দীঘিনালার সাধনাটিলা বন বিহারে নন্দপাল মহাস্থবিরকে বৌদ্ধরত্ন উপাধি প্রদান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
দেশ-বিদেশে সদ্ধর্ম প্রচার, বহু শাখা বন বিহার প্রতিষ্ঠা, বুদ্ধবাণী প্রচার দেব মানবের কল্যাণ সদ্ধর্ম প্রচারে বিশেষ অবদানের জন্য বনভান্তের অন্যতম প্রধানশিষ্য নন্দপাল মহাস্থবিরকে বৌদ্ধরত্ন উপাধি প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে দিঘীনালা উপজেলার সাধনাটিলা বন বিহারে এক জাক-জমকপুর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাঁকে এ উপাধি প্রদান করা হয়।
দেশের ২৪টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে এ উপাধি দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ, দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ, হেডম্যান এসোসিয়েশন, যমচুগ বনাশ্রম ভাবনা কেন্দ্র রাঙ্গামাটি, দিঘীনালা বন বিহার, হিল চাদিগাং বৌদ্ধ বিহার চট্টগ্রাম, বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বড়গাঙ বৌদ্ধ বিহার চট্টগ্রাম, সাধনাপ্রেম বনবিহার দিঘীনাল খাগড়াছড়ি, পানছড়ি উপজেলা পরিষদ খাগড়াছড়ি, দিঘীনালা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ, ধুতাঙ্গটিলা বন বিহার, বৌদ্ধ যুব ঐক্য পরিষদ সাধনাটিলা বন বিহার, দিঘীনালা আর্য্য ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম, পানছড়ি আর্য্য ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম, বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়, উদালবাগান উচ্চ বিদ্যালয়, দিঘীনালা বড়াদম উচ্চ বিদ্যালয়, বানছড়ামুখ উচ্চ বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে নন্দপাল মহাস্থবিরকে বৌদ্ধরত্ন উপাধি দেয়ার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার থেকে বাবুছড়ার সাধনাটিলা বন বিহারে জড়ো হতে থাকে তাঁর ভক্তরা। শুক্রবার সকালে এ উপাধি প্রদান অনুষ্ঠানে সাধনাটিলা বন বিহারে কয়েক হাজার পুণ্যার্থী অংশ নেয়।
এ সময় ত্রিপিটক গ্রন্থসম্ভার দান, সংঘদান অষ্ট পরিস্কার দান, বুদ্ধমুর্তি দানসহ বিভিন্ন দানানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং বিশেষভাবে সজ্জিত একটি পুণ্যময় পালঙ্কে নন্দপাল মহাস্থবিরকে আরোহণ করিয়ে বিহার প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করা হয়। সাধ সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। সেসময় তাঁর পেছনে বিশেষ সজ্জায় সজ্জিত একদল বৌদ্ধ তরুণ দেবতার ভুমিকায় এক প্রদর্শনীতে অংশ নেয় ও নন্দপাল মহাস্থবিরের দিকে করজোরে বন্দনা করতে থাকে। অনুষ্ঠানে আগত পুণ্যার্থীদের নজর কাড়ে এ বিশেষ প্রদর্শনী। তাদের উদ্দেশ্যে মুর্হুমুহু সাধুবাদ দিতে থাকে ধর্মপ্রাণ মানুষ। এ সময় এক আবেগঘন মুহুর্তের সৃষ্টি হয়। সকলের চোখে মুখে এক অনাবিল প্রশান্তি চোখে পড়ে।
ভক্তরা তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করে জানান, এই প্রথম নন্দপাল মহাস্থবিরকে এ ধরণের উপাধি প্রদান করতে পারায় নিজেদের জীবন ধন্য মনে হচ্ছে। বৌদ্ধরত্ন উপাধি নন্দপাল মহাস্থবিরকে আরো আগে দেয়া উচিত ছিলো।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বরকল লতিবাশছড়া বন বিহারের অধ্যক্ষ শুভবর্দ্ধন মহাস্থবির, জ্ঞানবর্দ্ধন মহাস্থবির, দিঘীনালা বন বিহারের অধ্যক্ষ দেবধাম্মা মহাস্থবির, রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষ সত্যপ্রেম স্থবির, জ্ঞানরত্ন স্থবির, ভারতের অরুণাচল প্রদেশের লাথাউ বন বিহারের অধ্যক্ষ জয়তিলক স্থবিরসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারের বিপুল সংখ্যক বৌদ্ধ ভিক্ষু ধর্মীয় মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, দিঘীনালার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী শিক্ষক, ধর্মানুরাগীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সাধনাটিলা বন বিহার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখায় এলাকার ব্যবসায়ী দাতুমনি চাকমা, শিক্ষক সন্তোষ জীবন খীসা, প্রবীণ মুরুব্বী জ্যোর্তিময় চাকমাকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়।