ঢাকায় ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন উদ্বোধন

0
  •  শাসক শ্রেণীর নিকৃষ্ট অংশ শাসন করছে, প্রতিরোধ সংগ্রাম নেই বলে সরকার টিকে আছে-বদরুদ্দীন উমর
    [divider style="solid" top="" bottom=""]

ঢাকা রিপোর্টার : ‘জেগে ওঠো, রুখে দাঁড়াও’ এই আহ্বানে আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সেমিনার হলরুমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন উদ্বোধন করেছেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর। অধিবেশন আগামী কাল ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে অনুুষ্ঠিত কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা,  বৃহত্তর সিলেট চা-জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্ট-এর সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবীর,বাসদ মার্ক্সবাদী সদস্য মানস নন্দী, পিসিপি’র সভাপতি বিনয়ন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা, সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক ফয়সাল মাহমুদ, প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি ক্যঅং মারমা, ল্যাম্পপোস্টের এম.এন. হাওলাদার, লেখক শিবিরের দীপা মল্লিক, সিলেট চা-জনগোষ্ঠী ছাত্র-যুব কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুজিত বাড়াইক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সভাপতি জিলানী শুভ, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও প্রবাসী শ্রমজীবী ফ্রন্টের সভাপতি প্রমোদ জ্যোতি চাকমা।

এছাড়া কনভেনশনে উপস্থিত থেকে সংহতি জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টে ইমরান হাবিব রুমন।

কনভেনশনে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা, কক্সবাজার, উখিয়া থেকে বিভিন্ন জাতিসত্তা, ছাত্র-যুব-শ্রমিক ও নারী সংগঠনের পৌনে চার শতাধিক প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী ভাষণে বদরুদ্দীন উমর কনভেনশনে উত্থাপিত ‘রাজনৈতিক প্রস্তাবনা’কে আশাব্যঞ্জক মন্তব্য করে বলেন, শাসক শ্রেণীর একটা নিকৃষ্ট অংশ দেশে শাসন-শোষণ চালাচ্ছে। তাদের টিকে থাকার কারণ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না থাকা। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন তারা চায় না, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পক্ষে ২০টি আসন পাওয়াও মুশকিল হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশে যেসব সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলো রয়েছে, তারা সবাই রাষ্ট্র কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছে। রাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে মিলিত সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আওয়ামী লীগের কিছু নেতার কথাবার্তা ও আচরণের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগ মানেই অসভ্য, অশ্লীল। এদের সাংস্কৃতি মানটা খুবই নীচু। যারা অসভ্য, অশ্লীল কথা বলতে পারবে তারাই আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আওয়ামীলীগকে তিনি ফ্যাসিস্ট ক্রিমিনাল আখ্যায়িত করে আরও বলেন, জনগণের ওপর নির্যাতন করতে করতে তারা একদলীয় শাসনের দিকে চলে যায় এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সংকটে পতিত হয়। শেখ মুজিবের পতন হবার কারণও ছিল ফ্যাসিস্ট শাসনের ফলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া।

বিশিষ্ট চিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক কনভেনশনে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাবনা ও দাবির সাথে একমত পোষণ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সংগ্রাম চলছে, তা গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাঙালি জাতি সংখ্যা অনেক হলেও প্রগতিশীল চিন্তা করে এমন লোকের সংখ্যা কম। তার বিপরীতে আপনাদের সংগ্রামের চিত্র দেখে আমি অনেক আনন্দিত হই।

সিলেটের চা জনগোষ্ঠী নেতা পরিমল সিং বাড়াইক কনভেনশনে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে মন্তব্য করে বলেন, দাবি-দাওয়া শুধু কাগজে-কলমে নয়, তা বাস্তবায়ন করতে হলে কাজ করতে হবে।

সচিব চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনাশাসন চলছে উল্লেখ করে বলেন, সেখানে রাস্তায় বেরুনো যায় না, চা দোকানে বসে চা খাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মিঠুন চাকমাসহ অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এখনো ইউপিডিএফ’র ৩৫ জনের অধিক জেলে বন্দী অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, মাঠে গিয়ে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের সাথে কাজ করতে হবে। তাদের সংগঠিত করতে হবে। তারপরই এই কনভেশন সফল হবে।
তিনি অন্যায় শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠার জন্য ছাত্র-যুব-নারী সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

