ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের প্রতিবাদে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে ঢাবি বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ এর মানববন্ধন

0

ঢাকা : “দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় গৌতম বুদ্ধকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশের আপামর শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের প্রতিবাদে” আজ ২৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ এর উদ্যোগে গত ২৪ এপ্রিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক মহাকারুনিক গৌতম বুদ্ধ এবং দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে ”দৈনিক জনকন্ঠ” পত্রিকায় ফিরোজ মান্না’র করা ভিত্তিহীন, সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করার প্রতিবাদে দেশের আপামর শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধদের পক্ষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে।Dhaka 26

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধ ছাত্র সংসদের সভাপতি শোভন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রকট চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড:সুকোমল বড়ুয়া, প্রভাষক উচিন লয়েন রাখাইন, পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক স্নেহাশীষ বড়ুয়া, বৌদ্ধ ছাত্র সংসদের অরুপ বড়ুয়া, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ভিক্ষু সুনন্দাপ্রিয় প্রমুখ।

মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বলেন,- “আমরা এদেশের শান্তিকামী বৌদ্ধ সমাজ অহিংসায় বিশ্বাস করি। দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত ফিরোজ মান্নার পরিবেশন করা সংবাদটি ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক। এই সংবাদ দেশের আপামর বৌদ্ধ সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে।”

প্রভাষক উচিন লয়েন বলেন, “দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে এধরনের উস্কানিমূলক সংবাদ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হবে তা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না।”

ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ সুনন্দাপ্রিয় ভিক্ষু বলেন,- গত ২৪ এপ্রিল বহুল প্রচারিত জাতীয় ”দৈনিক জনকন্ঠ” পত্রিকায় সাংবাদিক ফিরোজ মান্না-র একটি ফিচার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত সংবাদের এক জায়গায় উল্লেখ করা হয় যে, “৯ দ্বারা তাদের দেবতা সন্ত্রাসী গৌতম বুদ্ধের গুণ, ৬ দ্বারা সন্ত্রাসী গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা, ৯ দ্বারা বুদ্ধিষ্ট সংঘ এর গুণ বুঝিয়েছে । ইহা নাকি বুদ্ধের ত্রিরতœ। ইহা বুদ্ধ ধর্মের চাকার থিম ও বটে”। এতে করে বিশ্বব্যাপী অহিংস বাণী ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক গৌতম বুদ্ধকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে যা পুরোদমে ধর্মকে নিয়ে অবমাননা এবং দেশের আপামর শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সামিল। তাছাড়াও নিরীহ ছাত্র রোমেল চাকমা হত্যাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে এ জাতীয় সংবাদ প্রচারের অবতারণটা।’

ডা: স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, – “বস্তুত রাঙ্গামাটির রাজবনবিহার এবং বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির দেশের সুপ্রসিদ্ধ বৌদ্ধ তীর্থস্থান, যেখানে ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধরা ধর্মীয় পূজা-অর্চনা-মানস অনুষ্ঠান সহ প্রভৃতি পালনীয় ধর্মীয় কৃষ্টি ও আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে থাকে। কিন্তু আজ দেশের বৌদ্ধ তীর্থগুলিকে নিয়ে এধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে একেবারেই অনভিপ্রেত।”

মানবন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারক গৌতম বুদ্ধ। গৌতম বুদ্ধের অহিংসার বাণী সারাবিশ্বে সুবিদিত। ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশেও লাখ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ঐতিহাসিক কাল থেকেই বসবাস করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আজো সাক্ষ্য হয়ে আছে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর প্রভৃতি বৌদ্ধ নিদর্শন। এদেশের বৌদ্ধরা দেশের অপরাপর নাগরিকদের মতনই দেশগঠনে সর্বত্র ভূমিকা রেখে চলেছেন। কিন্তু গৌতম বুদ্ধকে “সন্ত্রাসী” হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে বলে বৌদ্ধ সমাজ মনে করে। এধরণের কাল্পনিক, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ দেশের সার্বিক পরিস্থিতিকে যে কোন সময় অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

বক্তারা দেশের আপামর বৌদ্ধ সমাজের পক্ষ হয়ে মানবন্ধন থেকে গৌতম বুদ্ধ ও দেশের বৌদ্ধ সমাজকে জড়িয়ে জনকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত ভিত্তিহীন ও ধর্মীয় অবমাননামূলক সংবাদ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করে দোষীদের যথাযথ শাস্তি প্রদান, ধর্মীয় অবমাননামূলক সংবাদ পরিবেশনের জন্য দায়ি ”দৈনিক জনকন্ঠ” পত্রিকার সম্পাদককে দেশের আপামর বৌদ্ধসমাজ তথা দেশবাসীর নিকট নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং দেশের বৌদ্ধ স্থাপনা ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুদের নিরাপত্তা বিধান করে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

—————————————————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More