তাইন্দং তান্ডবলীলার ১ বছর: খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: “পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে ৩০ হাজার সেটলার বাঙালি পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র বন্ধ কর, সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি ও মদদদাতাদের শাস্তি দাও” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে খাগড়াছড়ির মাটিরাংগা উপজেলার তাইন্দংয়ে সেটলার হামলার ১ বছর পূর্তিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আজ ৩ আগস্ট রবিবার খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরের ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে তিন সংগঠনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে রবিবার বেলা ২টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া, উপজেলা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিখা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সচিব রিপন চাকমা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি আলো বরণ চাকমা। এছাড়া সমাবেশে তাইন্দং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বকুল কান্তি চাকমা বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, গত বছর এই দিনে কামাল হোসেন নামে এক মোটর সাইকেল চালককে দিয়ে অপহরণ নাটক সাজিয়ে সেটলার বাঙালিরা তাইন্দংয়ে পাহাড়ি গ্রামে হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ হামলার পর ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে কামাল হোসেন সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিয়ে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এক বছরেও হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

বক্তারা আরো বলেন, তাইন্দং হামলার ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন নয়। সুদীর্ঘকাল ধরে এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত করার মাধ্যমে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে তাদের জায়গা-জমি বেদখল করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন তাইন্দং হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানলেও হামলা বন্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে হামলাকারী সেটলারদের সহযোগিতা দিয়েছিল। ফলে বিজিবি-পুলিশের সামনেই সেটলাররা পাহাড়িদের উপর হামলা চালানোর সাহস পেয়েছিল।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ৩০ হাজার সেটলার বাঙালিকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। রাঙামাটির কাউখালীতে তাদের তালিকাভুক্তির কাজ চলছে। সরকারের এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বক্তারা বলেন, হামলাকারী সেটলাররা বর্তমানে সবাই জামিনে মুক্ত থাকায় তাইন্দং এলাকার পাহাড়িরা নানা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। গত ২৩ জুলাই তঙ্গ মহাজন পাড়ায় জ্যোতি বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা ও তার স্ত্রীকে সেটলাররা গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছে। এ ঘটনায় পাহাড়িদেরকে আরো বেশি শঙ্কিত করে তুলেছে।

বক্তারা দীঘিনালায় বিজিবি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি বেদখল ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, সাজেক ও তদেকমারা কিজিংয়ে বুদ্ধিমূর্তি স্থাপনে সেনা-প্রশাসনের বাধাদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বক্তারা অবিলম্বে তাইন্দং হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সেনা-বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন ও সেটলার পুনর্বাসনের মাধ্যমে ভূমি বেদখল বন্ধ করা, নতুন করে সেটলার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি জানান।
—————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More