তাইন্দং হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার-বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার দাবিতে খাগড়াছড়িতে চার সংগঠনের বিক্ষোভ

0
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে পাহাড়ি গ্রামে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং নিরাপত্তার দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ আজ ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে উগ্রসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ কর” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকার ঠিকাদার সমিতি ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নারাঙহিয়া, উপজেলা, চেঙ্গী স্কোয়ার হয়ে শাপলা চত্বরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ মহাজন পাড়ার সূর্যশিখা ক্লাবের সামনে মিছিলটি আটকিয়ে দিলে সেখানেই রাস্তার উপর এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নিকোলাস চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি উমেশ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিখা চাকমা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রজেন্টু চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।বক্তারা বলেন, তাইন্দং হামলার এক মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকার এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এমনকি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তাও দেয়া হচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো খোলা আকাশের নীচে, অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বক্তারা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে বার বার প্রতারণা করে চলেছে। ঘটনার পরদিন অর্থা ৪ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে যথাযথ ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে ভারতের সীমান্তে পালিয়ে যাওয়া লোকজন গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোন কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। গতকাল বুধবার সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ দেয়নি। প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার যে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তাও ক্ষতির তুলনায় নিতান্ত্মই অপ্রতুল। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সংসদীয় কমিটির দেয়া ত্রাণ গ্রহণ করেনি।

বক্তারা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা হামলায় পুড়ে দেওয়া ঘরবাড়ি ন্যুনতম ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে পুনঃনির্মাণসহ প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ন্যুনতম নগদ ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ৫ বছরের জন্য রেশনিং ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে। সরকারকে অবশ্যই এ দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, হামলার পর কয়েকজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হলেও চিহ্নিত অনেকে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার না করায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পাহাড়িদের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ফলে পাহাড়িরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। নিরাপত্তার অভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না।
বক্তারা অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান পুর্বক পুনর্বাসন, হামলায় জড়িত সকলকে গ্রেফতার ও বিচার, হামলার ঘটনা তদন্ত বিচার বিভাগীয় তদন্ত্ম কমিটি গঠন, হামলার সাথে সংশ্লিষ্ট বিজিবি কমান্ডারদের শাস্তি, পাহাড়িদের নিরাপত্তায় নিজস্ব গ্রাম প্রতিরক্ষা দল বা ভিডিপি গঠনের অনুমতি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ বছরের রেশনিং-এর ব্যবস্থা গ্রহণ, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন এবং পাহাড়িদের জান-মালের নিরাপত্তা ও এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More