দুই নেত্রীকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতারের দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের

0

রাঙামাটি : হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে উদ্ধার ও নানিয়াচর উপজেলার জননিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে অপরহণকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে গত ২৮ মার্চ ২০১৮, রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন নানিয়াচর উপজেলার ৪ ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।

লিখিত আবেদনে তারা বলেন, গত ১৬ নাভেম্বর ২০১৭ তারিখ থেকে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবিসহ খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। নিরীহ লোকজনকে অপহরণ করে মোট অংকের মুক্তিপণ আদায় করছে।

গত ১৮ মার্চ ২০১৮, রাঙামাটির সদর উপজেলার কুদুকছড়ি আবাসিক এলাকা হতে দুই নারী নেত্রী মন্টি চাকমা ও দায়াসোনা চাকমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার করে ধর্মশিং চাকমা নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। যাবার সময় দুর্গম এলাকা থেকে পড়তে আসা ছাত্র/ছাত্রীদের একটি মেসঘর আগুন লাগিয়ে দেয়।

উক্ত সন্ত্রাসীরা ইতিপূর্বে নানিয়ারচর উপজেলার প্রাক্তন মেম্বার অনাদি রঞ্জন চাকমা, কাউখালী উপজেলার প্লুটো চাকমা এবং খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মিঠুন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও গত ২৪ শে জানুয়ারি ২০১৮, নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় যোগদান করতে যাওয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে প্রকাশ্য দিবালোকে উপজেলা প্রশাসনের মাঠ থেকে অপহরণের চেষ্টা করে।

সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া খুন, অপরহরণ ও চাঁদাবাজির কারণে ভীত সন্ত্রস্ত। এমনকি এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে রাঙামাটি শহরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে। এর প্রতিবাদে এলাকার জনগণ দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে নানিয়ারচর বাজার বয়কট করছে।

আবেদন পত্রে বলা হয় কুদুকছড়ি হতে দুই নারী নেত্রী অপহরণের তিন দিন পর গত ২০ মার্চ ২০১৮, অপহৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার একটি মামলা দায়ের করা হলেও অদ্যাবধি কোন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়নি। উপরন্তু অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা মামলার বাদী দয়াসোনা চাকমার বাবা বৃষধন চাকমাসহ অপহৃতদের পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

জনপ্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসকের নিকট তিনটি দাবি পেশ করেন। দাবি তিনটি হলো– অবিলম্বে অপহৃত দুই নারী নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে উদ্ধারের জন্য কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা। অপহরণের ঘটনায় জড়িত মামলার আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইন মোতাবেক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। নানিয়াচর উপজেলায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও জননিরাপত্তা বিধানে উচ্চ পর্যায়ে বিশেষ আইন শৃংখলা সভা আয়োজন করা।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন ২নং নানিয়াচর সদর ইউপি চেয়ারম্যান জ্যোতি লাল চাকমা, ১ নং সাবেক্ষ্যং ইউপি চেয়ারম্যান সুপন চাকমা, ৩ নং বুড়িঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রমোদ খীসা, ৫ নং ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা।

রাঙাামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের পক্ষে ডেস্কপাস বিভাগে আবেদন পত্রটি গ্রহণ করা হয়। এরপর প্রতিনিধি দলটি এডিসি জেনারেল এসএম শফিক কামালের সাথে স্বাক্ষাত করে তাকে অবগত করেন এবং তার হাতেও একটি কপি দেন।

জেলা প্রশাসকের সাথে প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত
আজ ২৯ মার্চ সকাল পৌনে ১১টায় জনপ্রতিনিধিরা জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদের সাথে সাক্ষাত করেন। এসময় নান্যাচর উপজেলা ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদারও উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের সাথে আবেদন পত্র প্রদান এবং দুই নেত্রী অপহরণসহ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসময় উপস্থিত নান্যাচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগের সাথে একমত পোষণ করেন।
__________
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More