‘নব্য মুখোশ-বোরখা বাহিনী’র বিরুদ্ধে খাগড়াছড়িতে লাঠি মিছিল, বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধের ডাক
খাগড়াছড়ি : “রাষ্ট্রীয়-সেনা মদদে ‘নব্য মুখোশ-বোরখা বাহিনী’ লেলিয়ে দিয়ে চাঁদাবাজি-উৎপাত ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণআন্দোলন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে এগিয়ে আসুন, প্রতিরোধে অংশ নিন!” এই স্লোগানে আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর ২০১৭) সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি জেলা শহরে লাঠি মিছিল করেছে মাদক-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটি। মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
লাঠি মিছিল শুরু হওয়ার আগে জেলা শহরের স্বনির্ভর বাজার শহীদ অমর বিকাশ চাকমা সড়কে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক মাইকেল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজলী ত্রিপুরা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমলত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রেশমি মারমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৯০ দশকে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তারা মুখোশ বাহিনী সৃষ্টি করে জনগণের আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্য যেভাবে চেষ্টা চালিয়েছিল, পাহাড়ি জনগণের উপর যেভাবে অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে শহীদ অমর বিকাশ চাকমাসহ হাজারো জনতা রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম করেছিল। ঐতিহাসিক সেই মুখোশ বাহিনী প্রতিরোধের কথা এখনো জনতা ভুলে যায় নি। আজকে সেনা-গোয়েন্দার প্রহরায় খাগড়াপুর এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে পাহাড়ি জনগণ থেকে বিচ্যুত কয়েকজন জুম্ম দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল ইউপিডিএফ-এর নাম ভাঙ্গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাদেরকে জনগণ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব-নারী সমাজ বরদাস্ত করবেনা এবং আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে প্রতিরোধ করবেই।
বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ তথা জুম্ম জগণের প্রকৃত আন্দোলনের শক্তিকে ব্যাহত করার যে ষড়যন্ত্র চলছে তা বন্ধ না হলে এর পরিণাম শুভ হবে না। এর বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললে এর জন্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায় সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নিতে হবে।
পরে সমাবেশ শেষে এক লাঠি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্বনির্ভর বাজার থেকে বের হয়ে চেঙ্গী স্কয়ারে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটি সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা। তার বক্তব্যের মাধ্যমে মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-যুব-নারী ও জনতা রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক সৃষ্টি নব্য মুখোশ-বোরখা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম করবে বলে লাঠি উচিঁয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সমাবেশ শেষে মিছিলটি চেঙ্গী স্কয়ার প্রদক্ষিণ করে আবার স্বনির্ভর বাজারে এসে এক সমাবেশের মাধ্যমে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর ২০১৭) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। সড়ক অবরোধ ঘোষণা করেন মাদক-সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটি সদস্য ও পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের আন্দোলনকে ভেস্তে দেয়ার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করছে এবং তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদেরকে কাজে লাগিয়ে জুম্ম দিয়ে জুম্ম ধ্বংস করার জন্য যে পাঁয়তারা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে এই সড়ক অবরোধ।
তিনি আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সফল করার জন্য জেলার সকল যান মালিক সমিতিসহ সকল ধরণের যানবাহন সমিতি, শ্রমিক সংগঠন এবং খাগড়াছড়িবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে জেলার স্থানীয় জেলা প্রশাসনের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।
অবরোধে রোগী বহনকারী গাড়ী, সংবাদপত্র গাড়ী, প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার গাড়ী, পরীক্ষার্থী বহনকারী গাড়ী, বিবাহ অনুঠানের গাড়ী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গাড়ী আওতায় মুক্ত থাকবে বলে তিনি ঘোষণা করেন।
————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।