দোবাকাবা-নভাঙায় সেনা ক্যাম্প স্থাপন : স্থানীয়দের বাঁধ নির্মাণে বাধার অভিযোগ

0
দোবাকাবা-নভাঙা গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে স্থানীয়দের জমি দখল করে সেনা ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে।  ছবিটি কয়েকদিন আগে তোলা

কাউখালী প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার দোবাকাবা ও নভাঙা গ্রামের সীমান্তবর্তী স্থানে গত ২২ নভেম্বর ২০২০ তারিখ থেকে স্থানীয় পাহাড়ি গ্রামবাসীদের জায়গা বেদখল করে নতুন একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ক্যাম্পটি স্থাপনের পর থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীরা দোবাকাবা ছড়ায় তাদের দেওয়া সামাজিক বাঁধটির পানি আর ব্যবহার করতে পারছেন না।  ফলে তারা উপার্জনের প্রধান উৎস গাছ-বাঁশ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না।

গ্রামাবাসীরা জানিয়েছেন, তারা মূল বাঁধের নালার উপর বাঁধ দিয়ে সপ্তাহখানেক পর্যন্ত পানি জমিয়ে সেই জমানো পানির স্রোতকে ব্যবহার করে বর্মাছড়ি বাজারের সাপ্তাহিক হাটে তাদের গাছ বাঁশ বিক্রির জন্য নিয়ে থাকেন। বাঁধ দিয়ে পানি জমাতে না পারায় পানির অভাবে তারা গাছ-বাঁশ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে না পারার দরুণ নিদারুণ অর্থ কষ্টে রয়েছেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, পানি জমানোর জন্য বাঁধ দিতে যাওয়া লোকজনকে সেনারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাঁধ না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকে। গতকাল বুধবার (১৬ ডিসেম্বর ২০২০) সেনাবাহিনীর সিও রফিক দোবাকাবা গ্রামের কার্বারী নিশি কুমার চাকমা এবং তার ছেলে রিন্টু চাকমাকে সাফ জানিয়ে দেন, ‌‘তোমরা বাঁধ দিতে পারবে না। বেশী বাড়াবাড়ি করবে না। পাহাড় কাটা নিষেধ। বেশী বাড়াবাড়ি করলে পরিবেশ আইনে মামলা দেব’। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পানি জমানোর জন্য মূল বাঁধটির নালায় যে বাঁধটি দেওয়া হয় তার জন্য তেমন মাটি কাটতে হয় না। পূর্বের কাটা মাটিই তারা নতুনভাবে ব্যবহার করে থাকেন। অর্থাৎ গাছ বাঁশ ভাসিয়ে নেয়ার জন্য তারা সপ্তাহে একবার বাঁধটি খুলে দেন। তারপর কাজ শেষে পরবর্তী সপ্তাহের জন্য পানি সংরক্ষণ করতে তারা আবার বাঁধ দিয়ে রাখেন। ফলে এতে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই।

জোরপূর্বক কম্বল বিতরণ করে অন্যায় কর্মকাণ্ড ঢাকার চেষ্টা
সেনারা একদিকে জমি দখল করে ক্যাম্প স্থাপন ও বাঁধ নির্মাণে বাধা দিয়ে গ্রামবাসীদের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, অপরদিকে লোকজনকে জোর করে ধরে এনে লোকদেখানো কম্বল বিতরণ করে এসব অন্যায় কর্মকাণ্ড ঢাকার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!

জানা গেছে, গতকাল (১৬ ডিসেম্বর) নভাঙা গ্রামের ২/৩টি দোকানে আসা লোকজন এবং এর আশে-পাশের ঘরে অবস্থানরত লোকজন, গরু চড়াতে যাওয়া লোকজন, পথচারী, বাজারের উদ্দেশ্য যাওয়া লোকজনকে সেনারা তাৎক্ষণিক জোর করে নভাঙা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জড়ো করে এবং তাদের মধ্যে  কম্বল বিতরণ শুরু করে দেয়। জড়ো করা লোকজন কম্বল নিতে অনীহা প্রকাশ করলে জোর করে তাদের হাতে কম্বল গুছিয়ে দিয়ে ছবি তুলতে থাকে। রাঙামাটি থেকে আগত সিও রফিক এতে নেতৃত্ব দেন।

ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ধন কুমার চাকমা জানান, কথিত কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থাকতে চাইনি। কাউখালী সদরের বাসায় গিয়ে আমাকে ডেকে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে স্থানীয় মেম্বার অমল কান্তি চাকমাকেও বাসায় গিয়ে ধরে এনে অনুষ্ঠানে হাজির করা হয়েছিল।

বড়কলক গ্রামের হেঙেদা চাকমা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনে কাউখালী বাজারে যাচ্ছিলাম। পথে আর্মিরা আমাদের গতিরোধ করে তাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে দুজনকে দুটি কম্বল গছিয়ে দেয়।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More