রাঙামাটিতে সেনাসদস্য কর্তৃক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সাজার দাবিতে

ঢাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র বিক্ষোভ

0

ঢাকা : রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার অরাছড়ি গ্রামে বাড়িতে ঢুকে সেনাসদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষক সেনাসদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ ২৩ জানুয়ারি ২০১৮,  মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ)।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা। এইচডব্লিউএফের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরিামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, ইউপিডিএফ-এর ঢাকা ইউনিটের সংগঠক প্রতিম চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রেশমি মারমা ।

সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধেই বাংলাদেশের জনগণ পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করেছিল। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য এই, দেশ স্বাধীন হওয়া সত্ত্বেও কোন স্বাধীনতা পায়নি দেশের পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহ। প্রতিনিয়ত পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তার নামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি নারীদের উপর যৌন নিপীড়নসহ সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন নির্যাতন, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। তারই অংশ হিসেবে বিলাইছড়ি অরাছড়ি গ্রামে ফারুয়া ক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক এক মারমা কিশোরী(১৭) নিজ বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হন। তিনি সমাবেশ থেকে ধর্ষণে জড়িত সেনাসদস্যদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে সেনা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।

সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু তার বক্তব্যে বলেন, সারা দেশের নারী ধর্ষণ, নিপীড়নের ঘটনা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হয় মাত্র ১০% এবং তার বিচার হয় মাত্র ১%। সরকারের এই বিচারহীনতার কারনেই অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ পাচ্ছে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় এ অপরাধ প্রবনণতা আরো বেশি প্রকট এবং সেখানে প্রতিটি ঘটনায় সেনাবাহিনী জড়িত রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে সেনাসদস্য দ্বারা সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ধর্ষণের সাথে জড়িত সেনাসদস্যদের বিচারের আওতায় এনে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করলে কিছুটা হলেও এ ধরণের অপরাধ প্রবণতা কমবে বলে মন্তব্য করেন।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীদের নিরাপত্তার নামে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নারীরা যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ, খুণ ও গুমের শিকার হচ্ছেন। এর থেকে নারী সমাজকে মুক্তির জন্য দেশের সকল শ্রেণীর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি সেনাসদস্য কর্তৃক রাঙ্গামাটি বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নে অরাছড়ি গ্রামে বাড়িতে ঢুকে জোরপূর্বকভাবে মারমা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সেনাসদস্যদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাব গেইট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় প্রদক্ষিণ শেষে পূনরায় প্রেস ক্লাব গেইটে এসে শেষ হয়।

উল্লেখ্য,  গত রবিবার দিবাগত রাত ১:৩০টার সময় ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের অরাছড়ি গ্রামে যায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশির নামে দুই সেনা সদস্য ওই মারমা কিশোরীর বাড়িতে ঢুকে তার বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে তাকে (কিশোরীকে) জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

 

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More