জুয়া ক্লাব ও মদের আড্ডার শহর খাগড়াছড়ি : সমাজ অবক্ষয় রুখবে কে?

0
ডেস্ক রিপোর্ট
সিএইচটিনিউজ.কম
[এই রিপোর্টটি সিএইচটি২৪ ডটকমের। এই রিপোর্টে খাগড়াছড়ির শহর এলাকার সামাজিক অবক্ষয়ের একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টটির গুরুত্ব বিবেচনা করে এটি এখানে ছাপানো হলো-সম্পাদক ]

খাগড়াছড়ি: অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খাগড়াছড়ি পরিণত হয়েছে জুয়াক্লাব ও মদের আড্ডার শহরে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও আইনের তোয়াক্কা না করেই এখন দিনরাত এসব ক্লাব-বারে চলে রাতদিন আসর।শান্ত-শ্যামল, উঁচুনিচু পাহাড়ময় মায়াবী এই জনপদ এখন যেন আইন-নীতি-নিয়মবিহীন এক অঞ্চল!

জুয়ার নেশায় জড়াচ্ছে এখন অনেক চাকুরিজীবি, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যক্তি, সমাজের সন্মানিত অনেক ব্যক্তি। সর্বশান্ত হচ্ছে অনেক পরিবার। সামাজিক, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা বাড়ছে গুণীতক হারে। সমাজ যাচ্ছে উচ্ছন্নে। পারিবারিক বন্ধনও যাচ্ছে কমে। পিতার দেখাদেখি ছেলেও শিখছে এসব।এখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে, খাগড়াছড়িতে জুম্ম অবস্থাপন্ন বা অবস্থাসম্পন্ন নয় এমন যেকোন পরিবারের মধ্যে অন্তত একজন যুবককে দেখা যাবে হয় জুয়ায় মত্ত থাকে অথবা পান করে নেশা জাতীয় দ্রব্য বা মদ।

এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সমাজের নারীরা। ঘরে ঘরে সমাজের মা বোন সবাই সাফার করছে এই মদ জুয়ার অতি বৃদ্ধির ফলে।

শহরের কোন দিকে নেই জুয়া ক্লাব বা মদের আসর?

 
উত্তরদিকের আসরের কথা:
উত্তর মাথা-১
শহরের উত্তরে মাহজনপাড়া চেঙ্গিস্কয়ারের পাশে সবচেয়ে পুরাতন অভিজাত জুয়া মদের ক্লাব, নাম ফ্রেন্ডস ক্লাব। এই ক্লাবে এখনো চলে মদ আর জুয়ার আসর। এখানে সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সিভিল কর্মকর্তারাও জুয়া খেলতে আসতো, আসতো মদ খেতে। এবং এখনো তার ব্যত্যয় যে বেশি হয়েছে তা বলা যাবে না।  এই ক্লাবকে খাগড়াছড়ির উচ্ছিষ্ট ক্ষমতা ভাগাভাগির মন্ত্রণাস্থলও বলে অনেকে মনে করে থাকেন। এই আসরে যে কারোর প্রবেশের অনুমতি নেই। অনুমতি পেতে একজন সদস্যকে নানা যোগ্যতাও অর্জন করতে হয় বলে লোকমুখে শ্রুত।এখান থেকেই জেলা পরিষদের ক্ষমতায় কে যাবে তা নিয়ে তদবির চলে বলে জানা যায়। এখান থেকেই অনেক ক্ষেত্রে ভাগাভাগি হয়ে যায় ঠিকাদারী বাণিজ্য।