ফয়জুল হাকিম বলেন, ১৯৭১সালে যে রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে এই রাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারেনি। বর্তমানে এই দেশে একটি অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
তিনি বলেন, যে সংবিধান শ্রমিক, কৃষক ও নিপীড়িত মানুষের অধিকার রক্ষা করে না, সে সংবিধান আমরা চাই না, জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধানই কায়েম করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নিজেদের ক্ষুদ্র ভাবলে চলবে না, আসলে শাসকচক্রই হচ্ছে ক্ষুদ্র আর জনগণের শক্তিই হচ্ছে বৃহৎ শক্তি। এই শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মিঠুন চাকমা হত্যার মদদদাতাদের উচ্ছেদ করতে হবে এবং ফ্যাসিবাদী হাতকে ভেঙ্গে দিতে হবে।

সুজিত বাড়াইক বলেন, পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিগুলো নানাভাবে পিছিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে চা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন দিক অবহেলিত। বর্তমানে মধ্য আয়ের দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রচার করা হলেও একজন চা শ্রমিকের বেদন দৈনিক মাত্র ৮৫ টাকা।

তিনি বলেন, চা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভূমির কোন অধিকার নেই। মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। চা জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য যে সুবিধা দেয়ৈার কথা তা আদৌ দেয়া হয় না। ভূমি খেকোরা সংখ্যালঘু জাতিগুলোর জমি কেড়ে নিচ্ছে, উচ্ছেদ করছে। ফলে বাংলাদেশে বসবাস করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ছাত্র-যুব-নারীরা যদি আন্দোলনে না নামি তাহলে ভবিষ্যতে এদেশে সংখ্যালঘুদের বসবাস করা কঠিন হবে। পাহাড়-সমতলে সংখ্যালঘু জাতির উপর যে নিপীড়ন নির্যাতন চলছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে হবে।

ইকবাল কবির, কনভেনশনের রাজনৈতিক প্রস্তাবনার সাথে একমত পোষণ করে পাহাড়ে বসবাসকারী জনগণের স্বশাসনের জন্য চলমান লড়াইকে সমর্থন জানান।
তিনি বলেন শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি ও নিপীড়িত মানুষের ঐক্যের একটা জায়গা ছিল, এখনো আছে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী সব সময় যেটা করতে চায় সেটা হচ্ছে মানুষকে বিভক্ত করে রাখা।
৫২ সালের ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই আন্দোলন ছিল রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন। কিন্তু এ আন্দোলনকে এখন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে করে অন্যান্য ভাষাগত সংস্কৃতিকে দাবিয়ে রেখে বাংলাভাষাকে বড় করে দেখা হচ্ছে।
তিনি সকল জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের স্বীকৃতি দেয়া ও তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় পড়ার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানান।

জিলানি শুভ বলেন, আমরা যে রাষ্ট্রটিতে বসবাস করছি সেটা শুধুমাত্র বাঙ্গালীদের রাষ্ট্র নয়। এ রাষ্ট্রটি একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘৭১ সালের পরপরই রাষ্ট্র তার রূপ পরিবর্তন করেছে। পুঁজিবাদী শাসকরা রাষ্ট্রটিকে কারাগারে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন ভূমি লিজ দেয়া যাবে না এবং কল্পনা চাকমা অপহরণ ও দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

দীপা মল্লিক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড় এবং সমতলে নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে ধারাবাহিকভাবে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের সাথে ধর্ষণ, গুম, হত্যা  অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র যারা চালাচ্ছে তারা সেনাবাহিনীকে দিয়ে নারীদের ধর্ষণ করছে, রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করছে। মিঠুন চাকমাকে হত্যার পেছনে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রই জড়িত রয়েছে।
তিনি নারীদেরকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছাত্র-যুবকদের সাথে নারীদেরকেও ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সংগঠি হতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।

এমএম হাওলাদার বলেন, বিলাইছড়িতে দুই বোনকে ধর্ষণ ও নির্যাতন, রাণী ইয়েন ইয়েন’র ওপর হামলাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত নানা নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন রাঙামাটির দু’বোনকে যৌন নির্যাতনের দায় যদি গোটা সেনাবাহিনী নিতে না চায় তাহলে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে রাণী ইয়েন ইয়েন কাছে সেনাপ্রধানকে ক্ষমা চাইতে হবে।

