তনু হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইএসপিআর-এর বক্তব্যে ৮ সংগঠনের ক্ষোভ প্রকাশ

0
ঘটনার তদন্ত ও সংহতি প্রকাশ করতে আট গণসংগঠনের টিম কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে

Bibrityপার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সক্রিয় আট গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটি (গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-ডিওয়াইএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-পিসিপি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এইচডব্ল্উিএফ, পা.চ. নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াড-পিএসএস)– আজ শনিবার ২৬ মার্চ সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে কুমিল্লায় কলেজ ছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্য ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর বিবৃতি এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত তনু’র পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানির সংবাদে তীব্র ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে।

কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু (১৯) হত্যার ঘটনাকে ’৯৬ সালে সংঘটিত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লাল্ল্যাঘোনায় কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার চাইতেও বেশি লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর বলে মন্তব্য করেছে আট গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ মাধ্যমে দেয়া যুক্ত বিবৃতিতে আট গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিহত তনু’র শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, সহপাঠী, প্রতিবাদ আন্দোলনে শরীক বিভিন্ন সংগঠন ও এলাকাবাসীর সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করে একাত্মতা ও সংহতি জানিয়েছেন এবং সেনানিবাস এলাকায় তনু’র হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় মন্তব্য করে তারা আরও বলেছেন, এটি হচ্ছে সাম্প্রতিক কালে নারীর ওপর অব্যাহত সহিংস আক্রমণের জঘন্য ও বিভৎস রূপ। এটিকে আট গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রকারান্তরে গোটা নারীসমাজের ওপরই চরম আঘাতস্বরূপ হিসেবে বিবেচনা করছেন।

তনু হত্যার ঘটনাস্থলে “সীমানা প্রাচীর নেই”–আইএসপিআর-এর এ যুক্তিকে খোঁড়া যুক্তি হিসেবে নাকচ করে দিয়ে আট গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ যুক্ত বিবৃতিতে আরও বলেছেন, এ হচ্ছে সন্দেহের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার ওকালতি প্রয়াস, যা মোটেও দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক নয় এবং এ ধরনের প্রচেষ্টা প্রকৃত তদন্ত কার্যে সহায়ক হবে না। বরং বিভ্রান্তির জন্ম দেবে, অপরাধীদের আড়াল করবে। “সীমানা প্রাচীর” না থাকার তথ্য পরিবেশেনের অর্থ হচ্ছে, সেনানিবাস এলাকায় সেনা সদস্যরা ছাড়াও বাইরের লোকের দ্বারা কলেজ ছাত্রী তনু হত্যার (অনুমান ধর্ষণের পর) ঘটনা সংঘটিত হতে পারে। সন্দেহের তীর সেনা সদস্যদের দিক থেকে অন্যদিকে ফেরানোর মতলবে ওকালতি যুক্তি দিতে গিয়ে প্রকারান্তরে সেনানিবাসে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যর্থতাই তাতে প্রকাশ পেয়েছে। যা দেশের এবং জনগণের জন্য মোটেও শুভ লক্ষণ নয় বলে আট গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।

তনু হত্যার প্রতিবাদে মোমবাতি জ্বেলে ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত
তনু হত্যার প্রতিবাদে মোমবাতি জ্বেলে ভিক্টোরিয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

যুক্ত বিবৃতিতে আট গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ময়নামতি সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবিলম্বে কলেজ ছাত্রী তনু’র হত্যাকারীদের ধরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট হস্তান্তরপূর্বক শিশু ও নারী নির্যাতন আইনে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, তনু হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন, নিহত পরিবার-পরিজনকে সমবেদনা ও সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে আট গণসংগঠনের পক্ষ থেকে একটি টিম আজ ২৬ মার্চ সকালে ঢাকা ও খাগড়াছড়ি থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। এ টিমে রয়েছেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন রিপন চাকমা (জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়), মেরিন চাকমা (ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি), অন্তিম চাকমা (শাহীন কলেজ) ও চৈতালি চাকমা (দীঘিনালা কলেজ)।

উল্লেখ্য, সোহাগী জাহান তনু (১৮) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইতিহাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, কলেজ থিয়েটারের সাথে যুক্ত নাট্যকর্মী। তার বাবা ইয়ার হোসেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি। আর্থিক কারণে তনু লেখাপড়া চালিয়ে নিতে টিউশনি করত। ঘটনার দিন ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় টিউশনি শেষে নির্ধারিত সময়ে বাড়ি না পৌঁছলে, খোঁজাখুঁজির পর তাকে সেনানিবাস এলাকায় এক কালভার্টের পাশে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার চুল ছেঁড়া, জুতা খোলা এবং মাথা থেতলে গিয়েছিল বলে পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে। ঘটনার আলামত ধর্ষণের পর হত্যার ইঙ্গিত দেয়।

সেনানিবাসের মত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এ ধরনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে সন্দেহের আঙুল সেনা সদস্যদের দিকে ইঙ্গিত করে। তাছাড়া থানায় মামলা নিতে না চাওয়া, ঘটনার পাঁচ দিন পরও হত্যাকারীকে ধরতে না পারা, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারে এক ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে জনরোষ চরমে উঠেছে।
—————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More