‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস’ উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আলোচনা সভা
খাগড়াছড়ি : ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা হামলার ১০ বছর এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস’ উপলক্ষে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যেগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বিকাল ৩টার সময় খাগড়াছড়ি সদরে ইউপিডিএফ কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এল্টন চাকমার সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন, জেলা অর্থ সম্পাদক জহেল চাকমা, দপ্তর সম্পাদক সমর চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা।
সভায় বক্তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ ও সেনাপ্রধান মঈন উদ্দীন আহমদের সামরিক শাসন আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর সেনাসদস্যদের হামলা ও নির্যাতন খুবই নিন্দনীয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে চলা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সেই দিনের ছাত্রদের প্রতিবাদ আন্দোলন ও প্রতিরোধ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনকেও অনুপ্রণিত করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ-যগ ধরে চলা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে সাহস জোগায়।
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ যুগ-যুগ ধরে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা শাসনকে জাড়ি রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৩ বছর সামরিক শাসনে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনায় ফকরুদ্দিন ও মঈন উদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলো ছাত্র-যুব-জনতা। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ফকরুদ্দীন ও মঈন উদ্দিনের সরকার বিদায় নেয় এবং সর্বশেষ আমেরিকায় পারি জমায়। তাই, অতীতের ছাত্র আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
উল্লেখ্য ২০০৭ সালে ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগিয় ফুটবল খেলা দেখার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গ্যালারিতে বসাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সেনা সদস্যরা সেখানে গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এই ঘটনা খবর সরিয়ে পড়লে সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। ২০ আগস্ট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শুরু করা আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২৩ আগস্ট ২০০৭ সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড: হারুন অর রশিদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড: আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড: সদরুল আমিন ও অধ্যাপক ড: নিমচন্দ্র ভৌমিকসহ ঢাবির ৪ শিক্ষক ও ৭ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্র বিক্ষোভের এই ঘটনায় মোট ৬৬টি মামলা করা হয়। এবং তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৭ সালের আগস্টের ছাত্র-শিক্ষক নির্মম নির্যাতনের ঘটনার স্মরণে ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস পালন করা হয়।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।