দ্বিতীয়বারও বাঘাইহাট বাজার বয়কট ভাঙার চেষ্টা ব্যর্থ
সাজেক প্রতিনিধি॥ সাজেকে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলা বাঘাইহাট বাজার বয়কট ভাঙার দ্বিতীয় চেষ্টাও আজ ব্যর্থ হয়েছে। গুচ্ছগ্রামে সন্ত্রাসীরা লোকজনকে বাজারে যেতে বাধ্য করতে চাইলে গ্রামবাসীরা মনি চাকমা নামে একজনকে আটক করে, স্থানীয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সহ্যের সীমা অতিক্রম করায় জনগণ ফুঁসে উঠে প্রতিরোধ করতে বাধ্য হচ্ছে বলে অনেকের অভিমত।
বাঘাইহাট জোনের আর্মিরা কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবককে দিয়ে জোরজবরদস্তি করে বয়কট ভেঙে বাজারটি পুনরায় চালু করতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ রবিবার ছিল বাঘাইহাট বাজারের হাট বার। বাজারে লোকজন জড়ো করতে সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা সকালে বাজারের পাশর্^বর্তী গুচ্ছগ্রাম, ডিপুপাড়া ও বাইবাছড়ায় যায় এবং গ্রামবাসীদেরকে বাজারে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
ডিপু পাড়ার এক মুরুব্বী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সংস্কাররা (জেএসএস এম এন লারমা দলের সদস্যরা সেখানে এই নামে পরিচিত) আমাদের বলে বাজারে যেতে। আমরা বলি বাজারে আমাদের দরকার নেই। এই কথা বলার পর তারা আমাদের মারধর করে। তাদের হাতে বন্দুক ছিল ও কিছু দূরে তাদের নিরাপত্তার জন্য আর্মিরা ছিল। সে কারণে আমরা কিছুই করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে যেতে না চাওয়ায় সন্ত্রাসীরা গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা রিপন চাকমার ভাই অমর চান চাকমাসহ ১০-১২ জনকে মারধর করে।
গুচ্ছগ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সকালে “ফাত্তোরা” (সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা) আসে এবং আমাদেরকে বাজারে যেতে বলে। না গেলে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে বলে তারা হুমকি দেয়। আমরা বলি বাজারে যাবো না কি যাবো না সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাজারে কাজ থাকলে যাবো, না থাকলে যাবো না। এরপর তারা জোর করে আমাদেরকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলে আমরা প্রতিরোধ করি এবং তাদের একজনকে ধরে ফেলি। বাকিরা যে যেদিকে পারে পালিয়ে যায়।’
ধৃত সন্ত্রাসীর নাম মনি চাকমা( পিতা তরি লাল চাকমা) বলে জানা গেছে। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ গুচ্ছগ্রামবাসীরা ধৃত সন্ত্রাসীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাকিদের খবর দেয়। কিন্তু তারা ভয়ে গুচ্ছগ্রামে যায়নি।
সন্ত্রাসীরা গুচ্ছগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে যাওয়ার সময় আর্মিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় বলে লোকজন জানান।
সাজেকের এক গ্রামের কার্বারী বলেন, সন্ত্রাসীরা ফোন করে প্রতি গ্রাম থেকে ৪০ – ৫০ জন করে লোক পাঠাতে বলে। বাজারে না গেলে আর্মিদের দিয়ে শায়েস্তা করা হবে বলে তারা হুমকি দেয়।
কারা এসব করছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নয়ন চাকমা, প্রিয় চাকমা, জনপ্রিয় চাকমা ও ভগদত্ত চাকমাসহ কয়েকজন আর্মিদের টাকা খেয়ে এই ধরনের জঘন্য গণবিরোধী কাজ করছে। এদের মধ্যে নয়ন চাকমা হলো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। সে একজন মুসলিম মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে। নয়নের মুসলমানী নাম নুরুল হুদা বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন এরা নিজেদেরকে জেএসএস এম এন লারমা গ্রুপের সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং বাঘাইহাট জোনের পাশে বাঘাইহাট বোর্ডিংএ থাকে। তারা প্রকাশ্যে আর্মিদের সহায়তায় চাঁদাবাজি করে, অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে ও লোকজনকে হুমকি ধামকি দেয়। একজন প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের নির্দেশনা দেয় বলে তিনি জানান।
তার মতে আর্মিরা এলাকার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য এসব ধান্দাবাজদের ব্যবহার করছে।
তিনি আরো বলেন সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে এম এন লারমার অনুসারী দাবি করলেও বাস্তবে তারা মানবেন্দ্র লারমার আদর্শের পরিপন্থী জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কাজই করছে। আসলে তাদের কোন নীতি আদর্শই নেই। সারাদিন আর্মিদের সহায়তায় জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের পর সন্ধ্যায় তারা মদ-জুয়ার আসর বসায়।
সন্ত্রাসীরা গুটি কয়েকজনকে অস্ত্রের মুখে বাজারে যেতে বাধ্য করলেও বাঘাইহাট বাজার মোটেই জমেনি বলে বিভিন্নন সূত্রে জানা গেছে। বাজার ছিল ফাঁকা। এমনকি অন্যান্য এলাকা থেকে ভাসন্যা দোকানিরাও বাজারে যায়নি।
বাঘাইহাট বাজারের এক দোকানদার নাম প্রকাশ করা হবে না এই শর্তে সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, বাজারে লোকজন নেই, তাই বেচাকেনাও নেই।
তিনি বলেন, প্রশাসনের উচিত এলাকাবাসীর সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে বাজারটি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করা। জোরজবরদস্তি করে দু’একজনকে বাজারে নিয়ে আসা গেলেও এভাবে বাজার চালু করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমনকি যেসব পাহাড়ি বাজারে এসেছে বা আসতে বাধ্য হয়েছে তারাও কোন কিছু কিনে নিয়ে যায়নি বলে তিনি জানান।
গঙ্গারামের এক মুরুব্বী বলেন, বাজার বয়কট চলছে ২০১০ সালের জানুয়ারী থেকে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এটা চলবে। জোরজবরদস্তি করে বাজার খোলা যাবে না।
তিনি বলেন বাঘাইহাট থেকে সেনা প্রত্যাহার, সেটলার প্রত্যাহার, ২০১০ সালের হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, সেনা নির্যাতন হয়রানি বন্ধ করা হলে চলমান বাজার বয়কট তুলে নেয়া হবে।
তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাজার বয়কট চালিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকার জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।