নব্য মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ জোরদার করার আহ্বান

0

রাঙামাটি : সেনাবাহিনীর লেলিয়ে দেয়া নব্য মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে চলমান গণপ্রতিরোধ জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে একটি বুকলেট প্রকাশ করা হয়েছে। নব্য মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধ ছাত্র-যুব কমিটির নামে গত ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ রাঙামাটি থেকে প্রকাশিত ৮ পৃষ্ঠার বুকলেটে মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের খুন, অপহরণ, নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বুকলেটে মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের সেনাবাহিনীর সমর্থন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকা ও জেএসএস(এমএন লারমা)-এর একাংশের সমর্থন দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

খুন, অপহরণ, নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এ পর্যন্ত মিঠুন চাকমাসহ ইউপিডিএফ’র দুই নেতা ও এক সমর্থককে খুন করেছে। কমপক্ষে ৬ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে।

নব্য মুখোশ বাহিনীর সর্দার বর্মা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিদিন জনপ্রতিনিধিসহ লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে, চাঁদা দাবি করছে, বিভিন্ন জনের বাসা-বাড়িতে সশস্ত্রভাবে হানা দিচ্ছে এবং শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে বলে বুকলেটে অভিযোগ করা হয়।

নব্য মুখোশ বাহিনী সেনাবাহিনীর সৃষ্টি উল্লেখ করে  বুকলেটে বলা হয়, বর্মা-তরুর নেতৃত্বাধীন নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা হলো সেনাবাহিনীর সৃষ্টি। সেনাবাহিনীর অশ্রয়ে থেকে এবং তাদের মদদে ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা এসব জাতীয় স্বার্থ ও গণবিরোধী অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, নব্য মুখোশ বাহিনী দিনে দুপুরে সশস্ত্র মহড়া ও খুন-অপহরণসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালেও  প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের প্রতি জেএসএস(এমএন লারমা)-এর একাংশের সমর্থনের অভিযোগ করে বুকলেটে বলা হয়, ‌“এটা আজ কোন গোপন বিষয় নয় যে, বর্মা-তরুর নেতৃত্বাধীন নব্য মুখোশরা সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সংস্কারবাদী নামে পরিচিত জেএসএস-এম.এন. লারমা দলের কিছু নেতারও সমর্থন পেয়ে থাকে। শক্তিমান চাকমাসহ আরো কয়েকজন সংস্কারবাদী নেতা এই নব্য মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করতে সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা দিয়েছিল বলে জানা গেছে। গঠনের পরও তারা বিভিন্নভাবে সন্ত্রাসীদের কখনো গোপনে কখনো আধা প্রকাশ্যে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।”

ইউপিডিএফ থেকে বিচ্যুত, বহিস্কৃত ও অধ:পতিতরাই হলো এই নব্য মুখোশ বাহিনীর সদস্য উল্লেখ করে বুকলেটে বলা হয় এজন্য তাদেরকে চাকমা ভাষায় ‘দেরোতপুজ্যা’ (অর্থাৎ যারা কর্দমাক্ত নর্দমায় পতিত হয়েছে) বলে ডাকা হয়। নব্য মুখোশ বাহিনীর সর্দার বর্মার দুর্নীতি, কুকীর্তি ও কেলেংকারির কথা সবার জানা। পার্টির ক্ষমতা অপব্যবহার করেই সে এসব করেছে। পার্টি সদস্য না হলে তাকে যে কতবার নাকে খত দিতে হতো (অথবা “শুকর দিতে হতো”) তার হিসাব করা যাবে না। তার সাঙ্গপাঙ্গদের কীর্তিকলাপও তার মতোই। রতনে রতন চিনে- তাদের সবার কর্ম একই বলে তারা এখন একজোট হয়েছে। সেনারা সমাজের এইসব পঁচে গলে যাওয়া লোকদের কুড়িয়ে নিয়েই নব্য মুখোশ বাহিনী গঠন করেছে।

বুকলেটে নব্য মুখোশ বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ জোরদার করতে আপামর জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে-

– সেনা গোয়েন্দাদের জন্ম দেয়া বর্মা-তরুর নেতৃত্বাধীন নব্য মুখোশ বাহিনী বা দেরোতপুজ্যাদের বিরুদ্ধে চলমান গণপ্রতিরোধ জোরদার করুন।
– সেনাদের নব্য মুখোশ বাহিনীর মতো সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গণআন্দোলন নস্যাতের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
– নব্য মুখোশদের (দেরোতপুজ্যাদের) আর্থিক কিংবা অন্য কোন ধরনের সাহায্য দেবেন না; তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করুন।

জেএসএস (এম.এন.লারমা)-এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়,

– জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের জন্য সেনা গোয়েন্দাদের লেলিয়ে দেয়া নব্য মুখোশ বাহিনীকে সাহায্য-সমর্থন দেয়া বন্ধ করুন।

– সুবিধাবাদীতা, দোদুল্যমানতা পরিহার করে জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সামিল হোন। নিজেরা আন্দোলন করতে না পারলে, চুপ থাকুন, অন্যদের আন্দোলন করতে দিন, জনগণের আন্দোলনে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

– সেনাদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হবেন না।

নব্য মুখোশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বুকলেটে বলা হয়,

– জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিহার করে সঠিক পথে ফিরে আসুন;

– সেনা খপ্পড় থেকে বেরিয়ে আসুন। তারা আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার জন্য আপনাদের ব্যবহার করছে। জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে অতীতে কেউ সুবিধা করতে পারেনি, বরং ধ্বংস হয়ে গেছে। সেনা খপ্পড় থেকে শীঘ্র ফিরে না আসলে আপনাদের পরিণতিও একই হতে বাধ্য।

– পূর্বের কৃত অপরাধের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন।

বুকলেটে সরকার ও সেনা গোয়েন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়,

– দাগী আসামী, অস্ত্র চোরাকারবারী, মাদকসেবী, সমাজচ্যুত ও দলচ্যুত লোকজন দিয়ে জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম দমনের ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা বন্ধ করুন; কারণ আপনাদের এ ধরনের গণবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও কখনোই সফল হবে না।

– আপনাদের জন্ম দেয়া নব্য মুখোশ বাহিনীর লোকজনদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তারা প্রত্যেকে দাগী আসামী, অস্ত্র চোরাকারবারী, মাদকসেবী ও সমাজে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত। তাই অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।

– ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক তথা সাধারণ জনগণের উপর দমন পীড়ন বন্ধ করুন; জনগণের ন্যায্য অধিকার মেনে নিন।

 

নীচে পুরো বুকলেটটির স্ক্যান কপি সংযুক্ত করা হলো:

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More