দীঘিনালায় বিজিবি’র ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন না করার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্মারকলিপি
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
দীঘিনালায় দরিদ্র পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন না করার আবেদন জানিয়ে আজ ৮ জুন রবিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে দীঘিনালা উপজেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান সুসময় চাকমা ও গোপাদেবী চাকমা, বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুগত প্রিয় চাকমা, দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, কবাখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্ব কল্যাণ চাকমা, বোয়ালখালী ইউপি চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা, ৫১ নং দীঘিনালা মৌজার হেডম্যান প্রান্তর চাকমা, ৫০ নং বাঘাইছড়ি মৌজার হেডম্যান সত্যেন্দ্রীয় চাকমা, দীঘিনালা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি যতীন বিকাশ কার্বারী, সাধারণ সম্পাদক নরেন্দু কাবারী, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থ কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি প্রফুল্ল কুমার চাকমা, দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক পরিতোষ চাকমা সহ ২০জন হেডম্যান, ৪৯ জন জনপ্রতিনিধি ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী নেতৃবৃন্দ মিলে মোট ৮০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: ক. আদালত অবমাননা করে দীঘিনালা বিজিবি’র ব্যাটলিয়ন সদর দপ্তরের জন্য জমি অধিগ্রহণ বাতিল এবং যত্ন মোহান কার্বারী পাড়া থেকে বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা, খ. দীঘিনালায় বিজিবি’র যে কোন ক্যাম্প ও সদর দপ্তর স্থাপনের পূর্বে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও হেডম্যানসহ এলাকার জনগণের মতামত নেয়া নেয়া, গ. ২০ দফা প্যাকেজ চুক্তি মোতাবেক ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের ফেরত প্রদান সহ যথাযথ পুনর্বাসন করা এবং ঘ. ১৯৮৫ সালে বাবুছড়া আর্মি ক্যাম্প স্থাপনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জমির যথাযথ বর্গা প্রদানপূর্বক তাদের স্ব স্ব জমি ফেরত দেয়া।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মৌজা প্রধান প্রান্তর চাকমা বলেন, অত্র মৌজার প্রধান হিসেবে আমি বলব যত্নমোহন কার্বারী পাড়ায় বিজিবি ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হলে অনেক নীরিহ পাহাড়ি পরিবার উচ্ছেদ হবে। অনেকেই দ্বিতীয় বারের মত উচ্ছেদ হবে। দীঘিনালার সর্বস্তরের মুরুব্বীগনের সম্মিলিত স্বাক্ষরে যে স্মারকলিপি প্রধান করা হল তা যুক্তিযুক্ত এবং এটা প্রমান করে যে যত্নমোহন কার্বারী পাড়ায় বিজিবি ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টার স্থাপন হোক এটা কেউ চাইনা।
দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, যত্নমোহন কার্বারী পাড়ায় নিরীহ দরিদ্র পরিবার গুলোর ভূমি রক্ষা করার জন্য দীঘিনালার সর্বস্তরের মুরুব্বীরা একত্রিত হয়েছে, কারণ সেখানে বিজিবি ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টার স্থাপিত হলে অনেক দরিদ্র পরিবার উচ্ছেদ হবে। গত ১৪মে ২০১৪ ইং রাত্রে বিজিবির সদস্যরা যে ভাবে আইন অমান্য করে মাস্তানের মত চুরি করে অবস্থান নিয়েছে তা অবৈধ এবং আইনের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হয়েছে। তারা ক্ষমতার জোর দেখিয়ে সেখানে অবস্থান করছে, তা কেউ মানতে পারছে না, তাই অচিরেই যেন তাদেরকে প্রত্যাহার করা হয় এজন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের প্রতিবাদে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হাতে লেখা পোস্টার টাঙানো হয়েছে। এসব পোস্টারে “বিজিবির নামে ভূমি বেদখল চলবে না, বন্ধ কর”; “সেনা ক্যাম্প তুলে নাও, আমার জমি ফেরত দাও”; “আইন অমান্য কারী বিজিবির শাস্তি চাই”; “যত্নমোহন কার্বারী পাড়া থেকে বিজিবি তুলে নাও”; “বিজিবির ব্যাটেলিয়ন হেডকোয়ার্টারের নামে ভূমি বেদখল বন্ধ কর”; “ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীদের ২০দফা প্যাকেজ চুক্তি মোতাবেক পুনর্বাসন কর” এ রকম বিভিন্ন দাবি নামা সম্বলিত শ্লোগান লেখা রয়েছে। প্রতিটি দোকানে, দেয়ালে এবং বিভিন্ন জনসমাগম স্থানে এসব পোস্টার শোভা পাচ্ছে।
————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।