দেশ ‘নব্য স্বৈরাচারের’ কবলে পতিত- ইউপিডিএফ
সিএইচটি নিউজ ডটকম
ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রতিষ্ঠার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার ২৫ ডিসেম্বর সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বার্তায় দলের সভাপতি প্রসিত খীসা পার্বত্যবাসীসহ দেশের জনগণকে সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়েছেন। প্রদত্ত বার্তায় প্রসিত খীসা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিহত বীর শহীদদের গভীর সম্মানের সাথে স্মরণ করেন, কারাগারে অন্তরীণ সহযোদ্ধাদের সাথে সংহতি জানান এবং পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের আরও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লড়াই সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
ইউপিডিএফ নেতা প্রদত্ত বার্তায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলের জনগণের সমস্যা বিশেষত সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়ের ব্যাপারে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রদত্ত বার্তায় তিনি ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘নব্য স্বৈরাচার’ আখ্যায়িত করে বলেন,‘রাঙ্গামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপনের ফিরিস্তিসহ উন্নয়নের ঢাকঢোল পেটালেও, বাস্তবত সেনা-বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীর ক্যাম্প সম্প্রসারণ-নির্মাণ, পর্যটনের নামে জমি অধিগ্রহণ ও সেটলার পুনর্বাসন আগের মতই জোরদার রয়েছে। মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’র মত অপারেশন উত্তরণের সাথে জারি রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গণবিরোধী ১১দফা নির্দেশনা। সাম্প্রতিককালে ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে বাধা প্রদান-বর্বরোচিত হামলা-সমাবেশ থেকে ধরপাকড়; বিশ^ মানবাধিকার দিবস পালনে বাধাদান ও সেটলার লেলিয়ে দিয়ে হামলার ঘটনা–এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে। হয়রানি, দমন-পীড়ন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। জন জীবন বাস্তবিক অর্থেই অসহনীয় হয়ে উঠেছে, যা আশি দশকের জ্বালাও-পোড়াও দিনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয়।’
দেশের বর্তমান অবস্থা স্বৈরশাসক এরশাদকেও হার মানিয়েছে মন্তব্য করে ইউপিডিএফ নেতা প্রদত্ত বার্তায় আরও বলেছেন,‘ পুলিশ, সাধারণ প্রশাসন, আদালত-বিচার ব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম সব কিছুতে সরকার দলীয় আধিপত্য কায়েম করেছে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে সরকার দলীয় লোকরা কব্জা করে নিয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়মে দেশ ডুবে যেতে বসেছে। সরকার জনগণের জানমাল রক্ষা করতে ব্যর্থ। মুক্ত চিন্তার লোকজন আক্রান্ত ও খুন হচ্ছে। সংখ্যালঘু জাতিসত্তা-সম্প্রদায়, ভিন্ন ভাষা-ভাষী, ধর্মাবলম্বী ও মুক্ত চিন্তার লোকজন এদেশে আর নিরাপদ বোধ করছেন না।’
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া বার্তায় ইউপিডিএফ নেতা সমতল অঞ্চলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের দুঃখ-দুর্দশার কথাও তুলে করেন। সাম্প্রতিক কালে হিন্দু মন্দিরে হামলা, খৃস্টান পাদ্রিকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, শিয়া মসজিদে হামলা ও বিভিন্ন জনকে মৃত্যুর হুমকি প্রদান এবং হবিগঞ্জের চান্দপুর চা বাগানের কৃষি জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার নামে শ্রমিকদের বংশ পরম্পরায় ভোগদখলীয় জমি থেকে উৎখাতের সরকারি পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি চা শ্রমিকদের দাবি প্রতি সমর্থন জানান এবং তাদের আন্দোলনের সাথে সংহতি ব্যক্ত করেন।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত বার্তায় ইউপিডিএফ নেতা ’৭১ সালে পূর্ব বাংলায় হত্যাকা-ের জন্য পাকিস্তানকে অবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলে নিজের দলীয় অবস্থান আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বার্তায় তিনি ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রতিযোগিতা এবং লাগামহীন কথাবার্তারও সমালোচনা করেন।
জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অপ্রধান ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসছে, অন্য দিকে বিরোধী দল বিএনপি কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পেরে খেই হারিয়ে নানা কথা বলছে বলে ইউপিডিএফ নেতা মন্তব্য করেছেন।
পার্টি প্রতিষ্ঠার ১৭তম বার্ষিকীতে ইউপিডিএফ নেতা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নব্য স্বৈরাচার হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণতন্ত্র মনা ব্যক্তি, সংগঠনসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) গঠিত হয়। গঠনের পরপরই এ দলের ওপর সরকারের নির্যাতনের স্টিম রোলার নেমে আসে। সকল নিপীড়ন-নির্যাতন ও বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের ন্যায্য অধিকার পুর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসহ দেশের আপামর জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছে।
———————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।