ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৩য় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন সম্পন্ন

0

ঢাকা : ‘‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে সকল স্তরের নেতা-কর্মীগণ রাজনৈতিক মান, দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধিতে অধিকতর সচেষ্ট হোন’’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার মুক্তি ভবনে ১২ – ১৩ মে ২০১৭ দুইদিন ব্যাপী গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৩য় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন আজ শনিবার শেষ হয়েছে।

IMG_20170512_103710

গতকাল ১২ মে ২০১৭, শুক্রবার সকাল ৯.১৫ টায় দলীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠান শুরুর আগে শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরা, সুপ্রীম চাকমা ও সেনা নির্যাতনের শিকার হয়ে পিসিপি’র সহযোদ্ধা রমেল চাকমাসহ যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে সংগ্রামে আত্মবলীদান করেছেন তাদের সকলের উদ্দেশ্যে সম্মান জানিয়ে  দাঁড়িয়ে ২ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ ঢাকা ইউনিটের সংগঠক মিল্টন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা এবং সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড এর সদস্য এন লাবা চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা।

সম্মেলনে বিনয়ন চাকমা বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিরোধ করে প্রগতিশীল শক্তি বিকাশ লাভ করে। ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে সংগঠিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।IMG_20170512_104118

নিরূপা চাকমা বলেন, সেনা-শাসক গোষ্ঠী তাদের নিজেদের শাসন শোষন টিকিয়ে রাখার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে গোপন সার্কুলার জারি করে চলেছে। শাসক গোষ্ঠীর সকল অন্যায় নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

কাজলী ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের যুব সমাজ সেনা-সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মদ, হেরোইন, গাজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামকে এই বিষয়ে কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে।

ইউপিডিএফ ঢাকা ইউনিটের সংগঠক মিল্টন চাকমা বলেন, শাসন শোষণ চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বর্তমান সরকার অবৈধ সরকার। অবৈধ সরকার হওয়াতে সরকার ফ্যাসিষ্ট কায়দায় শাসন শোষণ চালাচ্ছে। জাতিসত্তাসমূহের বেচেঁ থাকার একমাত্র সনদ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের অধিকার কায়েম না হওয়া পর্যন্ত যুব সমাজকে আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অংগ্য মারমা বলেন, সরকার-সেনা শাসকগোষ্ঠীর ভিতরে পাকিস্তানপন্থীদের ঘাঁটি গাড়তে দেখা যাচ্ছে। তারাই পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমতলের সংখ্যালঘু ও নিপীড়িত জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি কোন দলই সংখ্যালঘু বান্ধব নয় উল্লেখ করে বলেন, তাদের বর্তমান  ও অতীতের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে দেশের সংখ্যালঘু জনগণ নিরাপদ মনে করেন না।

IMG_20170512_103451

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ সেনা-শাসকগোষ্ঠীর চরম নির্যাতনের কারাগারে পরিণত হয়েছে। সমাবেশ থেকে মিথ্যা মামলায় আটককৃত ইউপিডিএফ ও গণসংগঠনের কর্মীদের নিঃশর্তে মুক্তিসহ সারা দেশে মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

দুইদিন ব্যাপী প্রতিনিধি সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট ও অর্থ সম্পাদক তার আর্থিক রিপোর্ট পেশ করেন। রির্পোট পেশ-এর পর হাউজে সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, সংযোজন, বিয়োজন করার পর করতালির মাধ্যমে পাশ করে নেওয়া হয়।

সম্মেলন থেকে সাম্প্রতিক সময়ে নান্যাচর জোনের সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক ও অমানুষিক নির্যাতনে জখম হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নান্যাচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমার মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত নান্যাচর জোন কমান্ডার বাহালুল আলম  ও মেজর তানভীরকে প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ নিহত রমেল পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়।

প্রতিনিধি সম্মেলন থেকে আগামী ৩০ জুন সংবিধানের বিতর্কীত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, ১৭ নভেম্বর রুশ বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে যুব সমাবেশ ও আলোচনা সভা এবং মে মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ মাসের সাংগঠনিক সফরের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলাসহ, চট্টগ্রাম,  মিরসরাই, ঢাকা অঞ্চল থেকে ১৩৮ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন। 

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More