ফয়সাল মাহমুদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। রমেল চাকমা, মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছাড়া কিছুই নয়।
এই রাষ্ট্র কোনভাবেই শ্রমিক, কৃষক ও নিপীড়িত মানুষের রাষ্ট্র হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সীমা দত্ত বলেন, সাম্প্রতিক রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা সারা দেশে গণতান্ত্রিকমনা মানুষকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কি ধরনের ফ্যাসিস্ট শাসনে আমরা শাসিত হচ্ছি।
চাকমা রাণীকে সরকারের সেনা-পুলিশ আঘাত করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যা চলছে তা বীভৎস ও নির্মম। সেখানে একটি অমানবিক শাসন সেখানে জারি রাখা হয়েছে। আমরা জানি না, শাসনের নামে সেখানে কেন সেনাবাহিনীকে রাখা হয়েছে।

মানস নন্দী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটছে দেশের প্রগতিশীল কোন রাজনৈতিক কর্মী তা মেনে নিতে পারে না। এমন ঘটনায় শিহরিত না হয়ে পারা যায় না।
তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে প্রকৃত সমাধান না করে একটা চুক্তি করেছে। যা বর্তমানে অকার্যকর করে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিনয়ন চাকমা  বলেন, এমন সময় এই কনভেনশন আয়োজন করা হয়েছে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতাদের খুন করা হচ্ছে। গোটা দেশে যেভাবে ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই মাত্রা অনেক ভয়াবহ।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলাফেরার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কখন জানি তল্লাশি, ধরপাকড় হতে হতে হয়, কখন মেরে আধমরা করে রাখা হয় তার কোন নিশ্চয়তা নেই। শান্তিতে ঘুমানোর পরিস্থিতি পর্যন্ত নেই।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে প্রমোশন বাণিজ্য চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। ১১ নির্দেশনার মাধ্যমে সেনাশাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
তিনি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন তোলার আহ্বান জানান।

নিরূপা চাকমা বলেন, সারাদেশে যে নিপীড়ন চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে এর মাত্রা বেশি। সেখানে সেনা-পুলিশ-বিজিবি-ই নির্যাতন জারি রেখেছে।
তিনি নিপীড়িত সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

কনভেনশনে চাকমা সার্কেলের রাণীকে হেনস্থা করার জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাওয়া, একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে সংসদ ভেঙে দেয়া, রাজনৈতিক কারণে আটকদের মুক্তি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র পরিবেশের স্বার্থে বাতিল করার আহ্বান সম্বলিত সাতটি প্রস্তাবনা ও দাবিনামা উত্থাপন করা হয়েছে।

কনভেনশনের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বিভিন্ন প্রান্তে যে সকল রাজনৈতিক কর্মী সরকারি বাহিনী ও দুর্বৃত্তদের হাতে শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি সম্মান জানানো হয়। প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড উদ্বোধন সঙ্গীত ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ পরিবেশন করে। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে বিশাল র‌্যালি সেগুন বাগিচা হয়ে প্রেস ক্লাব ঘুরে আসে।
—–

কনভেনশনে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাবনা ও দাবিনামা  নীচে হুবহু তলে ধরা হলো:

ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশনের রাজনৈতিক প্রস্তাবনা ও দাবিনামা
২২-২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, ঢাকা

যুবশক্তি জেগে ওঠো, রুখে দাঁড়াও!
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ন্যায়সঙ্গত

