দিঘীনালায় সেটলার কর্তৃক এক পাহাড়িকে নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ

0

দিঘীনালা প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের ভুয়াছড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত বিরসেন চাকমার ছেলে জনাধন চাকমাকে (৬০) নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করেছে সেটলাররাগতকাল ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর আনুমানিক ১১টার দিকে দিঘীনালা থানার এসআই মো: সেলিমকে সাথে নিয়ে মেরুং থেকে সাদেক মিয়া, আশফাক লিডার সহ ২০/৩০ জন সেটলার জনাধন চাকমার বসতভিটায় গিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছেবর্তমানে তিনি দিঘীনালা সদরে অবস্থান করছেন
ইউনাইটেড পিপল্‌স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রদীপ চাকমা আজ রবিবার ৯ সেপ্টেম্বর উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কিছু সংখ্যক সেটলার জোরপূর্বক জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে ভূয়া দলিলপত্র সংগ্রহ করে ও নানা ছলচাতুরী করে পাহাড়িদের জমি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে
অবিলম্বে উচ্ছেদকৃত জনাধন চাকমাকে তার নিজ জমিতে পুনঃস্থাপিত করার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে তিনি বলেন, তা না হলে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে পুরো দীঘিনালা অচল করে দেয়া হবে
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আজ দুপুর ২টায় দিঘীনালায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
জানা যায়, জনাধন চাকমার পিতা মৃত বিরসেন চাকমার নামে ১৯৬৬ সালে বন্দোবস্তিকৃত ৪ একর জায়গা রয়েছেতার পিতার মৃত্যুর পর উক্ত জায়গাটি জনাধন চাকমা ও তার বড় ভাই বিপুলেশ্বর চাকমা ওরফে খজাল্যা ভোগ-দখল করে আসছেনপ্রায় দুই মাস আগে থেকে উক্ত জায়গাটি সাদেক আলী দাবি করতে থাকেএরপর থেকে সমস্যার সৃষ্টি হলে জনাধন চাকমা ও বিপুলেশ্বর চাকমা বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করেনতিনি তাদেরকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দিতে পরামর্শ দেনউপজেলা চেয়ারম্যানের পরামর্শে জনাধন চাকমারা মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফের কাছে বিচার দেনবেশ কয়েকবার চেয়ারম্যানের আদালতে সালিশ বৈঠক হলেও কোন মীমাংসা হয়নিসাদেক আলী উক্ত জায়গাটি ইন্দ্র কুমার চাকমার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন বলে জানালেও কোন ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনিএমনকি ইন্দ্র কুমার চাকমা নামে কোন লোককেও খুঁজে পাওয়া যায়নিতাই, উক্ত জায়গাটি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি না করার জন্য চেয়ারম্যান সাদেক মিয়াকে নির্দেশ দেয়কিন্তু চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করে কিছুদিন আগে আশফাক লিডারের মাধ্যমে সাদেক মিয়া খাগড়াছড়ি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে জনাধন চাকমাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেগতকাল ৮ সেপ্টেম্বর উক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালত থেকে তদন্তের জন্য দিঘীনালা থানায় একটি নোটিশ পাঠানো হয়এ নোটিশের প্রেক্ষিতে এসআই সেলিম সাদেক মিয়া, আশফাক লিডারসহ ২০/৩০ জন সেটলারকে সাথে নিয়ে তদন্তে যায়এ সময় এসআই সেলিমের সহযোগিতায় সেটলাররা জনাধন চাকমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে জিনিসপত্র তছনছ করে দেয় এবং বাড়িতে তালা লাগিয়ে দেয়
জনাধন চাকমা জানান, উক্ত জায়গাটি আমার পিতার নামে ১৯৬৬ সালে বন্দোবস্তি কৃতপিতার মৃত্যুর পর আমরা দুই ভাই বিপুলেশ্বর চাকমা ওরফে খজাল্যা ও আমি এ জায়গাটি ভোগ-দখল করে আসছিআমার বড় ভাই বিপুলেশ্বর চাকমা এ জায়গায় বসবাস না করলেও আমি দীর্ঘ বছর ধরে বসবাস করে আসছিউক্ত জায়গার উপর আমার লাগানো সেগুন, কাঁঠাল, লিচু, বরই ইত্যাদি গাছ রয়েছে
তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস আগেও একবার সাদেক মিয়া আমার বাড়ি ভেঙে দিয়েছেএ সময় আমি রাঙামাটিতে চিকিৎসারত ছিলাম, বাড়িতে ছিলাম নাতবে, বাড়িতে আমার ছেলে-মেয়েরা ছিলএরপর আমি মেরুং ইউপি চেয়ারম্যান মো: মোশারফের কাছে বিচার দিইকয়েক বার সালিশে বসেও চেয়ারম্যান মীমাংসা করে দিতে পারেনিশেষ পর্যন্ত তিনি নিজ বসতভিটায় ঘর তুলে বসবাস করার জন্য আমাকে বলেনএরপর আমি একটি ছোট্ট ঘর তুলে সেখানে বসবাস করতে থাকিকিন্তু গতকাল হঠাৎ করে সাদেক মিয়া, আশফাক লিডার সহ ২০/৩০ জন সেটলার পুলিশ সহ গিয়ে আমাকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়ির সকল জিনিসপত্র তছনছ করে দিয়েছেএসময় আমি কাজ শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলামবর্তমানে আমি দিঘীনালা সদরে এসে অবস্থান করছি

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More