দীঘিনালায় পিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে বাধা: সাধারণ মানুষের কিছু মন্তব্য

0

॥ নিঝুম চাকমা ॥
গত ১৯ – ২০ মে পিসিপির ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে সেনাবাহিনীর বাধা ও প্রস্তুতি চলাকালে হামলার ঘটনা এলাকার সাধারণ মানুষকেও বেশ নাড়া দিয়েছে। চায়ের দোকানে, পথে ঘাটে, বাসা বাড়িতে ও আড্ডায় এ নিয়ে লোকজনের বিভিন্ন মন্তব্য শোনা যাচ্ছে।

গতকাল শনিবার বড়াদামের একটি দোকানে বসে অনেকে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তাদের একজন মন্তব্য করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের এটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে যাচ্ছে। এ সময় দোকানে বসে থাকা আরো অনেককে বলতে শোনা গেল: ‘দিঘীনালায় ২০০৭- ৮ সালের দিকে জরুরী অবস্থার সময় সেনা প্রশাসনের সহায়তায় সেটলাররা সাধনাটিলা এলাকায় জোর করে বসতি স্থাপন করতে গেলে দিঘীনালার জনগণ স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে নেমেছিল। প্রয়োজন হলে আমরা পার্টির ডাকে আবারও রাজপথে নামবো।’

Dighinala2এরপর দোকানে বসে থাকা একজন নারী বলেন, ইআন কিদিক্কেন দি’লঅ কেনা ন জিএ কাম! (সরকারের এ ধরনের বাধা প্রদান বরদাস্ত করার মত নয়)।

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘সরকার ও সেনাবাহিনী ছাত্রদের অনুষ্ঠান করতে বাধা দিয়ে সঠিক কাজ করেনি। যে কোন কালে যে কোন দেশে ছাত্র এবং যুব সমাজ সব সময় প্রতিবাদী হয়ে থাকে। তাদেরকে সমাবেশ করতে দিলে সরকার বা সেনাবাহিনীর তেমন কোন ক্ষতি-বৃদ্ধি হতো না’।

দিঘীনালার এক টমটম চালক এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি যাত্রী নিয়ে দিঘীনালা বাজার থেকে মিঈনী ব্রিজ ঘুরে আসছিলেন। পথে সেনাবাহিনী তাদের থামিয়ে গাড়ি চেক করে। তিনি বলেন, সরকার একদিকে সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার কথা বলে, অথচ অন্যদিকে পিসিপি’র কার্যক্রমে বাধা দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, পিসিপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেনাবাহিনী পুরো এলাকা টহল দিয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিয়েছে ও তল্লাশি করেছে। সারাদিন পুরো এলাকায় যেন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল।

মটর সাইকেল চালক চিধন চাকমা বলেন, গত বছর ১৫ মার্চ বিজিবি কর্তৃক ২১ পরিবারের জায়গা বেদখলের প্রতিবাদে পদযাত্রার সময় হাজার হাজার জনতার সাথে তিনিও ছিলেন। প্রতিরোধ আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে তিনি প্রায় ২ মাস মোটর সাইকেল চালাতে পারেননি। যারা পুলিশ কিছু করবে না, কিছুই হবে না এই ভেবে মোটর সাইকেল চালিয়েছিল তাদের কয়েকজনকে জেলে যেতে হয়েছে বলে তিনি জানান। এবারে পিসিপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশে প্রশাসনের বাধা প্রদান বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার ও সেনাবাহিনী একপক্ষকে প্রশ্রয় ও সহায়তা দেয়, তাদের সাথে ওঠাবসা করে, একসাথে লিচু আম ভাগাভাগি করে খায়, আর অন্যদিকে ইউপিডিএফ ও তার অঙ্গ সংগঠনকে কোন ধরনের কর্মসূচি করতে গেলে প্রশাসন সব সময় নানা ছলছুতোয় বাধা দেয়।’ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এখন চোখ খোলা করে সব দেখছে বলে তিনি বলেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মে সেনাবাহিনী দুইটি জিপে করে পিসিপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের নির্ধারিত স্থান বানছড়া স্কুল মাঠে গিয়ে পিসিপি কর্মীদের হুমকি ধামকি ও বন্দুকের ভয় দেখিয়ে সমাবেশস্থান থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় নিজেকে মোকাররম পরিচয় দেয়া এক সেনা কর্মকর্তা ও তার সহযোগী হাবিব পিসিপি কর্মীদের ১৫ মিনিটের মধ্যে মাঠ ছেড়ে যাওয়ার বেআইনী নির্দেশ দেয়। তারা ছাত্রদের দিকে বন্দুক তাক করে বলে উপস্থিত ছাত্ররা অভিযোগ করে। সেনা কর্মকর্তাদের এই মাস্তানীর প্রতিবাদ জানিয়ে পিসিপি নেতৃবৃন্দ সেনাদের বলেন, ‘এখানে বাধা দেয়ার দায়িত্ব তো আপনাদের নয়। যদি দরকার হয় পুলিশ প্রশাসন এসে বাধা দেবে। আপনাদের এই ধরনের কাজ সংবিধান বিরুদ্ধ’। পিসিপির এই কথার সেনা কর্মকর্তাগণ কোন উত্তর দিতে পারেননি। বরং জোর করে পেশী শক্তি প্রদর্শন করে সেনাবাহিনীর উক্ত টিম পিসিপি কর্মীদের মাঠ ছাড়তে বলে। পরে পিসিপি কর্মীরা সেনাবাহিনীর গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর বেআইনী হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে সেখান থেকে চলে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
——————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More