চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ
নান্যাচর কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাতিলের দাবি
চট্টগ্রাম : নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাঙামাটি জেলার নান্যাচর কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ নির্দেশ অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।
“পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি গণতান্ত্রিক, রাষ্ট্রবিরোধী নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গঠনমূলক চর্চা বন্ধের ষড়যন্ত্র চলবে না” এই শ্লোগানে আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর ২০১৭) বিকালে পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
বিকাল সাড়ে ৩টায় ডিসি হিল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পিসিপি’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, চবি শাখার সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ত্রিরত্ন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহ-সভাপতি উচিংশৈ চাক্ (শুভ) প্রমুখ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি চাকমা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি থুইক্যচিং মারমা।
সমাবেশে বক্তারা গত ১৯ নভেম্বর ২০১৭ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাসিমা খানমের স্বাক্ষরিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক নির্দেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, সারা দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার যে হ-য-ব-র-ল অবস্থা, শিক্ষাঙ্গনের যে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজী, ছাত্র রাজনীতির নামে খুন-অপহরণ, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতির সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত না করে, এসব বিষয়ে কোন সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে অধিকারহারা পাহাড়ি জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে তথা পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে ধ্বংসের পাঁয়তারা হিসেবে, সর্বোপরি পাবর্ত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংসের চক্রান্তের অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উঠে পড়ে লেগেছে। এর অংশ হিসেবে পিসিপি’র এক নবীন বরণ অনুষ্ঠানকে “রাষ্ট্রবিরোধী” আখ্যা দিয়ে নান্যাচর কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অগণতান্ত্রিক নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠান করার সকল গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন তথা ছাত্র সমাজের অধিকার রয়েছে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে অন্যান্য কলেজের ন্যায় নান্যাচর কলেজেও নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এটা রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মসূচি ছিল না। মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুক্তবুদ্ধি ও গঠনমূলক চর্চার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।
বক্তারা বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ব্যবস্থার এমনিতেই নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। তার উপর তিন পাবর্ত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে শিক্ষক নিয়োগের নামে নেতা-এমপিদের পছন্দের প্রার্থী এবং ১০-১৫ লক্ষ টাকার ঘুষের বিনিময়ে তথাকথিত শিক্ষিত মাথা মোটা সার্টিফিকেটধারীদেরকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। জাতিগত নির্যাতন ও নিপীড়নে তো রয়েছেই। তারা বলেন, গোটা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে বর্তমান যে পরিস্থিতি তা অত্যন্ত নাজুক এবং অগ্নিগর্ভ। এ অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ নির্দেশ পাবর্ত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল করবে।
বক্তারা অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ নির্দেশ বাতিল, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান। অন্যথায় আগামীতে ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।