দীঘিনালায় হাহাকার : ঝিরি-ঝরনা-কুয়ায় পানি নেই
সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
কোথাও পানি নেই। খাবার পানিও এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে আনতে হয়। কারণ পাশের ছড়া, ঝরনাগুলোও শুকিয়ে গেছে। গ্রামের সকলেই পানির কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সারারাত ঝরনার কুয়ায় পানি জমা হওয়ার পর ভোরে যে আগে যেতে পারে সেই পানি পায়। বাকিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
কথাগুলো জানালেন সীমানা পাড়া গ্রামের রেমেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
জানা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানির সংস’ান নেই।
এসব গ্রামের লোকজন এখনো ছড়া-ঝরনা ও কুয়ার পানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার সুবিধা থাকলেও, শীত মৌসুমে ছড়া, ঝরনা ও কুয়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এসব গ্রামে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এখানকার লোকজন ঝরনা, ছড়া ও কুয়ার পানি পান করতে করতে এখন, পরিষ্কার পানিকেই তারা পান করার যোগ্য বলে মনে করছে। এভাবেই তারা আর যুগ যুগ ধরে এসব পানি পান করে আসছে। উপজেলার সীমানা পাড়া, মাইয়াপো পাড়া, বুদ্ধমা পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার কোথাও নলকূপ নেই। নেই নিরাপদ পানির বিকল্প অন্য কোনো সংস’ান। এসব এলাকার সকলেই নদী, ছড়া, ঝিরি ও কুয়ার পানি পান করাসহ সকল কাজে ব্যবহার করছে। এ গ্রামের অধিকাংশ লোকজন নিরাপদ পানি কি জানে না।
নদী, ছড়া, ঝিরি, কুয়ার পরিষ্কার পানিকেই নিরাপদ পানি হিসেবে জানে। আর এসব পানি পান করার কারণে কলেরা এবং ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব এলাকার লোকজন।
এ ব্যাপারে সীমানা পাড়া গ্রামের মতিবালা ত্রিপুরা (৪৫) জানান, ছড়া ও ঝরনাগুলো শুকিয়ে গেছে। দেড়-দুই কিলোমিটার পথ যাওয়ার পরও পরিষ্কার পানি পাওয়া যায় না।
সীমানাপাড়া গ্রামের খমিতা ত্রিপুরা (৫৫) জানান, ছড়া-ঝিরি ও কুয়ার পানি পান করেই আমি বড় হয়েছি। এখনো পান করছি। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সকল কাজেই এ পানি ব্যবহার করি। তিনি আরো জানান, এখন গ্রীষ্মকাল, তাই ছড়া, ঝরনা বা কুয়ার পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে পানির জন্য অনেক দূর যেতে হয়।
নয়মাইল এলাকার কারবারি (গ্রাম প্রধান) হিরণময় ত্রিপুরা (৩৩)জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এ গ্রামের সকলেই ছড়া-ঝিরি আর কুয়ার পানি পান করে আসছে। এসবের পানি পান করেই এ এলাকার সবাই অভ্যস্ত। তাই এসব ছড়ার পানি পান করার ফলে পানি বাহিত অনেক রোগ হয়। এসব এলাকায় নিরাপদ পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া দরকার।
এ ব্যাপারে দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানির সুব্যবস’া না থাকার কথা স্বীকার করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, সীমানা পাড়া, বুদ্ধমাপাড়া, মাইয়াপোপাড়াসহ পাহাড়ি এলাকাগুলোতে আমরা নলকূপ বসাতে চেষ্টা করেছি। নলকূপ বসানোর জন্য কিছু বোরিং করার পর পাথর পাওয়া যায়। যার ফলে ভালো পানির স্তর পাওয়া যায় না। পাথর থাকার কারণে এসব গ্রামের কোথাও নলকূপ বসানো সম্ভব হয়নি।
ছবি ও খবর সৌজন্যে: সুপ্রভাত বাংলাদেশ