চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম ।। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো সম্প্রদায়ের জমি দখল করে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
আজ বুধবার (১৮ নভেম্বর ২০২০) বিকাল ৪টায় নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা মিটন চাকমা’র সভাপতিত্বে এবং রোনাল চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা) সভাপতি উথোয়াই মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (নগর শাখা) প্রচার সম্পাদক কাজী আরমান, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন বিভাগীয় সমন্বয়ক কাজী শফিকুল ইসলাম রাব্বি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (চবি শাখা) সাধারণ সম্পাদক সায়মা আক্তার নিশু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) নগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপা মজুমদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা তিতাস চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখার সভাপতি রায়হান, জাতীয় মিু্ক্ত কাউন্সিল (পূর্ব-৩, চট্টগ্রাম অঞ্চল) সদস্য সচিব এ্যডভোকেট আমির আব্বাস তাপু, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রাম সদস্য সচিব ডাঃ সুশান্ত বড়ুয়া।
সমাবেশে আরো সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাঈদুল ইসলাম।
সমাবেশে ডাঃ সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, চিম্বুক পাহাড়ে শিকদার গ্রুপ ও সেনা কল্যান সংস্থা ম্রো জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের মুখে ঠেলে দিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে। সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ খুনী শিকদার গ্রুপকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে সেনাবাহিনী খুনী শিকদার গ্রুপের সাথে হাত মিলিয়ে পুরো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে নিজেরাই সন্ত্রাসবাদ জিইয়ে রেখেছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (চবি শাখা) নেত্রী সায়মা আক্তার নিশু বলেন-“পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ পাহাড়িকে যে উচ্ছেদের চক্রান্ত শুরু হয়েছিল তা স্বাধীন বাংলাদেশে এসেও চলমান রয়েছে। যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মহান ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে সে সেনাবাহিনী আজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তারা আজ সাজেকের লুসাইদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে পর্যটন তৈরী করেছে এবং বিতর্কিত শিকদার গ্রুপের সাথে মিলে বান্দরবান চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের দ্বারা সেখানকার ম্রো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। সেনাবাহিনীর এর চেয়ে লজ্জাকর বিষয় আর হতে পারে না।
বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা তিতাস চাকমা বলেন, সারা দেশব্যপী যখন ম্রো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে এবং পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে তখনই গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ম্রো জনগোষ্ঠীদের বিভিন্ন হুমকি, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে “মানববন্ধনের” নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তারা পর্যটনের নামে ম্রো জনগোষ্ঠীর ভূমি দখলের চক্রান্ত বজায় রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর নেত্রী দীপা মজুমদার বলেন, সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপ মিলে যে জায়গায় পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন নির্মাণ করছে অথচ সেখানে কোনো স্কুল, হাসপাতাল নেই। সেনাবহিনী ও সিকদার গ্রুপের দখলদারিত্ব ও পাহাড়ি নির্মূলের যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি মিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জোরপূর্বক দখল পাহাড়িদের নির্মূলকরণের ষড়যন্ত্রের অংশ। অবিলম্বে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও পযটন নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।”
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চেরাগী মোড় থেকে প্রেস ক্লাব ঘুরে এসে পুনরায় চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে শেষ হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।