ইউপিডিএফের বিবৃতি

দীঘিনালায় পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে সেটলারদের ভোট কেন্দ্র দখলের নিন্দা

0

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা আজ ২৩ এপ্রিল ২০১৬ শনিবার এক বিবৃতিতে দীঘিনালা উপজেলার কবাখালি ইউনিয়নের হাসিনচনপুর গ্রামে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের পক্ষে সেটলারদের ভোট কেন্দ্র দখলের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কবাখালিতে তিনটি ভোট কেন্দ্রসহ জেলার অন্ততঃ ১২টি ভোট কেন্দ্রে পুনঃ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

Bibrityবিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আজ দুপুর দেড়টার দিকে হাসিনচনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সেটলার বাঙালিরা কবাখালি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনের পক্ষে জাল ভোট দিতে গেলে নির্বাচনী এজেন্টরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পার্শ্ববর্তী দীঘিনালা ক্যান্টনমেন্টের সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঙালিদের পক্ষ নিয়ে পাহাড়িদের মারধর করে। অপরদিকে সেটলাররা আর্মিদের সহায়তায় চিক্ক মনি চাকমার বাড়ি ও ইউনিসেফ পরিচালিত একটি পাড়া কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ এবং পাহাড়িদের অপর ৭টি বাড়িঘরে ও ৩টি দোকানে লুটপাট চালায়। পরে সেটলাররা হাসিনচনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, হাসিনচনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও হালিমিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়। এ হামলার কারণে পাহাড়িরা এ সব কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেনি।’

ইউপিডিএফ নেতা আরো বলেন, ‘হামলার সময় সেটলাররা কবাখালি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও গত নির্বাচনে বিজয়ী বিশ্ব কল্যাণ চাকমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দীপন জ্যোতি চাকমার মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। অপরদিকে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা ৫ পাহাড়িকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায়, এদের দুই জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন হিমেল চাকমা ও জয় শশী চাকমা।’

‘অপর এক ঘটনায় সেটলাররা গুজব ছড়ায় যে, জাহাঙ্গীর হোসেন হাসিনচনপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকা তারাবন্যায় গেলে “পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা” তাকে অপহরণ করেছে। এই গুজবের ভিত্তিতে বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তারাবন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়িদের এলোপাথারী মারধর করে। ভয়ে পাহাড়িরা পালিয়ে যায়, আর ভোট দিতে আসেনি।’

এরপর বেলা আড়াইটার দিকে একইভাবে সেনা সদস্যরা জোড়া ব্রীজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়িদের এলোপাথারীভাবে মারধর করে। এতে এক নারীসহ ৪ জন পাহাড়ি আহত হয়। আহতরা হলেন- তুথ্যা চাকমা (২৬), পূরণজয় চাকমা (৪০), গীতা চাকমা (২৭) ও সাধন বিকাশ চাকমা (২৪)। এর মধ্যে গীতা চাকমার স্বামী একজন পুলিশ কনস্টেবল। এ ঘটনার পর পাহাড়িরা ভয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়। ফলে তারা আর ভোট দিতে পারেনি।

ইউপিডিএফ নেতা কবাখালি ইউনিয়নে পাহাড়িদের উপর সেনা-সেটলার কর্তৃক হামলা ও ভোট কেন্দ্র দখলকে পূর্ব পরিকল্পিত আখ্যায়িত করে বলেন, পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে হলেও নির্বাচনে জেতাই হলো এর উদ্দেশ্য। পাহাড়িরা যাতে নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারে সে লক্ষ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে।

তিনি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া সমালোচনা করে বলেন, যারা রক্ষক তারাই ভক্ষক হয়েছে, যাদের কাজ ছিল নিরাপত্তা বিধান করা, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা তারাই হামলায় অংশ নিয়েছে।

হাসিনচনপুরে লুটপাটের শিকার বাড়িঘর ও দোকানসমূহ:
দীঘিনালার কবাখালি ইউনিয়নের হাসিনচনপুরে যে সব পাহাড়ির বাড়িঘরে লুটপাট করা হয় তারা হলেন সৌভাগ্য চাকমা (৪৬) পিতা উজিত কুমার চাকমা, সুপ্রকাশ চাকমা (৬৫) পিতা জ্যোতির্ময় চাকমা, জয় প্রকাশ চাকমা (৪৫) পিতা জ্যোতির্ময় চাকমা, মিসেস জয় সূধা চাকমা ((৪৫) পিতা জ্যোতির্ময় চাকমা, দ্বীপ প্রকাশ চাকমা (৪২) পিতা জ্যোতির্ময় চাকমা, চয়ন চাকমা (৩৫) পিতা নীল মনি চাকমা ও নীল মনি চাকমা (৭০) পিতা অজ্ঞাত।

যাদের দোকানে লুটপাট করা করা হয় তারা হলেন মনিন্দ্র চাকমা (৬৫) পিতা অজ্ঞাত, সুনির্বিন্দু চাকমা (৭০) পিতা মৃত চিত্র কুমার চাকমা ও দেব জ্যোতি চাকমা (৪৮) পিতা চন্দ্র কুমার চাকমা।

ইউপিডিএফ নেতা আরো অভিযোগ করে বলেন, জেলার পানছড়িতে সেটলাররা ৬টি নির্বাচনী কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জাল ভোট দেয়। এ কেন্দ্রগুলো হলো ১ নং পানছড়ি সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পানছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালুকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসান নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাইলট ফার্ম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র  এবং লোগাং ইউনিয়নের লোগাং বাজার স্কুল কেন্দ্র।

এছাড়া মহালছড়ি সদর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মহালছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে সেটলাররা ব্যাপক জালভোট প্রদান করেছে বলে ইউপিডিএফ নেতা অভিযোগ করেছে।

উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা দীঘিনালার কবাখালি ইউনিয়নে হাসিনচনপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, হাসিনচনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও হালিমিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রসহ পানছড়ি ও মহালছড়ি ১২টি কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে অবিলম্বে উক্ত কেন্দ্রগুলোতে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
—————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More