দীঘিনালার বাবুছড়া ও সাজেকের উজো বাজার ঘুরে আসলো খাগড়াছড়ি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা

0

সিএইচটিনিউজ.কম

বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রিত বিজিবি কর্তৃক উচ্চেদকৃত পরিবারগুলোর সাথে কথাবার্তা বলছেন ছাত্র-ছাত্রীরা
বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রিত বিজিবি কর্তৃক উচ্চেদকৃত পরিবারগুলোর সাথে কথাবার্তা বলছেন ছাত্র-ছাত্রীরা

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা গতকাল ৩০ আগস্ট শনিবার দীঘিনালার বাবুছড়া ও সাজেকের উজো বাজার এলাকা ঘুরে এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসন-সেটলার-নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ভুমি বেদখল ও নিপীড়ন-নির্যাতন বিষয়ে সচেতন করতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) এই সফর কর্মসূচির আয়োজন করে।

তিনটি গাড়িতে করে পিসিপি’র জেলা ও কলেজ শাখার নেতা-কর্মীসহ কলেজের প্রায় ১৩৪ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী প্রথমে দীঘিনালার যত্ন কুমার কার্বারী পাড়া ও শশী মোহন কার্বারী পাড়া থেকে বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হয়ে বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ২১ পাহাড়ি পরিবারের সাথে দেখা করে তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় উচ্ছেদকৃত পরিবারবর্গ শিক্ষার্থীদেরকে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন। কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

এরপর ছাত্র-ছাত্রীরা সাজেকের উজো বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাবার পথে বাঘাইহাট জোনে সেনা সদস্যরা তাদের গাড়ি আটকিয়ে দেয়। সেখানে আধ ঘন্টার মতো আটকিয়ে রাখার পরে সেনারা গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়। ছাত্র-ছাত্রীরা গাড়িযোগে উজো বাজারে পৌছলে স্থানীয় পিসিপি ও যুব ফোরামের নেতা-কর্মীরা তাদের স্বাগত জানায়।

এ সময় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উজো বাজারের আশেপাশের এলাকা কীভাবে রক্ষা করা হয়, সাজেকবাসীকে এই জায়গা রক্ষা করতে কী পরিমাণ রক্ত-ঘাম-শ্রম-সংগ্রাম করতে হচ্ছে এবং বুদ্ধমূর্তি নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়ে কীভাবে সাজেকেরে উজো বাজার এলাকাকে প্রশাসন নিজের দখলে নিতে এখনো প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে ইত্যাদি বিষয়ে তাদের ধারণা দেওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা উজো বাজার ছাড়াও মাজলঙে ইউপিডিএফের উদ্যোগে স্থাপিত বিদ্যালয়টিও পরিদর্শন করেন এবং বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন।

সাজেকের উজো বাজারে সফররত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মতবিনিময় করা হচ্ছে
সাজেকের উজো বাজারে সফররত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে মতবিনিময় করা হচ্ছে

উজো বাজারস্থ ৪ সংগঠনের অফিসে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়কালে ইউপিডিএফর সাজেক ইউনিটের সমন্বয়ক মিঠুন চাকমা সফরকারী ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং নিবিড় সংগ্রাম ব্যতীত এবং ছাত্র-যুব সমাজের সজাগ-সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত জাতিসত্তার অধিকার-ভুমি বেদখল রোধ করা কিছুতেই সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র লেখাপড়া ও আড্ডা, হাসিঠাট্টা, মোবাইলে গেম খেলা, দিনরাত গালগল্পে মশগুল না থেকে শ্রমসাধ্য কাজও মাঝে মাঝে করা প্রয়োজন। তিনি পার্শ্ববর্তী ভারতের রাজ্য মিজোরামের ছাত্র-যুবকদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মিজোরামে ছাত্র-যুবকরা সপ্তাহের একদিন নিজেদের গ্রাম পরিষ্কার করে, তারা চার্চে গিয়ে শুধু ধর্মচর্চা করে না। বরং, কীভাবে একজন ছাত্র-যুবক অরো বেশি সচেতন হতে পারে, পড়ালেখায় মনোযোগী হবে, তার কী দায়িত্ব কর্তব্য এ বিষয়ে সেখানে তারা শিখতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক চেতনার মান উন্নত করার বিষয়েও তিনি তাদের ধারণা দেন।

তিনি বলেন, অধিকার আদায় করতে হলে শুধু অধিকার চাই, অধিকার চাই এই দাবি জানালে হবে না। বরং, অধিকার আদায়ের যোগ্যতা, শক্তিও থাকতে হবে। রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিকসহ সকল দিক থেকে আমরা সংহত-সুদৃঢ হতে না পারলে আমরা অধিকার পাবো না। কেউ আমাদের এমনিতেই অধিকার দেবে না। আধিকার আদায় করতে হয়। অধিকার আদায়ের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।

তিনি বলেন, ফেসবুকে যারা ‘আই হেট পলিটিক্স’ লেখে তাদের তীব্রভাবে সমালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ, আমাদের মতো নিপীড়িত নির্যাতিত জাতির রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সচেতনতা অর্জন ব্যতীত সবকিছুই মূল্যহীন!  সমাজ জাতি রক্ষার সংগ্রামে ছাত্র-যুবকরা সদাসর্বদা জাগ্রত থাকবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পরে বিকালে ছাত্র-ছাত্রীরা গাড়িযোগে খাগড়াছড়িতে ফিরে আসে।
————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More