তাইওয়ানে সংখ্যালঘু জাতির কাছে সরকারের ক্ষমা প্রার্থনা

0

Taioan20151106120206ডেস্ক রিপোর্ট॥ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইংওয়েন গতকাল সোমবার তার দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিগুলোর কাছে তাদের উপর কয়েক শতাব্দী ব্যাপী চলা অবিচার ও ভূমি বেদখলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। খবর এএফপি।

নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পোষাক পরা তাইওয়ানের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের একটি প্রতিনিধি দল প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি এই ঐতিহাসিক ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

সাই আদি বাসিন্দাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সরকারী প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গঠিত একটি কমিটিতে ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দেবেন। এই কমিটি অতীতে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর চলা অন্যায়ের তদন্ত করবে। সাই তাইওয়ান দ্বীপের প্রথম প্রেসিডেন্ট যার রক্তে আদি বাসিন্দাদের ঐতিহ্য রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের পক্ষ থেকে আদি বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। গত ৪০০ বছর ধরে আপনারা যে অত্যাচার ও অবিচার সহ্য করেছেন তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

তিনি মন্তব্য করে বলেন, ‘আমাদেরকে একান্তভাবে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে এবং সত্য কথা বলতে হবে। দুঃখ প্রকাশ হলো এক ধাপ অগ্রগতি।’

আদি বাসিন্দা বা সংখ্যালঘু জাতিরা হলো তাইওয়ানের ২ কোটি ৩৫ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। কয়েক শতাব্দী পূর্বে চীন থেকে অভিবাসীরা দ্বীপে আসা শুরু করলে তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে।

তাদের অধিকাংশ জমি এখন ন্যাশন্যাল পার্ক হিসেবে চিহ্নিত করে বেদখল করা হয়েছে, যেখানে ঢুকতে অনুমতির প্রয়োজন হয়। এ জন্য সরকারী কর্তৃপক্ষের সাথে আদি বাসিন্দাদের প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকে।

আদি বাসিন্দাদের অভিযোগ সরকার তাদের মতামত না নিয়ে তাদের বংশপরম্পরার জমিতে উন্নয়ন কর্মসূচীর অনুমোদন দিয়েছে। তাদের পক্ষে আন্দোলন করা কর্মীদের মতে, সংখ্যালঘু জাতিগুলোর জমির পরিমাণ তাইওয়ানের মোট জমির দুই-তৃতীয়াংশ।

সাই আদি বাসিন্দা বা সংখ্যালঘু জাতিসমূহের স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি, তাদের হারানো জমি পুনরুদ্ধার এবং তাদের ভাষা সংরক্ষণের অঙ্গীকার করেছেন।

তবে অনেক আদি বাসিন্দার মতে সাই যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা যথেষ্ট নয়। তারা গতকাল প্রেসিডেন্টের অফিসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এমিস জনগোষ্ঠীর এক কর্মী মেইয় বিহো বলেন, ‘তার ক্ষমা প্রার্থনার ভাষা সুন্দর ও আবেগ-ঘন, তবে তার দেয়া প্রস্তাব আমাদের প্রত্যাশার চাইতে কম।’ মেইয় রাতে প্রেসিডেন্টের অফিসের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

তাইওয়ানের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের কাছে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে রাঙামাটির এক বিশিষ্ট নেতা বলেন, ‘তাইওয়ানের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতিগুলোর কাছেও বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত। পৃথিবীর সব সংখ্যালঘু জাতি বা আদি বাসিন্দাদের মতো জুম্মরাও জমি হারাচ্ছে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং তাদের ভাষা-সংস্কৃতি বিলুপ্ত হচ্ছে। এ জন্য সরকারের উচিত দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করে অতীতের অবিচারের প্রতিকার করা। তাইওয়ানের আগে অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানও তাদের দেশের সংখ্যালঘু জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছে। বাংলাদেশেরও তাই করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার পার্বত্য চুক্তি করেছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। ভূমি কমিশন অচল, সেনাবাহিনী প্রত্যাহার হয়নি। আজ পত্রিকায় দেখলাম ভূমি কমিশন আইনের সংশোধন করে কমিশন চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি সরকার ভূমি কমিশন নিয়ে তালবাহানা না করে আমাদরে হারানো জমি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এটা করা তার অঙ্গীকারের মধ্যে পড়ে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাগরিক সমাজের ঐ নেতা আরো বলেন, ‘কয়েক মাস আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স উদ্বোধন কালে বলেছিলেন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হবে (পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে)। কিন্তু তার ঐ কথার পর আজ পর্যন্ত একটি ক্যাম্পও তুলে নেয়া হয়নি। বরং তার ঐ বক্তব্য নিয়ে সেটলাররা প্রতিবাদ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘উত্তর আয়ারল্যান্ডে গুড ফ্রইডে চুক্তি বা বেলফাস্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৮ সালে, অর্থাৎ পার্বত্য চুক্তির পর। সেই বেলফাস্ট চুক্তি অনেক আগেই সন্তোষজনকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, এবং সেখান থেকে ৩৮ বছর পর বৃটিশ সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতাসহ ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

উক্ত নেতা বিশ্বের উন্নত ও সভ্য দেশগুলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার লাভ করেছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়ন করলে তিনি হয়তো নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেতে পারেন। আর সেনা প্রত্যাহার ও সেনা নির্যাতন বন্ধ হলে দেশে বিদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জাতির অঞ্চলে শান্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে একটি রোল মডেল বা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।’
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More