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মেরুকরণ এমন এক আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ’ কথাটি শুধু প্রবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে সর্বত্র। ক্ষমতাসীন শাসকচক্র ও তাদের বশংবদদের জন্য এখন বাস্তবিকই পৌষ মাস! প্রশ্নপত্র ফাঁস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরূপ, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ-বিদেশে পাচার, লুটপাট, ভূমি-চর বেদখল-পাহাড় কেটে ব্যবসা, লাইসেন্স-পারমিট-ঘুষ-দুর্নীতি-টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি মোটকথা ক্ষমতাসীন শাসকচক্র সমস্ত রকমের দুর্নীতি ও অনিয়মের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। আর সর্বনাশ হচ্ছে সাধারণ জনগণের, আইন-আদালত, শিক্ষা, চিকিৎসা সর্বক্ষেত্রে চলছে এক নৈরাজ্যকর অবস্থা। বিশেষ করে ভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের অবস্থা সবচে’ করুণ, এক কথায় মর্মান্তিক। তাদের জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। সংবিধানে ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতি ও সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি নেই। বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে ‘বাঙালি জাতীয়তা’ জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালি, রংপুর-দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া-কক্সবাজার-টেকনাফ– যেখানে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের বসবাস রয়েছে, তারা আতঙ্কগ্রস্ত, সন্ত্রস্থ। পৈতৃক বাস্তুভিটা, বংশপরম্পরার জায়গা-জমি হারিয়ে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও তারা উচ্ছেদ হচ্ছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই থেকে বিতাড়িত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে দিন দিন। শুধু বসতবাড়িই নয়, তাদের মন্দির-কিয়্যঙ উপসনালয়ও হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হচ্ছে। রামু-কক্সবাজার-পটিয়া-চন্দনাইশ-ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর-গোবিন্দগঞ্জ-রংপুর, রাঙ্গামাটির সাজেক (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০)- লংগুদু (২ জুন ২০১৭), খাগড়াছড়ির তাইন্দ্যং ও রামগড়…সবক্ষেত্রে ঘটনার চিত্র কমবেশী একই। এসব হামলায় জামাত-শিবির-বিএনপি’র লোকজনকে দায়ী করা হলেও ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের লোকজনের যোগসাজশও গোপন ব্যাপার নয়। এসব হামলার ক্ষেত্রে জামাত-বিএনপি-আওয়ামীলীগ সব দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রায় ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন-আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা দুর্বৃত্তদের হামলা ও লুটপাটে আরও বেশী প্ররোচিত করেছে। গোবিন্দগঞ্জে পুলিশই সান্তাল পল্লীতে অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার সাযুজ্য দেখা যায় রাঙ্গামাটির বগাছড়িতে, এখানে সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে জওয়ানরা পাহাড়িদের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে, সেটলারদের বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও লুটপাটে প্ররোচনা দেয়। ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদ্যাপনকালে।

সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন জারি থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরও গুরুতর। অযৌক্তিক সেনা মোতায়েনের সাথে ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত ‘১১দফা নির্দেশনা’ জারি থাকার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত ফৌজি শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি চাই, মানুষ নয়’ আশির দশকে উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের ঘোষিত এই এথনিক ক্লিনজিং নীতি এখনও বলবৎ রয়েছে এবং দিন দিন তা জোরদার হচ্ছে, বিভিন্ন ঘটনা থেকে তা প্রমাণিত হয়। সেটলারদের দিয়ে রামগড়-তাইন্দ্যং-এর মতো ঘটনা ঘটিয়ে পাহাড়িদের বাস্তুভিটা বেদখলে প্ররোচনাদান, অব্যাহতভাবে সেনা ক্যাম্প নির্মাণ-সম্প্রসারণ, রাবার বাগান, চা বাগান–নানা প্রকল্পের নামে জমি অধিগ্রহণ চলছে। এখনও সাধনা টিলায় বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় সেটেলার বসানোর অপচেষ্টা চলছে।

অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেফতার, অন্যায়ভাবে ধরপাকড়, রাস্তাঘাটে কারণে-অকারণে তল্লাশি, পাড়া-গ্রামে নিরাপত্তার নামে টহল, নিরপরাধ লোকজন ধরে ক্যাম্পে চালান দেয়া, মারধর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তার নামে তল্লাশি ও টহলের উছিলায় সেনা জওয়ানরা পাড়া-গ্রামে ঢুকে যৌন সহিংসতা ঘটিয়ে চলেছে। যার সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো ২১ জানুয়ারি ২০১৮ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ফারুয়া ইউনিয়নের অরাপাড়ায় দুই মারমা সহোদরা সেনা জওয়ান কর্তৃক ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন। রাঙ্গামাটি হাসপাতালে ভিক্টিমদের সহায়তা দিতে গিয়ে চাকমা সার্কেলের রাণী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সেনা-পুলিশের হাতে শারীরিকভাবে চরম নিগৃহীত হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক এক তরুণী সেনা-পুলিশের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হন। চাকমারাণী যদি সেনা জওয়ানের কিল-ঘুষির শিকার হন, হাসপাতালে যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না।