এই ক্লাবে ওল্ড জেনারেশনের লোকজনরেই যাতায়াত।

উত্তর মাথা-২

মাহজনপাড়া পথের পশ্চিমদিকে গলিপথে ঢুকে হাতের ডান দিকে রয়েছে একটি পুকুর। তার পাশে রয়েছে জেলা পরিষদের বর্তমান সদস্য অটলবাবুর অট্টালিকা। ঠিক তার পাশেই গড়ে উঠেছে নতুন এক জুয়া-মদের ক্লাব। এই ক্লাবে যাতায়াত করে থাকে ইয়ং জেনারেশনের মানুষজন। উঠতি নতুন জেনারেশনের ডজনকে ডজন যুবক এই ক্লাবে নিত্য আসা যাওয়া করে এবং সময় কাটানোর ছলে চলে জুয়া।উত্তর মাথা-৩

খাগড়াছড়ি বাজার থেকে বেশি দূরে নয়, এলাকার নাম নারিকেল বাগান। নারিকেল বাগানের অবসর ভবনের পাশেই রযেছে আরেকটি জুয়ার আড্ডা।
পূর্বদিকের আসরের কথা:
 
পূর্ব মাথা-১
ভাঙাব্রিজের পাশে ঠিকাদার ভবনের কাছে রয়েছে আরেকটি জুয়ার আড্ডাখান। এখানেও চলে রাতদিন জুয়া এবং আড্ডা! দুইশত গজের মধ্যেই রয়েছে জেলা প্রশাসনের অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও উপজেলা থানা সদর কার্যালয়। কিন্তু পথের পাশের এই আসরের দিকটি বোধকরি বেখেয়ালেই থেকে যায় আইনরক্ষাকর্তাদের কাছে!ভূলেও সেখানে মাড়া পড়ে না কোনো আইন বিধানকর্তাদের!পূর্ব মাথা-২

প্রখ্যাত খাবার ঘর সিস্টেম। পানখাইয়াপাড়ার ভেতর। তার পাশেই সাম্প্রতিককালে গড়ে উঠেছে নতুন এক টিনের চাল দেয়া বাসায় জুয়ার আড্ডাস্থল।দক্ষিণ দিকের আসরের কথা:

দক্ষিণ মাথা-১
আপার পেরাছড়ায় এক গামারি বাগানের নিচে বসে জুয়া খেলার আসর। এই আসরে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে জুয়াড়ীরা আসে জুয়া খেলায় অংশ নিতে। তাদের প্রায় সবাই আসে মটর সাইকেল করে।দক্ষিণ মাথা-২

একসময় আপার পেরাছড়ার অন্য স্থানেও চলতো জুয়ার আসর। পরে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ-অনুযোগের জন্য তা এখন আপাতত বন্ধ আছে বলে জানা গেছে।পশ্চিম দিকের আসরের কথা:

পশ্চিম দিকে যে এলাকা মদ-জুয়ার আসরের জন্য বিখ্যাত তার নাম গঞ্জপাড়া। এই এলাকায়ও অবাধে চলে এইসব আসরের।এসব বিখ্যাত আড্ডাস্থল বা ক্লাব বাদেও খাগড়াছড়ি শহরের নানাস্থানে রয়েছে অস্থায়ী আসর।

প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ কি দেখে বা দেখেও দেখে না!?

প্রশাসন কেন এসকল অবৈধ সমাজ উচ্ছন্নে যাবার কার্যকলাপের দিকে চোখ দেয় না তা একমাত্র প্রশাসনই ভালো জানে বলেই মনে হয়!জুম্ম সমাজের অভিভাবক সংগঠন বলতে আমরা যাদের বুঝি তারাও নিচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।

এটাই হচ্ছে খাগড়াছড়ির বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতি ! উচ্ছন্নে যাচ্ছে সমাজের অগ্রগতি। সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়ের।

কে রুখবে এই সামাজিক অবক্ষয়? কার দায়িত্ব এই অবক্ষয় রোধ করার? সমাজ যদি এভাবে উচ্ছন্নে যায় তবে কী করা যাবে এই পচন ধরা সমাজকে নিয়ে?
 
সূত্র: সিএইচটি২৪ ডটকম

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More