তাইন্দং-এ পাহাড়ি গ্রামে হামলার ১০ম বার্ষিকীতে মাটিরাঙ্গায় যুব ফোরামের আলোচনা সভা

0

মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট ২০২৩

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং-এ সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার ১০ম বার্ষিকীতে মাটিরাঙ্গায় আলোচনা সভা করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখা।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট ২০২৩) সকাল ১১টার সময় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধ কর’ শ্লোগানে আয়োজিত সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি রিকেন চাকমার সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক অংপ্রু মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর তাইন্দং এলাকার সংগঠক দিপেন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রনি ত্রিপুরা ও মাটিরাঙ্গা ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিশ্বর ত্রিপুরা। এতে এলাকার কার্বারি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার যুবকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় দিপেন চাকমা বলেন, ২০১৩ সালের আজকের দিনে তাইন্দংয়ে পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে যে হামলা চালানো হয়েছিল তা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ভূমি বেদখল করে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা। এ ঘটনার ১০ বছর পূর্ণ হলেও হামলার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। ফলে এখনো সেটলার বাঙালিরা সেখানে ভূমি বেদখল প্রচেষ্টাসহ পাহাড়িদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাহাড়িরা সবসময় আশঙ্কার মধ্যেই দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

তিনি ভূমি বেদখলসহ সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি বিদ্বেষী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

রনি ত্রিপুরা বলেন, সেদিন কামাল হোসেনকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। সেটলাররা ৩৪টি বাড়ি, ১টি বৌদ্ধ বিহারের দেশনাঘর ও ১টি দোকানঘর পুড়ে ছাই করে দেয়। এছাড়া আরো বহু ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ হামলায় ভয়ে এলাকার ১২টি গ্রামের তিন সহস্রাধিক লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ঘটনাস্থলে বিজিবি উপস্থিত থাকলেও তারা হামলা প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

রবিশ্বর চাকমা বলেন, তাইন্দংয়ের ঘটনায় আমরা অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। লোকজন কোন রকম পালিয়ে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন পালানোর সময় বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে পরে ২ মাস বয়সী এক শিশু মারা যায়।

এলাকার এক কার্বারি বলেন, আমি নিজে সেই ঘটনার ভূক্তভোগী, আমি নিজেই সেটলারদের কর্তৃক মারধরের শিকার হয়েছি। হামলায় বগা পাড়া, সর্বেশ্বর পাড়া, মনোদাস পাড়া, বান্দরশিং পাড়া, তালুকদার পাড়া ও হেডম্যান পাড়ার লোকজন আমরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এখনোা পাইনি।

সভাপতির বক্তব্যে রিকেন চাকমা বলেন, সেদিনের হামলার ঘটনাটি মূলত মো. কামাল হোসেন, মো. আবিদ আলি, নায়েব আলী, আমির হোসেন, মো. কালামসহ কয়েকজন সেটলারের পরিকল্পনায় সংঘটিত হয়েছিল। পরিকল্পনামাফিক মোটর সাইকেল চালক কামলা হোসেনকে লুকিয়ে অপহরণ নাটক সাজানো হয়েছিল। পরে পুলিশ কামাল হোসেনকে খুঁজে বের করলে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয় এবং পুলিশ হামলার সাথে জড়িত কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে। কিন্তু যাদেরকে আটক করা হয়েছিল তাদের কোন বিচার বা দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি। ফলে কয়েকদিন জেলে থাকার পর তারা জামিনে মুক্তি পায়। বর্তমানেও তারা এলাকায় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বক্তারা তাইন্দং-এ পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে জড়িত দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল বন্ধ করার দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More