নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি থেকে এক পাহাড়ি যুবককে আটক করেছে সেনাবাহিনী
নান্যাচর: রাঙ্গামাটি নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বাজার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে এক পাহাড়ি (চাকমা) যুবককে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গত ১৬ এপ্রিল (রবিবার) বিকাল বেলায় ঘিলাছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে ১০-১২ জনের একদল সেনাসদস্য এসে ঘিলাছড়ি বাজার এলাকার নিজ বাড়ি থেকে পল্টু চাকমা(৩৫), পিতাঃ টনক কুমার চাকমা, মাতাঃ বীরবালা চাকমা-কে আটক করে প্রথমে ঘিলাছড়ি ক্যাম্পে এবং পরবর্তীতে নান্যাচর সেনা জোনে নিয়ে গিয়ে শারিরিকভাবে নির্যাতন করেছে বলে জানা যায়।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে জানা যায়, সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক পল্টু চাকমার বাড়ি নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের কৃঞ্চমাছড়ায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি।তার বড় ভাইয়েরা বৃদ্ধ মা-বাবা সহ গ্রামে থেকে কৃষিকাজ করে সংসার চালান।বছর তিনেক আগে তিন ভাই মিলে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার সুবিধার্থে ঘিলাছড়ি বাজার এলাকায় জায়গা কিনে একটি বাড়ি করেন।সেখানেই তিনি স্বপরিবারে থাকেন এবং ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেন। গত রবিবার যথারীতি ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালিয়ে এসে দুপুরে খাওয়ার পরে বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়েন।এর কিছুক্ষণ পরেই ঘিলাছড়ি ক্যাম্প থেকে একদল সেনাসদস্য এসে বাড়ি ঘেরাও করে এবং তার নাম ধরেই ডাকতে থাকে। কে বা কারা ডাকতেছে তা দেখতে তিনি বাইরে এলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে মালছড়ি থেকে মোটর বাইক চালক ছাদিকুল ইসলাম’কে হত্যার অভিযোগে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ঘিলাছড়ি ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে এক দফা শারীরিক নির্যাতনের পর নিয়ে যায় নান্যাচর সেনা জোনে। সেখানে আরেক দফা শারিরিক নির্যাতন করে তাকে ছাদিকুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাজিয়ে নান্যাচর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
উক্ত দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাজাহান তারা নিরুপায় উল্লেখ করে জানান, সেনাবাহিনীর নির্দেশনানুযায়ী মৃত ছাদিকুলের বড় ভাই হাদিকুল ইসলামের গত ১৪ এপ্রিল দায়েরকৃত ছাদিকুল ইসলাম হত্যা মামলায় আসামি সাজিয়ে পল্টু চাকমাকে গতকাল সোমবার (১৭এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাঙ্গামাটি জেলে রয়েছেন।
এদিকে ঘিলাছড়ি এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ মোটর সাইকেল চালিয়ে কোন রকমে পরিবার ভরণ-পোষণ করা পাহাড়ি (চাকমা) যুবক পল্টু চাকমাকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাদিকুল হত্যা মামলায় তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে।এটি সরকারের জুম্ম সমাজ ও জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের নীল নক্সাকৃত ষড়যন্ত্রেরই একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বর্তমানে এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে আতংক সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তারা।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল মালছড়ি এলাকার মোটর বাইক চালক ছাদিকুল ইসলাম রহস্যজনকভাবে নিখোজ হয়।এর একদিন পর তার বড় ভাই হাদিকুল ইসলাম মালছড়ি থানায় একটি জিডি করে, জিডি নং-(৪২৯) তাং ১০/০৪/২০১৭ ইং। কে বা কারা ছাদিকুল ইসলামকে হত্যা করে ঘিলাছড়ি এলাকায় রেখে দিয়ে গেলে গত ১৪ এপ্রিল সেনাবাহিনীরা ছাদিকুলের লাশ মাটি চাপা অবস্থায় খুঁজে পায়। সেদিনই তার বড় ভাই হাদিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নান্যাচর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখপূর্বক হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-(২)তাং-১৪/০৪/২০১৭ ইং।
উক্ত হত্যা মামলায় পল্টু চাকমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক করে শারিরিক নির্যাতনের পর নান্যাচর থানা পুলিশের সহযোগিতায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।