তাইন্দং হামলায় জড়িতদের শাস্তি সহ ৩ দফা দাবিতে ঢাকায় সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

0
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
 
ঢাকা : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং হামলায় জড়িতদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান, হামলাকারীদের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন। আজ ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে এক সংহতি সমাবেশ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির মাধ্যমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এ দাবি জানায়।তাইন্দং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১ জনের একটি প্রতিনিধিদলও বিভিন্ন দাবি জানিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি বক্তব্য জানিয়ে বক্তব্য রাখেন স্বদেশ চিন্তা সংঘের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক, লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান, আইনজীবি জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ছাত্র ফেডারেশনের মাহফুজুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ, ল্যাম্পপোস্টের সম্পাদক প্রিন্স মাহমুদ, ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শান্তনু সুমন, ঢাকাস্থ জুম্ম চাকুরীজীবি নেতা পুলক জীবন খীসা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক এসিংমং মারমা।

এছাড়া সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফএর সংগঠক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সহ সভাপতি নিরূপা চাকমা, বিজ্ঞানচেতনা পরিষদের ইমদাদ হোসেন, প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজের সভাপতি সাথোয়াই মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি কবিতা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি দীপঙ্কর ত্রিপুরা, সাবেক নেতা উপল খীসা প্রমুখ। ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অমৃতরঞ্জন চাকমা, সুপায়ন চাকমা, বিনয় চাকমা ও বৗদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত নন্দপ্রিয় থের। সমাবেশে পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্যসিং মারমা।সংহতি সমাবেশে বক্তাগণ তাইন্দং-এ গত ০৩ আগস্ট পাহাড়ি জনগনের ১৩ টি গ্রামে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

ঢাবি বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, আমরা সমতলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে। তিনি পার্বত্য পাহাড়ি জনগণকে দেশের নিপীড়িত জনগনের সাথে একজোট হয়ে লড়াই চালিয়ে যাবার জন্য আহ্বান জানান।

তাইন্দং হামলায় ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের বক্তব্যে বলেন, তাইন্দং এলাকার বিজিবি এবং সে অঞ্চলের আর্মি কমান্ডার ০৩ আগস্ট হামলার আগের দিন স্থানীয় পাহাড়ি জনগণের মুরুব্বিদের ডেকে আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি থাকতে পাহাড়িদের উপর কেউ হামলা করতে পারবে না। কিন্তু যখন হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে তখন সেই কর্মকর্তারা কোনো উদ্যোগই নেননি। বরং, পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের সামনে ১২ জন গণমান্য ব্যক্তিকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়।

তারা আরো বলেন, হামলার এক মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো খোলা আকাশে বসবাস করছি। সরকার পুনর্বাসনের আশ্বাস দিলেও এখনো তা দেয়া হয়নি।

সমাবেশে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাইন্দং হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মদদদানের জন্য বিজিবি কর্মকর্তাদেরও বিচার করা, ২. ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, বাড়িঘর নির্মাণ, ত্রাণ সহায়তা সহ পাঁচ বছরের রেশন প্রদান করা ও ৩. হামলার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মাটিরাঙ্গা থানায় দায়ের করা মামলাটি চট্টগ্রামে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা।

সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে মিছিল সহকারে রাজু ভাস্কর্যে যাওয়া হয়। সেখানে তাইন্দং হামলার নিন্দা ও পাহাড়ি জনগণের অধিকারের প্রতি সংহতি প্রদান করে এক প্রদীপ প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নে কামাল হোসেন নামে এক মোটর সাইকেল চালককে অপহরণের গুজব ছড়িয়ে  সেটলার কর্তৃক পাহাড়ি গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় পাহাড়িদের ৩৪টি বাড়ি, ১টি বৌদ্ধ বিহারের দেশনা ঘর ও একটি দোকান পুড়ে যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More