ইতিপূর্বে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করে রাঙ্গামাটির সেনা কর্মকর্তারা। তাকে সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথা মাফিক সৎকার করতে দেয়া হয়নি, তার মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। সাম্প্রতিক কালে সেনাবাহিনীর পাকিস্তানপন্থী চক্রটি পার্বত্য চট্টগ্রামে মুখোশ বাহিনীর মতো সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লেলিয়ে দিয়ে হত্যা-অপহরণ-চাঁদাবাজির এক ধ্বংসাত্মক খেলায় মেতে উঠেছে। জনগণ এদের নাম দিয়েছে ‘নব্য মুখোশবাহিনী’। ইতিমধ্যে নব্য মুখোশবাহিনীর হাতে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুনসহ ৪জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। নিজ বাড়িতে যখন নিরাপত্তা নেই, আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থার লোকেরাই যখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি, এ পরিস্থিতিতে সচেতন দেশপ্রেমিক কারো পক্ষে আর হাত গুটিয়ে নিশ্চুপ থাকা উচিত নয়।

এ অঞ্চলের জনগণ (বাঙালিসহ অন্যান্য জাতিসত্তা) দীর্ঘদিন নিরবে অন্যায় মেনে নেয় নি, তাদের প্রত্যেকের রয়েছে প্রতিবাদ ও সংগ্রামের নিজস্ব ইতিহাস। সান্তাল বিদ্রোহ, সিলেটের খাসি জনগণের ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম এবং ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল বীরত্বব্যঞ্জক ইতিহাস। পাকিস্তানের কথিত লৌহমানব আইয়ুব খান পূর্ব বাংলার ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। স্বৈরশাসক এরশাদ প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টিকতে পারেন নি। কানসাট-ফুলবাড়ি-গোবিন্দগঞ্জ-নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ-দিনাজপুরের ইয়াসমিন ধর্ষণ খুনের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলন ও আত্মবলিদানের কাহিনী লোকে ভুলে যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাজেক-মানিকছড়ি-ঘিলাছড়ি-স্বনির্ভর (৭ জুন ২০১৭) ও দীঘিনালার বাবুছড়া পদযাত্রায় (১৫ মার্চ ২০১৫) জনতা সাহসিকতা প্রদর্শন করেছে।

বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় আকারে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ধিকি ধিকি করে জ¦লছে, কোথাও কোথাও তা আবার নিভেও যাচ্ছে। উপযুক্ত সংগঠন ও নেতৃত্বের সংস্পর্শে এলে তা জ¦লে উঠবে, সৃষ্টি করবে দাবানল। এরশাদকে গদি থেকে নামাতে শহীদ নূর হোসেন বুক পেতে দিয়েছিলেন। কল্পনা চাকমাকে মুক্ত করতে স্কুল ছাত্র রূপন, কলেজ ছাত্র সমর-সুকেশ-মনোতোষ আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। যেখানে অন্যায় অনাচার সেখানেই প্রতিবাদ প্রতিরোধ, এটাই স্বতঃসিদ্ধ। প্রতিবাদ বিক্ষোভ যাতে দাবানল সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য ধুরন্ধর শাসকচক্র এখন সুবিধাবাদী দালাল লেজুড় তৈরি করছে। বিলাইছড়িতে রাসেল মারমা হলো এর ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত। সে বিলাইছড়িতে মারমা তরুণী ধর্ষণ ঘটনায় সেনাবাহিনীর শেখানো বুলি আওড়িয়ে নব্য পাক হানাদারের ভূমিকা পালন করেছে। রাসেলের মতো আরও অনেকে নানা ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত রয়েছে, তারা সমাজ-জাতির কলঙ্ক, আন্দোলনের প্রতিবন্ধক। তরুণ যুবশক্তিকে বিপথগামী করে শাসকচক্রের ভাড়া খাটতে নানাভাবে প্রলুদ্ধ করা হচ্ছে। সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকারি দলে টেনে নেয়ার পাশাপাশি ইয়াবা-হিরোইন নানা মাদকে আসক্ত করে যুবশক্তিকে নিঃশেষিত করার সকল শক্তি নিয়োজিত রয়েছে। সুবিধাবাদিতা, লেজুড়বৃত্তি, দালালি ও প্রতিক্রিয়াশীলতা বর্তমান সময়ের আন্দোলনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আজ সময়ের দাবি।

