞ্চলের সভাপতি এড. ভুলন লাল ভৌমিক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রইসুল হক বাহার বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপের কারণে পাহাড়িদের সংস্কৃতি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী শক্তি সমতলের দরিদ্র, অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ে পূনর্বাসন করে। ফলে পাহাড়িদের অস্তিত্ব আরও হুমকির মুখে পড়ে।

দীর্ঘ ৪৭ বছরেও দেশের জনগণের অর্থনৈতিক সাম্য অর্জিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের প্রায় অর্ধেক সম্পদ মাত্র ৮ জন ব্যক্তির কাছে কুক্ষিগত। দেশে বৈষম্য বিরাজমান বলেই কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, বৈষম্য অবসান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

এড. ভূলন লাল ভৌমিক বলেন, সংবিধানে আইনের চোখে সবাই সমান উল্লেখ থাকলেও সমতলে বেসামরিক শাসন আর পাহাড়ে সামরিক শাসন চলছে। সামরিক শাসনের কারণে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করাতো দূরের কথা সামাজিক আনন্দ-উৎসবও পালন করা যায় না। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে পাহাড় এবং সমতলের নিপীড়িত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার গুরুত্বারোপ করেন।

ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, সংবিধানে অনেক গঠনমূলক জনবান্ধব ধারা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। ঐ ধারাগুলি যথাযথ বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ে কিছুটা হলেও শান্তি আসত।

সভাপতির বক্তব্যে চৈতন্য বিকাশ চাকমা সবাইকে বৈসাবির শুভেচ্ছা জানিয়ে বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে ৩ দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করার জন্য সরকারে প্রতি দাবি জানান।

উদ্বোধনী সমাবেশ শেষে সকাল ১১.৪৫টায় নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পাহাড়ি নর-নারীরা র‌্যালি বের করে। র‌্যালিটি নন্দনকানন মোড় ঘুরে প্রেস ক্লাব হয়ে পূনরায় জেএমসেন হলে এসে শেষ হয়। এতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত পাহাড়ি নর-নারী, শিশু-কিশোররা অংশগ্রহণ করে।

এরপর বিকাল ২টায় দেশাত্ববোধক গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা একক ও দলীয় নৃত্যসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তার গান ও চাকমা ভাষায় “জার মুগুরে বাঘ ধাবানা” নামে একটি নাটক পরিবেশন করা হয়।

শেষে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আহবায়ক চৈতন্য বিকাশ চাকমা তার সমাপনী ভাষণে অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
———————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More