টেকনাফ ও উখিয়া থানায় জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের কমিটি গঠিত
সিএইচটিনিউজ.কম
“নিজস্ব ভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা ও বাঁচার তাগিদে পাহাড় এবং সমতলের নিপীড়িত জনগণ ঐক্যবদ্ধ হোন” এই শ্লোগানে জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ-এর কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া থানা দক্ষিণাঞ্চল কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ ১৫ অক্টোবর বুধবার বেলা ১.১৫টায় টেকনাফের হরিখোলায় টেকনাফ ও উখিয়ায় বসবাসরত চাকমা জাতিসত্তা লোকদের নিয়ে এক সম্মেলনের মাধ্যমে ৩৫ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে নিমং চাকমাকে সভাপতি, মনিস্বপন চাকমাকে সাধারন সম্পাদক ও সুজিত চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মনি স্বপন চাকমার সভাপতিত্বে এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য শুভ চাক এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পরিষদের সদস্য থুইক্যচিং মারমা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন তেলখোলা এলাকার কার্বারী মংপু অং চাকমা, মাদার বুনিয়া এলাকার প্রতিনিধি অংপ্রু থোয়াই চাকমা ও অমল কন্তি চাকমা, আমতলী পাড়া এলাকার প্রতিনিধি সুজিতা চাকমা ও থোয়াইনি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পরিষদের সদস্য অংগ্য মারমা, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পরিষদের আঞ্চলিক সাংগঠনিক সম্পাদক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা। সম্মেলনে টেকনাফ ও উখিয়া থানার ১২টি বিটের নেতৃবৃন্দসহ এলাকার শতধিক ছাত্র-যুব-জনতা উপস্থিত ছিলেন।
থুইক্যচিং মারমা বলেন, আওয়ামী সরকার ২০১১ সালে ৩০ জুন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সমতলের ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতি সমুহের মতকে তোয়াক্কা না করে তাদের উপর উগ্রবাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে। আজ তাই আমাদের পাহাড় ও সমতলে জাতিসমুহকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করে সরকারকে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করতে বাধ্য করতে হবে। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারীতে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এক এক করে কালা কানুন বানিয়ে বাকশাল কায়েম করেতে চাচ্ছে। সরকার সম্প্রচার নীতিমালা করে টিভি ও সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও অনুগত বিটিভি বানাতে চাচ্ছে।
উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার ১২টি বিটের প্রতিনিধিরা এলকার ভাষা, সংস্কৃতি, ভূমি বেদখলের সমস্যা বিষয়ে আলোচনা করেন এবং এই সব সমস্যার আলোকে সংগঠনের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন ।
অংগ্য মারমা বলেন, সরকার যে নির্বাচন এর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে তা অবৈধ। কারণ যে দেশে নির্বাচনে ১৫৪ জন সাংসদ বিনা নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১০ শতাংশের অধিক ভোটার ভোট কেন্দ্রে যায়নি, তাহলে এই নির্বাচন কিভাবে বৈধ হলো। আজ এই ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নতুন নতুন আইন এবং সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি তাদের সাংবিধানকে মান্য করে না। তাই দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে তাদের অধিকার নিশ্চিতসহ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান গঠনে এক যোগে আন্দোলন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
জাতীয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব বাঙ্গালীতে প্রমোশন দিয়ে জাতি সমূহকে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক বানিয়েছিলেন। তার মেয়ে শেখ হাসিনা তার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আবোরো একই নীতির প্রমাণ করলেন। তাই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতির অধিকার দেয়ার দল নয়। তারা শাসক দল, আমাদের শাসন শোষন করাই তাদের কাজ। কিন্তু আমারা কতদিন এই শাসন শোষণের ভিতরে থাকতো তা হচ্ছে মুল প্রশ্ন। তাই আমাদেরকে ভাবতে হবে এই শাসন শোষণ থেকে কিভাবে মুক্ত হতে হবে। আজ আমাদেরকে সারা বাংলাদেশে বসবাস করা সকল সংখ্যালঘু জাতিকে এক করতে হবে এবং জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে গণআন্দোলন পরিচালনা করতে হবে।
ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রী সদস্য নতুন কুমার চাকমা বলেন, বাঙ্গালী বৃহৎ জাতির লোকেরা আজ আমাদেরকে অধিকার বঞ্চিত করে রেখেছে। তারা আমাদেরকে উগ্রবাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভাষা, সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করে দিতে চায়। পাকিস্তানী কায়দায় তারা আমাদের পাহাড়ি ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতির দানব হিসাবে আবির্ভুত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসন শোষণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাঙ্গালী জাতিসত্তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করে দেশকে মুক্ত করেছিলো ঠিকই কিন্তু অধিকারের প্রশ্ন সরকার পাকিস্তানীদের পদাঙ্ক অনুসরন করে চলেছে।
তিনি বলেন, “যে জাতি অন্য জাতি ও জনগণের উপর শোষন-নিপীড়ন করে সে জাতিভুক্ত জনগণ নিজেরাও স্বাধীন নয়” আওয়ামী, বিএনপি, জামাত জাতীয় পার্টি আমাদেরকে শাসন শোষন করেছে ঠিকই আবার অন্য বৃহৎ পুঁজর কাছে তারাও স্বাধীন নয়। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আাপনাদেরকে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সংগঠন ও আন্দোলন ছাড়া আমরা টিকতে পারবো না।
সকাল ১১টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন শুরু করা সম্ভব হয়নি। সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যের আগে জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা নিমং চাকমাকে সভাপতি, মনি স্বপন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক সুজিত চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১১ সদস্যের কার্যকরী কমিটিসহ মোট ৩৫ সদস্যের টেকনাফ ও উখিয়া থানা দক্ষিণাঞ্চল কমিটির প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে করতালীর মাধ্যমে কমিটিকে পাশ করে নেওয়া হয়।
জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পরিষদ সদস্য অংগ্য মারমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সম্মেলনের বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।