চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন জুম্ম শিক্ষার্থীদের গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত

0

চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের উদ্যোগে ২২-২৩ সেশনের নবীন জুম্ম শিক্ষার্থীদের গেট টুগেদার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর ২০২৩) বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফার্মেসি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বিশ্বান্তর চাকমা। সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ চাকমার সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য ও নবীনদের উদ্দেশ্য শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করেন সুদর্শন চাকমা। নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল ও বই উপহার দিয়ে বরণ করে নেন ক্যাম্পাসের সিনিয়র শিক্ষার্থীবৃন্দ।

অনুষ্ঠোনে নবীনদের উদ্দেশ্য দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের চবি শাখার সহ-সভাপতি নুসাইমং মারমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি পাবেল ত্রিপুরা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক জশদ জাকির, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা প্রমুখ। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চবি শাখার সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া।

শুভেচ্ছা বার্তায় সুদর্শন চাকমা বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা ও শত বাঁধার পাহাড় পেরিয়ে আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পেছনে আপনাদের সংগ্রাম ছিল। মেধার জোর ছিল। সেদিক থেকে আপনারা সবাই অসাধারণ।বিশ্ববিদ্যালয়ের  বিস্তৃতি অসীম।কলেজের গন্ডি যদি পুকুরের মতো হয়,তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় গন্ডি সমুদ্রের মত। এখান থেকে আপনি ঝিনুক,মুক্তা ও নানা ধরনের দুর্লভ জিনিস সংগ্রহ করতে পারবেন। ঠিক তার অনুরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে বিকাশ করার জন্য নানা ধরনের শর্ত রয়েছে। নানান জ্ঞান সমুদ্রে ঝিনুক,মুক্তার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।সেসব জ্ঞান কুড়ানোর দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে। একবিংশ শতাব্দী তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ।এ প্রতিযোগিতামূলক যুগে শিকড়ের চেতনা বুকে ধারণ করে ঠিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি জ্ঞান ও নিজেকে দক্ষ করে নিতে হবে।

টিএসএফ’র চবি শাখার সভাপতি পাভেল ত্রিপুরা বক্তব্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো-মন্দ দু’টি পাওয়া যায়।আপনাদেরকে নির্বাচন করতে হবে আপনারা কোনটা বেছে নিবেন। ভালো সাথে থাকলে হলে আপনাদেরকে পড়াশোনা ও তার পাশাপাশি কো-কারিকুলার এক্টিভিটি মধ্যে থাকতে হবে।আর মন্দ জিনিস নিতে চাইলে আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনা আপনি মন্দ জিনিস গুলো আপনার কাছে ধরা দিবে।

বিএমএসসি’র চবি শাখার সহ-সভাপতি নুসাইমং মার্মা বলেন, আমাদেরকে বেশি বেশি করে বই পড়তে হবে। বই পড়লে জ্ঞান বাড়বে। জ্ঞান বাড়লে অজ্ঞতা দূর হবে।অজ্ঞতা দূর হলে আমরা নিজেকে চিনতে ও জানতে পারবো। পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের সমাজ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে।পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। কারণ একজন পাহাড়ি  শিক্ষার্থী হিসেবে সেটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মধ্যে পড়ে।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী’র চবি শাখার সংগঠক জশদ জাকির তার বক্তব্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা  রাখতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কেন এসেছি?একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমাদের দায়বদ্ধতা ও কতর্ব্য কি সেগুলো জানতে ও বুঝতে হবে। সময়ের ধর্ম গতিময়তা।এই ধর্মে কেউ প্রবীণ হয় কেউবা নবীন। তবে আমি আপনাদেরকে চিরনবীন বলতে চাই। যারা চিরনবীন তারাই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। সৃষ্টিক্ষমতা তাদের হাতে ধরা দেয়।

বৃহত্তর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা বলেন,”বুদ্ধ বলেছেন, এসো,দেখো,যাচাই-বাছাই করো। ঠিক তার অনুরূপ আপনাদেরকে যাচাই বাচাইয়ের মধ্য দিয়ে সত্যকে গ্রহণ করতে হবে। ছাত্র হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়বদ্ধতার ও কতর্ব্য রয়েছে।শুধু একাডেমিক পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে একজন শিক্ষার্থী পঠনপাঠনের সফলতা বলা যায় না। একজন সচেতন শিক্ষার্থী পারিপার্শ্বিকতা পরিস্থিতি নিয়ে দৃষ্টি রাখে।সমাজ তাকে ভাবায়।

সভাপতি বিশ্বান্তর চাকমা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের একটি সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীদের ভাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংগঠনের সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রোগ্রামের কার্যক্রম রয়েছে।এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম অঞ্চলগুলোতে  শিক্ষা ক্যাম্পেইন, ক্যাম্পাসে বিনামূল্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং প্রোগ্রাম পরিচালনা, উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার আশা করে, নবীনরা জ্ঞানে-মননে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বুনোফুলের ন্যায় সারাবিশ্বে সুভাষ ছড়িয়ে দিবে।

বক্তব্য শেষে নবীনদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করেন ক্যারোলিনা চাকমা, মাইখ্যাইনচিং মার্মা, তিষ্য চাকমা, তংওয়াই ম্রো, ভাগ্য কুমার ত্রিপুরা এবং বিপুল চাকমা।

আলোচনা সভা শেষে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কালচারাল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। পিট সিগারের “আমরা করব জয়” গানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More