চট্টগ্রাম বন্দরে অপহৃত পিসিপি সদস্যকে উদ্ধার

0
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
চট্টগ্রাম: গত  ৬ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রামের বন্দরস্থ ব্যারিস্টার কলেজ এলাকা থেকে সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের দ্বারা অপহৃত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য নীতিময় চাকমাকে গতকাল সোমবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে।
রাত সাড়ে এগারটার দিকে স্থানীয় বাঙালি ও পাহাড়িরা মিলে ব্যারিস্টার কলেজের জাহিদ বিল্ডিংএর একটি কক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করে। দুবৃত্তরা বাইরে থেকে রুমটি তালা দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল। লোকজন তালা ভেঙে কক্ষে ঢুকে তাকে উদ্ধার করে।
এ সময় সেখানে থাকা সন্তু গ্রুপের ৪-৫ জনকে জনতা উত্তম মধ্যম দেয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ দিঘীনালা থানা শাখার সদস্য ও একই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নীতিময় চাকমা অপহৃত হওয়ার পর তার আত্ত্মীয়রা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। পরে এলাকার লোকজন মিলে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
নীতিময় চাকমার বাবা বীরেন্দ্র কুমার চাকমা ও তার বোনের জামাই রাজ্যধন চাকমা আজ ভোর সকালে তাকে নিয়ে দিঘীনালা ফিরে গেছেন।
গত ৬ অক্টোবর অপহরণের পর মুক্তিপণ হিসেবে সন্তু গ্রুপের দুর্বৃত্তরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। গতকালের মধ্যে টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকী দিয়েছিল।
সন্তু গ্রুপ দীর্ঘ দিন ধরে বন্দরস্থ ব্যারিস্টার কলেজে আস্তানা গেড়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মোবাইল ফোন ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নিরীহ লোকজনকে মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নারী ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় কিছু গলির মাস্তানকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে তারা তাদের কাছ থেকে প্রটেকশন পেয়ে থাকে।
সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা কোন চাকুরী করে না। তারা সন্তু লারমার কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায়। এছাড়া তথাকথিত সাংগঠনিক কাজের জন্য আলাদাভাবে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। এই টাকা দিয়ে তারা স্থানীয় বাঙালি মাস্তানদের ম্যানেজ করে থাকে। ম্যানেজ করার আরো একটি কৌশল হলো মাস্তানদেরকে মদ ও অন্যান্য নেশা দ্রব্য সরবরাহ করা। তারা নিজেরাও নেশায় আসক্ত। সারা দিন তারা মদ ও জুয়ায় বুঁদ হয়ে থাকে। গত মাসে তাদের হঠাকারীতা ও উস্কানির কারণেই বন্দরের ইপিজেডে পাহাড়ি-বাঙালি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়েছিল।
এ সব কারণে সন্তু গ্রুপের বিরুদ্ধে বন্দর এলাকায় পাহাড়িদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। হেন কুকর্ম নেই তারা করতে পারে না। কিন্তু স্থানীয় বাঙালি মাস্তানদের শেল্টার পায় বলে লোকজন তাদের বিরুদ্ধে মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পায় না। তবে যে কোন দিন এই ক্ষোভের বিষ্ফোরণ ঘটতে পারে। কারণ স্থানীয় বাঙালিরাও তাদের চিনতে শুরু করেছে। অতীতে বন্দরে বসবাসরত জুম্মরা সন্তু গ্রুপের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার ফুঁসে উঠেছিল। তাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে শত শত পাহাড়ি তাদের উপর হামলা চালিয়ে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিল। সে সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন দুই নাম্বারী (সন্তু গ্রুপের ছাত্র সদস্য) গ্রেফতার হয়। পরে আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে তার তিন চার বছর জেল হয়।
বর্তমানে বন্দরে সন্তু গ্রুপের যারা জড়িত রয়েছে তারা অনেকে ইতিপূর্বে ইউপিডিএফের কাছে আত্ত্মসমর্পন করেছিল। ইউপিডিএফ বৃহত্তর স্বার্থে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু কিছু দিন পর তারা আবার তাদের আগের পেশায় অর্থা জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কাজে ফিরে যায়। এ দেখে একজন মন্তব্য করে বলেন, যে কুগুরোর লেজ বেঙা, চুমোত ভোরেলেয়্য উজু ন অয়। অর্থা কয়লা ধুলেও যায় না ময়লা। সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের আক্কেল বা চরিত্রেরও কোন পরিবর্তন হবে না বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, যে জাতির জনগণ দালাল, সুবিধাবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের শায়েস্তা করতে পারে না, তারা কখনোই নিজেদের অধিকার অর্জন করতে পারে না।
 

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More