আজকের ছাত্র-যুব-নারী কনভেনশন থেকে আমরা নি¤েœাক্ত প্রস্তাব করছি,

এই কনভেনশন,
১. চাকমা সার্কেলের রাণীর ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। দোষী সেনা সদস্যদের যথোপযুক্ত সাজাসহ সংশ্লিষ্ট সেনা কর্তৃপক্ষকে ঘটনার জন্য রাণীর নিকট ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
২. বিলাইছড়ির ধর্ষক সেনা জওয়ানদের সাজা, যৌন নিপীড়নের শিকার দুই বোনের সুস্থ পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে।
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা সৃষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী ‘মুখোশদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
৪. গোবিন্দগঞ্জ, চুনারুঘাটসহ যে সব স্থানে সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায় বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের সম্মুখীন, তা অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছে।
৫. জীববৈচিত্র্য রক্ষা তথা সামগ্রিক পরিবেশের স্বার্থে রামপাল পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র পুনর্বিবেচনা করে বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।
৬. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটকদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে।
৭. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সর্বজনগ্রাহ্য নিরপেক্ষ অস্থায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।

দাবিনামা :
ক। আইন সংক্রান্ত :
১. পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানপূর্বক নাগরিক মর্যাদা ও অধিকার প্রদান। প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান। প্রত্যেক জাতি ও জাতিসত্তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রদান।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে তার ঐতিহাসিক মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকরণ। সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন/মন্ত্রণালয় গঠন ও তাদের অধিকার বিশেষভাবে রক্ষা করা; প্রথাগত ভূমি অধিকার স্বীকৃতি দেয়া;
৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সংসদীয় আসন পাহাড়িদের জন্য সংরক্ষণসহ সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রাজশাহী, কক্সবাজার অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা, ইউপি ইত্যাদিতে আসন বরাদ্দ রাখা; নারী জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা চর্চার সুযোগ দেয়া;
৪. ৫৭ ধারা, বাক স্বাধীনতাহরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ বাতিল করা

খ। নিপীড়ন-নির্যাতন সংক্রান্ত :
১. পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অপারেশন উত্তরণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১দফা নির্দেশনা প্রত্যাহারপূর্বক অস্ত্র গুঁজে দিয়ে ধরপাকড়, হয়রানি, সেনা কর্মকর্তাদের প্রমোশন বাণিজ্য… বন্ধ ও রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দীদের নিঃশর্তে মুক্তি প্রদান;
২. রমেল-মিঠুন হত্যাকারীদের সাজা প্রদান; সেনা ক্যাম্প নির্মাণ-সম্প্রসারণ বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার; নব্য মুখোশবাহিনীকে মদদদান বন্ধ ও হোতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ; সমতলের গোবিন্দগঞ্জে হামলাকারী ও ভূমি বেদখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
৩. সেনা প্রত্যাহার, সেটলারদের সম্মানজনকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ

গ। নারী-শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত :
১. বিলাইছড়ির দুই মারমা বোনের যৌন নিপীড়নকারীদের সাজা; কল্পনা চাকমাকে অপহরণকারী, তণু’র ধর্ষক-খুনীদের সাজা প্রদান
২. পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রদানে সরকারি গোপন নির্দেশনা প্রত্যাহার করা

ঘ। শিক্ষা সংক্রান্ত :
১. প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ, শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ,
২. পা. চট্টগ্রামে জেলা পরিষদ কর্তৃক ঘুষ বাণিজ্যে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ বাতিল;
৩. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবৈধ সার্কুলার প্রত্যাহার;
৪. পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা দাবিনামা বাস্তবায়ন;
৫. কোচিং সেন্টার বন্ধ করা;
৬. শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণ; তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাগ্রহণ।
৭. প্রত্যেক ভাষা-ভাষীর নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ও ভাষা চর্চার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
৮. ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুন:নির্মাণ
৯. নান্যচর কলেজ ও মাওরুম কলেজের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের জারিকৃত অসাংবিধানিক সার্কুলার বাতিল।

ঙ। পাহাড় ভূমিদস্যু, লুটেরা গোষ্ঠী দমন, বন-প্রাণী সংরক্ষণ, পরিবেশ রক্ষা:
১. রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, স্কুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুন:নির্মাণ। হাওর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান;
২. রাবার বাগান, চা বাগানের নামে অনাবাসীদের নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জমি লিজ না দেয়া।

——————————

সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্রউল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More